December 13, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Wednesday, September 6th, 2023, 9:16 pm

‘ইন্ডিয়া’ বাদ দিয়ে নাম কি শুধুই ভারত?

অনলাইন ডেস্ক :

দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম শক্তিধর দেশ ভারত, যার ইংরেজি নাম ‘ইন্ডিয়া’। দেশটির সংবিধানে ইন্ডিয়া ও ভারত দুটি নামই উল্লেখ আছে। তবে, দেশটির ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকার ‘ইন্ডিয়া’ নামটি বাদ দিতে চাওয়ার গুঞ্জন ছিল আগে থেকেই। দলটির নেতারা চান, শুধু ভারতই হবে দেশটির নাম। তবে, জি-২০ সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী বিশ্বনেতাদের নৈশভোজের আমন্ত্রণপত্রে দেশটির নাম শুধু ভারত হিসেবে উল্লেখ করায় বিষয়টি নতুন করে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে এসেছে। খবর দ্য ইকোনোমিকস টাইমসের।

বুধবার (৬ সেপ্টেম্বর) সংবাদমাধ্যম টাইস নাওয়ের বরাতে প্রতিবেদনে বলা হয়, আগামী ১৮ থেকে ২২ সেপ্টেম্বর পার্লামেন্টের বিশেষ অধিবেশনে দেশের নাম পরিবর্তনের বিষয়ে একটি রেজুলেশন আনতে পারে নরেন্দ্র মোদির সরকার। ওই রেজুলেশনে দেশটির নাম আনুষ্ঠানিকভাবে শুধু ভারত করা হতে পারে। সংবাদমাধ্যম টাইস নাও জানায়, আসন্ন জি-২০ সম্মেলনে অংশ নেওয়া বিশ্ব নেতাদের নৈশভোজে অংশ নেওয়ার জন্য আমন্ত্রণপত্র পাঠিয়েছে আয়োজক দেশটির কর্মকর্তারা। ওই নিমন্ত্রণপত্রে ‘প্রেসিডেন্ট অব ভারতের’ পক্ষে নৈশভোজের আয়োজন করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। এ ধরনের নিমন্ত্রণপত্রে আগে ‘প্রেসিডেন্ট অব ইন্ডিয়া’ লেখা হতো। এ বিষয়ে কংগ্রেস নেতা জয়রাম রামেশ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) লেখেন, “আনুষ্ঠানিকভাবে ইন্ডিয়ার নাম পরিবর্তনের খবরটি সত্যি হচ্ছে।

রাষ্ট্রপতি ভবন থেকে আগামী শনিবার নৈশভোজে আমন্ত্রিত অতিথিদের নিমন্ত্রণপত্র পাঠানো হয়, যেখানে প্রেসিডেন্ট অব ইন্ডিয়ার পরিবর্তে প্রেসিডেন্ট অব ভারত লেখা হয়েছে। সংবিধানের এক নম্বর আর্টিকেল অনুযায়ী, ‘ইন্ডিয়া, যা হলো ভারত, রাজ্যগুলোর একটি ইউনিয়ন।’ এর মাধ্যমে ক্ষমতাসীনরা ইউনিয়ন অব স্টেটসকে অসম্মানিত করছে।” এদিকে, দেশটির আনুষ্ঠানিক নাম পরিবর্তনের পক্ষে সরব হচ্ছেন ক্ষমতাসীন বিজেপির নেতারা। আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমান্ত বিশ্ব শর্মা মঙ্গলবার দেশের নাম শুধু ‘ভারত’ করার পক্ষে যুক্ত তুলে ধরেন।

এক্সে এক পোস্টে তিনি লেখেন, ‘রিপাবলিক অব ভারত, আমাদের লোকেরা সাহসিকতার সঙ্গে অমৃতকালের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে জেনে আমি খুশি ও গর্বিত।’ কেন্দ্রীয় সরকারের মন্ত্রী রাজীবচন্দ্র শেখর বলেন, ‘আমাদের দেশের নাম ভারত, এ নিয়ে কোনো দ্বিধা-দ্বন্দ্ব নেই। কংগ্রেস সবকিছুতেই সমস্যা দেখে।’ ভারতের প্রধান হিন্দুত্ববাদী সংগঠন আরএসএসের প্রধান রাজীব শেখর আরও বলেন, ‘যুগ যুগ থেকেই এই দেশের নাম ভারত। আমাদের সে দিকেই যেতে হবে। ভাষা যাই হোক না কেন, নাম একই থাকে।’ বিষয়টি নিয়ে সম্প্রতি ভারতের পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষে কথা বলেছিলেন বিজেপির আইনপ্রণেতা নারেশ বানসাল। অধিবেশনে নাম পরিবর্তনের প্রস্তাবটি তুলে ধরে তিনি বলেছিলেন, ‘ইন্ডিয়া নামটি ঔপনেবেশিক দাসত্বের প্রতীক। সংবিধান থেকে নামটি মুছে ফেলা উচিত।’

রাজ্যসভায় এই আইনপ্রণেতার বক্তব্যের উদ্ধৃতি দিয়ে দেশটির সংবাদ সংস্থা এএনআই জানায়, ‘ব্রিটিশরা ভারতের নাম পরিবর্তন করে ইন্ডিয়া রেখেছিল। সংবিধানের এক নম্বর আর্টিকেল অনুযায়ী, ভারতই হলো ইন্ডিয়া। শতাধিক বছর থেকে আমাদের দেশকে মানুষ ভারত নামে জানে। এটি এই দেশের প্রাচীনতম নাম, যা প্রাচীন সংস্কৃত গ্রন্থে পাওয়া যায়। ইন্ডিয়া নামটি দিয়েছিল ঔপনিবেশিক ব্রিটিশরা। এটি দাসত্বের একটি উদাহরণ। সংবিধান থেকে ইন্ডিয়া নামটি মুছে ফেলা উচিত।’

সম্প্রতি ভারতের বিরোধী দলগুলোর নতুন জোট ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টাল ইনক্লুসিভ অ্যালায়েন্স (ইন্ডিয়া) আত্মপ্রকাশ করেছে। নতুন বিরোধী জোটকে দুর্বল করতে ক্ষমতাসীনরা তড়িঘড়ি করে এ উদ্যোগ নিচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিজেপি সরকারের দেশের নাম পরিবর্তনের সম্ভাব্য প্রস্তাবনার বিরোধিতা করছে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী ও আম আদমি পার্টির প্রধান অরিবিন্দ কেজরিওয়াল। বিজেপির সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘যদি ইন্ডিয়া জোট নিজেদের নাম পরিবর্তন করে, তাহলে কি বিজেপি ভারতের নাম আবারও পরিবর্তন করবে? কয়েকটি রাজনৈতিক দলের জোটের কারণে কি দেশের নাম পরিবর্তন হবে? এটি ১৪০ কোটি মানুষের দেশ, কোনো রাজনৈতিক দলের না। বিজেপির ভয় ইন্ডিয়া জোট নামের কারণে তাদের কিছু ভোট কমে যাবে।’