এপি, ইসলামাবাদ :
পাকিস্তানের ইসলামাবাদের একটি হাইকোর্ট শুক্রবার সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে দুর্নীতির মামলায় গ্রেপ্তার থেকে দুই সপ্তাহের জন্য অব্যাহতি দিয়ে জামিন দিয়েছেন।
খানের আইনজীবী বাবর আওয়ান বলেছেন, সুপ্রিম কোর্ট রায় দেওয়ার একদিন পর শুক্রবার আদালত এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
তিনি বলেন, খান এখন ‘মুক্ত মানুষ’ এবং আদালতের এ রায় ন্যায়সঙ্গত।
খানকে আদালতে উপস্থিত করার পর তাকে ফের পুলিশ হেফাজতে ফিরিয়ে নেওয়া হবে, নাকি তাকে জামিন দেওয়া হবে তা নিয়ে জল্পনা শুরু হয়।
আদালতের এই রায়ের পর কয়েকদিন ধরে সরকার এবং খান সমর্থকদের মধ্যে চলা সহিংস সংঘর্ষ প্রশমিত হয়।
৭০ বছর বয়সী খান দেশটির একজন জনপ্রিয় বিরোধী নেতা, গত মঙ্গলবার একই আদালতে তিনি হাজির হন; যেখান থেকে তাকে টেনে নিয়ে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।
তাকে গ্রেপ্তারের ফলে দেশব্যাপী বিক্ষোভ শুরু হয় এবং তার সমর্থকরা সামরিক স্থাপনায় হামলা চালায়, যানবাহন ও অ্যাম্বুলেন্স পুড়িয়ে দেয় এবং দেশের বিভিন্ন স্থানের ডিপার্টমেন্টাল স্টোর লুট করে। এর প্রতিক্রিয়ায় সরকার প্রায় তিন হাজার মানুষকে গ্রেপ্তার করে।
শুক্রবারের আদালতের অধিবেশন জটিল আইনি কৌশলের একটি সিরিজের অংশ।
এর আগে বৃহস্পতিবার পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট ঘোষণা করেন, খানের গ্রেপ্তার বেআইনি ছিল, কিন্তু তারপরেও ইসলামাবাদ হাইকোর্ট একটি নিম্ন আদালতকে গ্রেপ্তার বহাল রাখার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করতে বলেছিলেন।
সুপ্রিম কোর্ট বলেছেন, শুক্রবার ইসলামাবাদের আদালত যা রায় দেবে তা তারা মেনে নেবেন।
সরকার বলেছে, ইসলামাবাদ হাইকোর্ট তার আগের আদেশ বহাল রাখলে তারা ফের দ্রুত খানকে গ্রেপ্তার করবে।
শুক্রবার ইসলামাবাদ আদালতের একটি প্রাথমিক সংক্ষিপ্ত অধিবেশনে, বিচারকরা দুর্নীতির অভিযোগে গ্রেপ্তার থেকে সুরক্ষা চেয়ে খানের একটি অনুরোধের শুনানি করেন। আদালত কক্ষে খানের সমর্থকরা স্লোগান দেওয়ায় বিচারক অধিবেশন দুই ঘণ্টার জন্য স্থগিত করেন।
এর আগে বৃহস্পতিবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, খানকে দুর্নীতির মামলায় জামিন দেওয়া হলেও অন্যান্য অভিযোগে তাকে গ্রেপ্তার করতে পারেন তিনি।
সরকারের দাবি, খানের মুক্তি জনতার সহিংসতাকে উৎসাহিত করবে।
শুক্রবার আদালতে খানের প্রধান আইনজীবী বাবর আওয়ান সাংবাদিকদের বলেন, সরকার প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীকে গ্রেপ্তার করতে অনড় বলে মনে হচ্ছে।
মঙ্গলবার খানের গ্রেপ্তার একটি চমকপ্রদ ও বিতর্কিত পদক্ষেপ ছিল, কেননা ন্যাশনাল অ্যাকাউন্টিবিলিটি ব্যুরোর এজেন্টরা ইসলামাবাদ হাইকোর্ট প্রাঙ্গণ থেকে খানকে টেনে নিয়ে গ্রেপ্তার করে, খান তার বিরুদ্ধে আনা অন্যান্য অভিযোগে করা মামলায় হাজিরা দিতে গিয়েছিলেন।
বৃহস্পতিবার দেশটির সুপ্রিম কোর্ট রায় দিয়েছেন, খানের গ্রেপ্তার ‘অবৈধ ও বেআইনি’। কারণ তাকে আদালত প্রাঙ্গণ থেকে গ্রেপ্তার করা হয়, যা খানের ন্যায়বিচারের অধিকার লঙ্ঘন করেছে।
খানের গ্রেপ্তারের পর যে সহিংসতা শুরু হয়েছিল তাতে কমপক্ষে ১০ খান সমর্থক নিহত হয়েছিল। কয়েক ডজন বিক্ষোভকারী এবং ২০০ জনেরও বেশি পুলিশ কর্মকর্তা আহত হয়েছেন। বিক্ষোভকারীরা ট্রাক, গাড়ি ও পুলিশের গাড়িতে আগুন দেয় এবং মহাসড়ক অবরোধ করে।
খানের ডেপুটিসহ খানের পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) পার্টির প্রায় তিন হাজার সমর্থককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
খানকে ঘিরে বিতর্ক যে তিনি তীব্র আনুগত্য এবং ক্ষিপ্ত বিরোধিতা উভয়কেই অনুপ্রাণিত করেন। তার গ্রেপ্তার এমন একটি দেশে তুমুল সংঘর্ষ শুরুর হুমকি হিসেবে দেখা দিয়েছে, যে দেশ একাধিক সামরিক দখল এবং সহিংসতা দেখেছে।
২০০৭ সালে একটি নির্বাচনী সমাবেশে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টোকে হত্যার পর এই ধরনের অস্থিতিশীলতা দেখা দিয়েছিল।
সেসময় তার সমর্থকরা তার হত্যাকাণ্ডে বিক্ষুব্ধ হয়ে সারা পাকিস্তানে কয়েকদিন ধরে তাণ্ডব চালিয়েছিল।
খান একজন প্রাক্তন ক্রিকেট তারকা থেকে ইসলামপন্থী রাজনীতিবিদে পরিণত হয়েছেন। গত বছর সংসদে অনাস্থা ভোটের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে তিনি অপসারিত হন এবং এখন বিরোধী দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
তিনি ১০০টিরও বেশি মামলার মুখোমুখি হয়েছেন, যার মধ্যে বেশিরভাগ অভিযোগ এমন যে তিনি সহিংসতা উস্কে দিয়েছেন এবং পুলিশ ও সরকারি কর্মকর্তাদের হুমকি দিয়েছেন।
তিনি অন্তত তিনটি দুর্নীতি মামলার মুখোমুখি হয়েছেন। যার মধ্যে একটি হলো ন্যাশনাল অ্যাকাউন্টিবিলিটি ব্যুরোর অভিযোগ যে তিনি একটি রিয়েল এস্টেট টাইকুনকে সুবিধা দেওয়ার বিনিময়ে মিলিয়ন ডলার মূল্যের সম্পত্তি গ্রহণ করেছিলেন।
গ্রেপ্তারের পর তার অনুসারীদের সহিংসতায় উসকানি দেওয়ার অভিযোগে বৃহস্পতিবার তার বিরুদ্ধে নতুন করে সন্ত্রাসবাদের অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টের মুক্তির আদেশের পর, খান ইসলামাবাদের একটি সরকারি গেস্ট হাউসে রাত কাটিয়েছেন, যেখানে তিনি পরিবারের সদস্য এবং বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করেছেন।
পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভিও তার সঙ্গে বৈঠক করেছেন। খান এবং প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের সরকারের মধ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা প্রশমিত করার চেষ্টা করছেন প্রেসিডেন্ট আলভি।
সর্বশেষ অগ্রগতি নিয়ে আলোচনার জন্য শুক্রবার শরিফ তার মন্ত্রিসভার বিশেষ বৈঠক ডেকেছেন।
তার সরকারের সদস্যরা সুপ্রিম কোর্টের রায়ের নিন্দা করেছেন, প্রধান বিচারপতিকে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তুলেছেন এবং বলেছেন যে খানের মুক্তি সহিংসতাকে উৎসাহিত করেছে।
আরও পড়ুন
আতঙ্ক নয়, রিভাইরাস দিয়ে ক্যান্সারের ওষুধ তৈরির চেষ্টা চলছে
পূর্বাচলে ৬০ কাঠার প্লট : দুদকের মামলায় আসামি হাসিনা ও তার পরিবার
লস অ্যাঞ্জেলেস ঘরের বাইরে কাজে গেলে এন–৯৫ মাস্ক পরার পরামর্শ অনীশ মহাজনের