December 6, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Monday, September 11th, 2023, 8:24 pm

‘এই গ্রামের বাসিন্দারা হয় মৃত, না হয় নিখোঁজ’

অনলাইন ডেস্ক :

মরক্কোয় গত শুক্রবারের শক্তিশালী ভূমিকম্পে এ পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ১২২ জনে। আহত হয়েছেন প্রায় আড়াই হাজার মানুষ। ৬ দশমিক ৮ মাত্রার ওই ভূমিকম্পে রীতিমতো ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে উত্তর আফ্রিকান দেশটির বহু গ্রাম। তেমনই একটির নাম তাফেঘাঘতে। অ্যাটলাস পর্বতমালা সংলগ্ন গ্রামটি পরিদর্শনে গেলে বিবিসি টিমের সঙ্গে প্রথম যে বাসিন্দার দেখা হয়, তিনি বলেন, এই গ্রামের মানুষজন হয় হাসপাতালে, না হয় মৃত। ধ্বংসস্তূপ পার করে ওপরের দিকে উঠতে উঠতেই বোঝা যাচ্ছিল, কেন গ্রামটির কেউ নিজেদের রক্ষা করতে পারেনি। ইট-পাথরের তৈরি গ্রামের পুরোনো ধাঁচের বাড়িগুলো কোনোভাবেই এই মাত্রার ভূমিকম্প সামাল দেওয়ার মতো ছিল না।

গ্রামের ২০০ জন বাসিন্দার মধ্যে ৯০ জনের মৃত্যুর খবর সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া গেছে। আরও অনেকেই এখনো নিখোঁজ। ধ্বংসস্তূপের মধ্যে দাঁড়িয়ে হাসান নামে এক বাসিন্দা বলেন, তারা (নিখোঁজরা) সরে যাওয়ার সুযোগ পায়নি। তাদের হাতে নিজেদের বাঁচানোর মতো সময়ও ছিল না। হাসান জানান, তার চাচা এখনো ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে রয়েছেন। তাকে সেখান থেকে বের করার কোনো সম্ভাবনাও নেই। গ্রামে কারও কাছে এই মাত্রার ধ্বংসস্তূপ খোড়ার যন্ত্রপাতি নেই। আর ঘটনার তিন দিন পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত বাইরে থেকে বিশেষজ্ঞরাও এসে পৌঁছাননি। হাসান বলেন, আল্লাহ আমাদের এই পরিস্থিতির মুখোমুখি করেছেন। আমরা সবকিছুর জন্য আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জানাই। কিন্তু এখন আমাদের সরকারের সহায়তা দরকার। তারা মানুষকে সাহায্য করার ক্ষেত্রে অনেক দেরি করে ফেলেছে।

তার মতে, মরক্কো কর্তৃপক্ষের উচিত সব ধরনের আন্তর্জাতিক সহায়তা গ্রহণ করা। কিন্তু নিজেদের অহংকারের কারণে সরকার হয়তো সেই সহায়তা নেবে না বলে মনে করেন এ যুবক। গ্রামের আরেক প্রান্তে গিয়ে দেখা যায়, বেশ কিছু মানুষ এক ব্যক্তিকে সমবেদনা জানাচ্ছেন। জানা যায়, ওই ব্যক্তির নাম আবদু রহমান। ভূমিকম্পে তার তিন ছেলে ও স্ত্রী প্রাণ হারিয়েছেন। বালি-পাথরের একটি স্তূপের দিকে আঙুল তুলে তিনি বলেন, আমাদের বাড়ি ছিল ওখানে। ওই যে সাদা কম্বল ও কিছু আসবাব এখনো দেখা যাচ্ছে। বাকি সব মাটির সাথে মিশে গেছে।

ভূমিকম্প শুরু হওয়ার পর আবদু রহমান তিন কিলোমিটার দৌড়ে বাড়ির দিকে আসেন। ভূমিকম্পের সময় তিনি যে পেট্রোল পাম্পে কাজ করেন, সেখানে দায়িত্বরত ছিলেন। বাড়ির কাছে এসে চিৎকার করে ছেলেদের নাম ধরে ডাকাডাকি করেন আবদু রহমান। তার মতো আরও কয়েকজনও তখন নিজের পরিবারের সদস্যদের খুঁজছিলেন। রহমান বলেন, গতকাল আমরা তাদের কবর দিয়েছি। আমরা যখন তাদের মরদেহ খুঁজে পাই, তখন তারা সবাই একসাথে গুটিশুটি মেরে ছিল। তিন ছেলেই ঘুমাচ্ছিল। ঘুমের মধ্যেই তারা মারা যায়। আরেকটু সামনে, গ্রামের সঙ্গে লাগোয়া পাহাড়ি রাস্তার মোড়ে একটি বড় তাঁবুতে বেশ কয়েকটি পরিবার একসঙ্গে অপেক্ষা করছিল। সবদিক থেকেই শোনা যাচ্ছিল অবিরাম কান্নার আওয়াজ।

কিছুক্ষণ আগেই ১০ বছর বয়সী শিশু খালিফার মরদেহ টেনে বের করা হয়েছে পাথরের স্তূপের নিচ থেকে। সেই মরদেহকে ঘিরেই চলছিল আহাজারি। মরক্কোর অ্যাটলাস পর্বতমালা অঞ্চলের একের পর এক গ্রামে এখন ঠিক এই একই চিত্রই দেখা যাচ্ছে। ঐতিহ্যবাহী এই সম্প্রদায়গুলো সাধারণত আধুনিক পৃথিবী থেকে কিছুটা বিচ্ছিন্নই থাকতে পছন্দ করে। কিন্তু এখন অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি বাইরের সাহায্য প্রয়োজন তাদের।

সবশেষ পরিস্থিতি কী?

অ্যাটলাস পর্বতমালার মতো মরক্কোর আরও অনেক অঞ্চলেই জরুরি সেবা পৌঁছাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে কর্তৃপক্ষকে। বিভিন্ন এলাকায় গ্রামবাসী হাত দিয়ে বা বেলচা, শাবল দিয়ে ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে আটকেপড়া মানুষদের উদ্ধার করছেন। আবার কিছুক্ষণ পর ওই বেলচা-শাবল দিয়েই মরদেহের জন্য কবরও খুঁড়তে হচ্ছে তাদের। এমন একটি গ্রামের এক বাসিন্দা বলেন, মানুষের কাছে আর কিছুই অবশিষ্ট নেই। গ্রামে কোনো খাবার নেই, শিশুরা পানির পিপাসায় কষ্ট পাচ্ছে।
সূত্র: বিবিসি বাংলা