নিজস্ব প্রতিবেদক:
কাঁচামাল সঙ্কটে রি-রোলিং মিলগুলোতে রডের উৎপাদন ব্যাপকভাবে কমে গেছে। ফলে দিন দিন বেড়েই চলেছে রডের দাম। ফলে নির্মাণ শিল্পে তার মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। বিদ্যমান বিশ্ব পরিস্থিতিতে দেশে স্ক্র্যাপ জাহাজ আমদানি আশঙ্কাজন হারে কমে গেছে। তাতে থমকে গেছে বেসরকারি নির্মাণ শিল্পের কর্মকান্ড। ফলে গুটিয়ে যাচ্ছে চট্টগ্রামের ফৌজদারহাট থেকে সীতাকুন্ড উপকূল জুড়ে গড়ে ওঠা স্ক্র্যাপ জাহাজ শিল্প। অথচ স্ক্র্যাপ জাহাজই হচ্ছে দেশে রড তৈরির প্রধান কাঁচামাল যোগানের প্রধান উৎস। পুরনো জাহাজের খন্ডিত লোহা থেকেই দেশের রি-রোলিং মিলগুলোতে বিভিন্ন গ্রেডের রড উৎপাদন হয়। বর্তমানে লোহার সঙ্কটে রি-রোলিং মিলে উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় ব্যাহত হচ্ছে রডের উৎপাদন। ফলে বর্তমানে বাজারে রডের দাম টনপ্রতি ৯৫ হাজার টাকা ছাড়িয়ে গেছে। পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে রডের দাম আরো বাড়ার শঙ্কা রয়েছে। বাংলাদেশ শিপ ব্রেকিং অ্যান্ড রিসাইক্লার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএসবিআরএ) এবং রি-রোলিং মিল সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বর্তমানে দেশে বড় কোনো স্ক্র্যাপ জাহাজ আমদানি হচ্ছে না। বিক্ষিপ্তভাবে ছোটখাট কিছু জাহাজ আসলেও তা চাহিদার তুলনায় খুবই নগণ্য। ফলে আকাশচুম্বী হয়ে পড়েছে রডের দাম। আর নির্মাণ শিল্পে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। বিদ্যমান পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে দেশে জাহাজ ব্রেকিং কার্যক্রম শূন্যের কোঠায় চলে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। সূত্র জানায়, বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংক পুরনো জাহাজ আমদানিতে কড়াকড়ি আরোপ করেছে। ৩০ লাখ ডলারের বেশি পুরনো জাহাজ আমদানিতে রয়েছে বিভিন্ন শর্ত। ফলে ইতোপূর্বে ৬০টি শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ড চালু থাকলেও বর্তমানে তা ১০টিতে নেমে এসেছে। একের পর এক বন্ধ হয়ে যাচ্ছে শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ড। এ শিল্পের সঙ্গে সরাসরি ৬০ হাজার শ্রমিক-কর্মচারী এবং পরোক্ষভাবে প্রায় দেড় লাখ মানুষ জড়িত। বর্তমানে শ্রমিক কর্মচারীদের কর্মকা- একেবারেই থমকে গেছে। বর্তমানে বিদেশ থেকে স্ক্র্যাপ জাহাজ আমদানিতে মূল্যও বেড়ে গেছে। আগে যেখানে জাহাজের টনপ্রতি মূল্য ছিল ৫০০ ডলার, বর্তমানে তা বেড়ে সাড়ে ৬শ’ ডলারে উন্নীত হয়েছে। তাছাড়া আমদানির জাহাজও মিলছে কম। যা পাওয়া যাচ্ছে তার অধিকাংশই প্রতিবেশ দেশ ভারতে রপ্তানি হচ্ছে। দেশের জাহাজ ভাঙা শিল্প থেকে ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ কাঁচামাল হিসেবে স্ক্র্যাপ লোহার যোগান আসতো। এখন ব্যাপকভাবে হ্রাস পেয়েছে ওই যোগান প্রক্রিয়া। মূলত ২০২২ সাল থেকেই কমতে থাকে দেশে স্ক্র্যাপ জাহাজ আমদানির পরিমাণ। বর্তমানে তা চরম আকার ধারণ করেছে। এদিকে এ প্রসঙ্গে বিএসবিআরএ’র সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট কামাল উদ্দিন আহমেদ জানান, স্ক্র্যাপ জাহাজ ব্যবসার সঙ্গে জড়িতরা ডলারের সাশ্রয় এবং সুদের কম হারের জন্য অধিকাংশই ইউপাস এলসি ডেফার্ট পেমেন্টে এলসি খোলেন। তখন ডলারের দাম ৮০ থেকে ৯০ টাকার মধ্যে ছিল। এলসির অর্থ পরিশোধের পর ডলারের দাম ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে। ফলে প্রতি ডলারে লোকসান গুণতে হয়েছে। ফলে বাধ্য হয়ে অনেকেই ইয়ার্ড বন্ধ করে দিয়েছে। আবার অনেকে ব্যাংক ঋণের কারণে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংক পুরনো জাহাজ আমদানির ক্ষেত্রে ৩০ লাখ ডলারের মধ্যে এলসি খোলার নির্দেশনা প্রদান করেছে। কিন্তু সেক্ষেত্রে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো ডলার সরবরাহ করতে পারছে না। ফলে কোনো কোনো আমদানিকারক বর্তমানে সর্বোচ্চ ২ হাজার টনের জাহাজ আমদানি করছে। তাতে বড় জাহাজের তুলনায় ওসব জাহাজের কাঁচামাল চাহিদা মেটাতে ব্যর্থ হচ্ছে।
আরও পড়ুন
পূর্বাচলে ৬০ কাঠার প্লট : দুদকের মামলায় আসামি হাসিনা ও তার পরিবার
১১ দিনে এলো ৮৯৮৬ কোটি টাকার প্রবাসী আয়
রেমিট্যান্স আহরণে ‘গোল্ড অ্যাওয়ার্ড’ পেলো ইসলামী ব্যাংক