February 18, 2025

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Monday, February 3rd, 2025, 11:26 am

তিন দেশের সঙ্গে বাণিজ্যযুদ্ধে ‘যন্ত্রণা’ পোহাতে পারেন মার্কিনরাও: ট্রাম্প

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পফাইল ছবি: রয়টার্স

অনলাইন ডেস্ক:
কানাডা, মেক্সিকো ও চীনের পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্র শুল্ক আরোপ করায় ‘স্বল্প মেয়াদে’ মার্কিন নাগরিকেরাও যন্ত্রণার শিকার হতে পারেন বলে গতকাল রোববার মন্তব্য করেছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এর আগের দিন শনিবার দেশ তিনটির ওপর শুল্ক আরোপ করা নিয়ে পৃথক তিন নির্বাহী আদেশে সই করেন তিনি।

এই শুল্ক আরোপ করায় বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে মন্দা ও মূল্যস্ফীতি বেড়ে যেতে পারে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদেরা। তাঁরা বলেছেন, ট্রাম্প প্রশাসনের এ পদক্ষেপে যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরেও পণ্যমূল্য বেড়ে যেতে পারে। এমন উদ্বেগের প্রভাব এরই মধ্যে বিশ্ববাজারে পড়তে শুরু করেছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট গতকাল ওই মন্তব্য করলেন। ট্রাম্প শুল্ক আরোপ করায় সংশ্লিষ্ট দেশগুলোও যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে পাল্টা ব্যবস্থা গ্রহণের ঘোষণা দিয়েছে। এ অবস্থায় দেশগুলোর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যযুদ্ধ শুরুর আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

এ বাণিজ্যযুদ্ধের প্রভাবে মার্কিনরাও ভুগতে পারেন, এমন সতর্কবার্তা দিলেও ট্রাম্প অবশ্য বলেছেন, আজ সোমবার কানাডা ও মেক্সিকোর নেতাদের সঙ্গে কথা বলবেন তিনি। ফ্লোরিডায় ব্যক্তিগত অবকাশযাপন কেন্দ্র মার-এ-লাগো থেকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প গতকাল ওয়াশিংটনে ফেরেন। এ সময় সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘আমি নাটকীয় কিছু আশা করি না। তারা আমাদের কাছে বড় অঙ্কের ঋণী, আর আমি নিশ্চিত যে তারা এ মূল্য পরিশোধ করতে যাচ্ছে।’

ট্রাম্প আরও বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গেও শুল্ক আরোপের ঘটনা ‘অবশ্যই ঘটবে’। তবে কবে থেকে তা করা হবে, সে বিষয়ে তিনি কিছু বলেননি। যুক্তরাষ্ট্রে কানাডা ও মেক্সিকোর পণ্য আমদানিতে ২৫ শতাংশ করে ও চীনের পণ্যে বর্তমান হারের অতিরিক্ত ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা সম্পর্কিত তিন নির্বাহী আদেশ গত শনিবার জারি করেছেন ট্রাম্প। এটি আগামীকাল মঙ্গলবার থেকে কার্যকর হবে।

অবশ্য ট্রাম্প আগেই বলেছিলেন, তিনি প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নিয়েই এ তিন দেশের ওপর নতুন শুল্ক আরোপ করবেন। যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধ অভিবাসন ও মাদক পাচার ঠেকাতে এমন পদক্ষেপ নেবেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ বাণিজ্য অংশীদারদের অন্যতম চীন, কানাডা ও মেক্সিকো। গত বছর যুক্তরাষ্ট্রের আমদানি পণ্যের ৪০ শতাংশ গেছে এ তিন দেশ থেকে।

জ্বালানি তেল পরিশোধক প্রতিষ্ঠান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্য-পশ্চিমাঞ্চলীয় অঙ্গরাজ্যগুলোর কর্তৃপক্ষের উদ্বেগে সাড়া দিয়ে ট্রাম্প কানাডার তেলজাত পণ্যে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন। যদিও অন্যান্য পণ্যে এ হার ২৫ শতাংশ। তবে মেক্সিকোর জ্বালানি পণ্যে পূর্ণ ২৫ শতাংশ শুল্কই বহাল থাকবে। মার্কিন পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্র ২০২৩ সালে কানাডা থেকে প্রায় ১০০ বিলিয়ন বা ১০ হাজার কোটি ডলারের অপরিশোধিত তেল আমদানি করে। এটি ছিল কানাডা থেকে দেশটির আমদানি করা পণ্যের প্রায় এক-চতুর্থাংশ।

ট্রাম্পের শুল্কারোপ করা নিয়ে হোয়াইট হাউসের নথিপত্রে বলা হয়েছে, ‘সংকট না কমা পর্যন্ত’ এটি বহাল থাকবে।
যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ফরেন ট্রেড কাউন্সিলের (এনএফটিসি) সভাপতি জ্যাক কোলভিন বলেছেন, ট্রাম্পের পদক্ষেপে অ্যাভোকাডো থেকে শুরু করে অটোমোবাইল—সবকিছুর দাম বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। উত্তেজনা এড়াতে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও মেক্সিকোর প্রতি দ্রুত একটা সমাধানের পথ খুঁজে বের করার আহ্বান জানান তিনি।

ট্রাম্প গতকাল যে বক্তব্য দিলেন, তাতে এমন উদ্বেগ ও ঝুঁকিই একরকম স্বীকার করে নিলেন। তিনি বলেন, ‘স্বল্প মেয়াদে কিছুটা যন্ত্রণা আমাদের পোহাতে হতে পারে এবং লোকজন সেটি বোঝেন। তবে দীর্ঘ মেয়াদে কার্যত বিশ্বের সব দেশের কাছ থেকে যুক্তরাষ্ট্র প্রতারিত হয়েছে।’ আইএনজির বিশ্লেষকেরা লিখেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সব আমদানি পণ্যের প্রায় অর্ধেকই ট্রাম্পের শুল্কারোপের আওতায় পড়বে। এ নিয়ে সংকট কাটাতে দেশটিকে তার নিজস্ব পণ্যের উৎপাদন দ্বিগুণের বেশি করতে হবে। স্বল্প মেয়াদে এটা বাস্তবে দেখা যাওয়ার সম্ভাবনা নেই। রয়টার্স ওয়াশিংটন