ফেনী প্রতিনিধি.
দেশ, জাতীর কল্যাণ ও অগ্রগতিতে নারী শিক্ষার কোন বিকল্প নেই। আগামীর নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে ও বাঙালী জাতীর উন্নয়নে শিক্ষিত জাতী গঠনে নারী শিক্ষার্থীদের ভূমিকা অপরিহার্য।
নারীদের অংশগ্রহণ ছাড়া কোন দেশ ও জাতীর কল্যাণ ও অগ্রগতি সম্ভব নই বলে মন্তব্য করেছেন বিশিষ্ট নারী উদ্যোক্তা দাগনভূঞা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি নাছরিন ফাতেমা আউয়াল।
গতকাল বুধবার দাগনভূঞা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে বার্ষিক ক্রিড়া ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগীতার পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, যে জাতি যত বেশি শিক্ষিত, সে জাতি তত বেশি উন্নত- একথা আমরা সবাই জানি। এছাড়া উন্নয়নের পূর্বশর্ত হচ্ছে শিক্ষা। জাতির কল্যাণ ও অগ্রগতিতে নারী শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই। জাতির উন্নয়নের ক্ষেত্রে নারী শিক্ষা কতটা গুরুত্বপূর্ণ সেটা নেপোলিয়নের উক্তির মাধ্যমে স্পষ্ট হয়ে যায়- ‘আমাকে একটি শিক্ষিত মা দাও, আমি শিক্ষিত জাতি উপহার দেব।’
নেপোলিয়ানের এই উক্তির মর্মার্থ উপলব্ধি করতে পেরেছে বলেই বর্তমানে নারী শিক্ষার হার বেড়েছে। কারণ একজন মেয়েকে শিক্ষা দেওয়ার অর্থ হচ্ছে গোটা পরিবারকে শিক্ষিত করে তোলা। বৃহদার্থে সমাজ ও দেশকে উন্নত করা। তাই জাতির কল্যাণ অগ্রগতিতে নারী শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই । তাছাড়া নারীরা পেছনে পড়ে থাকলে কোনো দেশই উন্নতি করতে পারবে না। নারী শিক্ষা ও উন্নয়ন পরস্পর ঘনিষ্ঠ সম্পর্কযুক্ত। কেননা প্রকৃত উন্নয়ন বাস্তবায়ন করতে হলে সমাজের সার্বিক কার্যক্রমে দেশের নারী জনশক্তির অংশগ্রহণ একান্ত প্রয়োজন।
এসময় তিনি বংলা নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়া সাখাওয়াতের প্রসঙ্গ তুলে ধরে বলেন,নারীদের শিক্ষা ও সামজিকভাবে এগিয়ে নিতে ব্রিটিশ ভারতবর্ষে মুসলিম ধর্মান্ধ ও কুসংস্কারাচ্ছন্ন পরিবেশে বেড়ে ওঠার পরও নারী শিক্ষার যুক্তি
দেখিয়েছেন রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন। তার লেখা পড়ে নারীরা আজও আলোড়িত হন।
আন্দোলিত হন নতুন প্রাণে, নতুনভাবে বেঁচে থাকার জন্য। নারীদের নিজের পায়ে দাঁড়ানোর জন্য, পুরুষতান্ত্রিকতার শেকল ভাঙার মানসে রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন অবিস্মরণীয় এক নাম। যেসময় বাঙলা মুসলমান সমাজে মেয়েদের আধুনিক
শিক্ষার সুযোগ ছিল না, সেসময় বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন একেবারে নিজের চেষ্টায় গড়ে ওঠা একজন উচ্চশিক্ষিত আদর্শবাদী মানুষ।
নারীকে শিক্ষার মাধ্যমে বিকশিত করে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করার মাধ্যমে নারী-পুরুষ সাম্যের এক সমাজ প্রতিষ্ঠাই ছিল বেগম রোকেয়ার লক্ষ্য। স্বামীর সামাজিক ও আর্থিক অবস্থান এবং নারীর অর্থনৈতিক মুক্তি সম্পর্কে মুক্ত দৃষ্টিভঙ্গি রোকেয়ার চিন্তা ও কাজের সহায় হয়েছিল।নারীকে শিক্ষার মাধ্যমে বিকশিত করে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করার মাধ্যমে নারী-পুরুষ সাম্যের এক সমাজ প্রতিষ্ঠাই ছিল বেগম রোকেয়ার লক্ষ্য। স্বামীর সামাজিক ও আর্থিক অবস্থান এবং নারীর অর্থনৈতিক মুক্তি সম্পর্কে মুক্ত দৃষ্টিভঙ্গি রোকেয়ার চিন্তা ও কাজের সহায় হয়েছিল। স্বল্পস্থায়ী সংসার জীবনে তিনি পড়াশোনা ও সামাজিক মেলামেশার সুযোগ পেয়েছেন। তিনি দেখেছেন, সমাজে নারীরা কতটা নিগৃহীত।
স্বামীর সহযোগিতায় রোকেয়া পাশ্চাত্য জীবনধারা, গণতন্ত্রের গতি-প্রকৃতি ও নারী সত্তার বিকাশের নানা স্তর ও পথ নির্দেশনা পান। স্বামীর জীবদ্দশাতেই প্রকাশিত হয় তাঁর প্রথম বই, যা ছিল ইংরেজিতে লেখা। সৈয়দ সাখাওয়াত হোসেন
তাঁকে বাংলা সাহিত্য চর্চায় উদ্বুদ্ধ করেন।
তিনি উপস্থিত শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, তোমরা যারা আজ এ বিদ্যালয় মাঠে উপস্থিত আছো আগামীর নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে তোমাদের অগ্রণি ভূমিকা রাখতে হবে। আজকে এ অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের মাঝে রয়েছে আগামী দিনের
ইউএনও, ডিসি, এসপি, ডাক্তার, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর, শিল্প উদ্যোক্তা।তোমরাই গড়বে আগামীর পৃথিবী। তোমাদের মেধায় পরিচালিত হবে এ বাংলাদেশ।তোমরা ভালো রেজাল্ট কর, পাশাপাশি ভালো মানুষ হিসেবে নিজেকে গড়ে তোল। এবং
সর্বদাই দেশকে ভালোবেসে এ দেশের কল্যাণে নিজেকে বিলিয়ে দিবে এ প্রতিজ্ঞায় দৃঢ় থাকো।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ জসিম উদ্দিনের সভাপতিত্বে ও সিনিয়র শিক্ষিকা প্রিয়াংকা রাণি তালুকদারের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন, বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সদস্য মো. সেলিম মিয়া, হাজী সুফি উল্লাহ উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক জাকারিয়া কামাল ও বালিকা বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক আব্দুল মান্নান প্রমুখ।
আরও পড়ুন
আওয়ামীলীগকে নিষিদ্ধের দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন
খুলনার গণগ্রন্থাগারের দেয়ালে বাংলার ঐতিহ্য
ডামুড্যা কোন রাতে থেমে নেই চুরি