রাজিয়া বেগম প্রায় দুই যুগ ধরে মাটির চুলা তৈরি করে বিক্রি করছেন। রাজিয়ার মাও মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ভৈরব নদের পাড়ে ঝুপড়ি ঘরে থেকে চুলা তৈরি করেছেন। প্রায় ১৫ বছর ধরে রাজিয়ার স্বামী কামরুল ইসলাম নিরুদ্দেশ রয়েছেন। এক ছেলে নিয়ে রাজিয়ার সংসার। চুলা বিক্রি করে তার সংসার চলে। চুলা বিক্রি হলে খাবার জোটে আর বিক্রি না হলে খাবারের জন্য রাজিয়াকে বিকল্প পথ খুঁজতে হয়।
বাগেরহাটে ঐতিহ্যবাহী গ্রামীণ এই মাটির চুলা তৈরি করা হয়। কয়েক যুগ ধরে শহরের ভৈরব নদের পাড়ে এই মৃৎশিল্পের দেখা মেলে। নারীরা নিজেদের দক্ষতা আর সৃজনশীলতা কাজে লাগিয়ে নদের চর থেকে পলিমাটি তুলে চুলা তৈরি করেন। ওই নদের পাড়ে সাজিয়ে রেখে চুলা বিক্রি করা হয়। তবে সেই চুলা তৈরির কারিগরদের কষ্টের শেষ নেই। নদের পাড়ে ঝুপড়ি ঘরেই তাদের সংসার। সরকারের কাছে সহায়তার দাবি জানিয়েছে তারা। বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক চুলা তৈরির কারিগরদের সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন।
জানা গেছে, মাটি দিয়ে তৈরি করা চুলার ঐতিহ্য রয়েছে। এক সময় গ্রাম-বাংলায় রান্না-বান্নার মূলভিত্তি ছিল মাটির চুলা। শহর-বন্দর-গ্রাম থেকে সর্বত্রই চুলার ব্যবহার রয়েছে। হোক সে মাটির চুলা বা অন্য কোন চুলা। চুলা ছাড়া রান্না অসম্ভব। বাগেরহাট ভৈরব নদের চর থেকে মাটি তুলে শহর রক্ষা বাঁধের পাশে তৈরি করা হচ্ছে গ্রামীণ মাটির চুলা। কারিগররা একমুঠো দুমুঠো করে একের পর এক মাটি সাজিয়ে তৈরি করে চুলা।
চুলা তৈরির কারিগর রাজিয়া বেগম জানান, নদের চর থেকে পলিমাটি তুলে একমুখ ও দুই মুখসহ বিভিন্ন সাইজ এবং নানা ডিজাইনের চুলা তৈরি করে। একটি চুলা বিক্রির উপযোগী হতে ১৫ থেকে ২০ দিন সময় লাগে। একটি চুলা ১৫০ থেকে ৫০০ টাকায় বিক্রি করে। প্রায় ৩০ বছর ধরে নদের পাড়ে ঝুপড়ি ঘরে থেকে তিনি মাটির চুলা তৈরি করে বিক্রি করছেন। স্বামী নিরুদ্দেশ থাকায় এক ছেলেকে নিয়ে তার সংসার। চুলা বিক্রি হলে খাবার জোটে আর বিক্রি না হলে খাবার জোটে না। নিজের ঘর না থাকায় নদের পাড়ে ঝুপড়ি ঘরে তার জীবন চলছে। একটি ঘরের জন্য দারে দারে ধন্না দিয়েও আজও পর্যন্ত ঘর মেলনি। সরকারের কাছে ঘরের দাবি রাজিয়ার।
মাটির চুলা তৈরির আরেক কারিগর জোসনা বেগম। তিনিও ভৈরব নদ পাড়ের বাসিন্দা। প্রায় ৩০ বছর ধরে জোসনা বেগম মাটির চুলা তৈরি করছেন। ৮ বছর আগে তার স্বামী আসলাম হওলাদার মারা গেছেন। তারও সংসার চলে চুলা বিক্রির টাকায়। শুধু রাজিয়া আর জোসনা বেগম নয় আরও বেশ কয়েকজন নারী ভৈরব নদ থেকে মাটি তুলে চুলা তৈরি করে বিক্রি করছেন। গ্রামীণ মাটির চুলা তৈরির এসব কারিগরদের সংসার চলছে অনেক কষ্টে।
জোসনা বেগম বলেন, আমাদের কষ্টের কোন শেষ নেই। প্রায় ৩০ বছর ধরে মাটির চুলা তৈরি করে বিক্রি করে আসছি। অনেক কষ্টে দিন চলছে।
তিনি জানান, এখনো মানুষের কাছে মাটির চুলার কদর রয়েছে। সরকারি সহযোগিতা পেলে মাটির চুলা বিক্রি করে তারা স্বাবলম্বী হতে পারে। তারা সরকারের কাছে সহযোগিতার দাবি জানিয়েছেন।
মাটির চুলার ক্রেতা চা দোকানি আলমগীর হোসেন এবং গৃহবধূ নাজমা বেগম জানান, এখনো তারা জ্বালানি হিসেবে কাঠ ব্যবহার করে। এ কারণে রান্নার জন্য মাটির চুলা তাদের ভরসা। বিভিন্ন সময় তারা ভৈরব নদের পাড়ে এসে চুালা ক্রয় করে নিয়ে যায়।
মাটির চুলা ক্রেতা লাবনী বেগম ও কুলসুম বেগম জানান, তাদের বাসা বাড়িতে প্রধান জ্বালানি হিসেবে গ্যাস রয়েছে। রান্না করতে করতে হঠাৎ গ্যাস শেষ হলে বিকল্প হিসেবে তারা মাটির চুলায় রান্নার কাজ সারে। এজন্য তাদের বাসায় গ্যাসের চুলার পাশাপাশি মাটির চুলার ব্যবহার রয়েছে।
বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আজিজু রহমান জানান, যে সব নারীরা মাটির চুলা তৈরি বিক্রি করছেন তারা এক ধরণের শিল্পী। তাদের ওই শিল্প টিকিয়ে রাখতে প্রয়োজন হলে ক্ষুদ্র ঋণ এবং প্রশিক্ষণ ও তৈরি করা চুলা বাজারজাত করণে সহযোগিতা করা হবে।
—ইউএনবি
আরও পড়ুন
কার দিকে, কেন তেড়ে গিয়েছিলেন তামিম
রংপুরে তারুণ্যের উৎসব-২০২৫ উপলক্ষ্যে ব্যাডমিন্টন প্রতিযোগিতার উদ্বোধন
রংপুরে প্রিপেইড মিটার স্থাপন বন্ধের দাবিতে নাগরিক কমিটির সংবাদ সম্মেলন