December 4, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Wednesday, September 27th, 2023, 8:20 pm

বিশ্বের ৫ কোটি মানুষ প্রাণ হারাতে পারেন

অনলাইন ডেস্ক :

প্লেগ, গুটি বসন্ত, স্প্যানিশ ফ্লু, এইচআইভি এইডসের পর করোনাভাইরাস মহামারি বিশ্বের বহু মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। এবার ‘এক্স’ নামের একটি রোগের প্রভাবে বিশ্বব্যাপী আরেকটি মহামারি ঘটতে পারে। যেটি পুরো বিশ্বকে নাড়িয়ে দেওয়া করোনা মহামারির চেয়েও ভয়াবহ হতে পারে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন কেট বিংগ্যাম নামের যুক্তরাজ্যের একজন রোগ বিশেষজ্ঞ। সম্প্রতি ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ডেইলি মেইলের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে তিনি এমনই আশঙ্কার কথা জানান। ডেইলি মেইলকে কেট বিংগ্যাম বলেছেন, ‘এক্স’ নামের রোগটির ভয়াবহতা ১৯১৯-২০ সাল পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী তা-ব চালানো স্প্যানিশ ফ্লুর মতো হবে।

আর নতুন এ রোগটিকে ‘এক্স’ হিসেবে নামকরণ করেছে জাতিসংঘের স্বাস্থ্য বিষয়ক সহযোগী সংস্থা বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। ব্রিটিশ রোগ বিশেষজ্ঞ কেট বিংগ্যাম আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, এই রোগটির কারণে বিশ্বব্যাপী ৫ কোটি মানুষের মৃত্যু হতে পারে। তিনি বলেছেন, ‘আমাকে বিষয়টি এভাবে রাখতে দিন : ১৯১৮-১৯ সালের ফ্লু মহামারিতে বিশ্বব্যাপী ৫ কোটি মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে যত মানুষ নিহত হয়েছিলেন; এ সংখ্যাটি তার দ্বিগুণ। বর্তমানে বিদ্যমান ভাইরাসগুলোর যে কোনো একটিতে একই সংখ্যক প্রাণহানি হতে পারে।’ তিনি আরও বলেছেন, যদি ‘এক্সের’ হুমকি মোকাবিলা করতে হয় তাহলে বিশ্বব্যাপী রেকর্ড সময়ের মধ্যে ভ্যাকসিন কার্যক্রম চালাতে হবে।

ইতিহাসে ভয়ংকর মহামারির ঘটনা অতীতেও ঘটেছে। করোনাভাইরাস মহামারি এবং তার ফলে বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক ধসের কারণে ২০২০ সালকে মানুষ যেমন ভবিষ্যতে বিপর্যয়ের একটা বছর হিসেবে মনে রাখবে, তেমনি ইতিহাসের পাতা ঘাঁটলে দেখা যায় এমন আরও ভয়ংকর ও বিপর্যয়ের বছর মানুষ অতীতে প্রত্যক্ষ করেছে। কোভিড-১৯ সংক্রমণের পরিসংখ্যান বলছে জন্স হপকিন্স ইউনিভার্সিটির ২০২২ সালের ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত সংকলিত তথ্য অনুযায়ী বিশ্বজুড়ে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৭ কোটি ৪৫ লাখ মানুষ এবং মারা গেছেন ১৬ লাখ। মানব ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ মহামারি ছিল বিউবোনিক প্লেগের প্রাদুর্ভাব।

১৩৪৬ সালে প্রথম প্লেগের প্রাদুর্ভাব ছড়াতে শুরু করে। ব্ল্যাক ডেথ বা কালো মৃত্যু নামে ইতিহাসে পরিচিত ওই মহামারি পরবর্তী কয়েক বছরে কেড়ে নিয়েছিল শুধু ইউরোপেই আড়াই কোটি জীবন- সারা পৃথিবীতে ওই প্লেগে মারা যান ২০ কোটি মানুষ। ইতিহাস বলে প্রায় অর্ধেক ইউরোপ উজাড় হয়ে গিয়েছিল ওই ভয়ংকর মড়কে। ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ মহামারিগুলোর মধ্যে ইয়েরসিনিয়া পেস্টিস নামক মারাত্মক ব্যাকটেরিয়ার কারণে প্লেগ রোগের সংক্রমণ ঘটে। প্লেগ রোগটি ছড়িয়ে পড়ার অন্যতম কারণ ছিল খাদ্যশস্য। প্রতিদিন গড়ে পাঁচ হাজার মানুষ মারা যেত এই রোগে! প্রায় ৫০ বছর ধরে বিশ্বে টিকে ছিল এই মহামারি রোগটি। তখন এই রোগের তেমন কোনো চিকিৎসা ব্যবস্থাও ছিল না।

স্পেন ও পর্তুগাল থেকে ১৫২০ সালে অভিযাত্রীরা আমেরিকায় নিয়ে যায় স্মলপক্স বা গুটি বসন্ত রোগ। ওই মড়কে আমেরিকার আদি জনগোষ্ঠীর ৬০ থেকে ৯০ শতাংশ উজাড় হয়ে যায়। ইউরোপের মানুষের আমেরিকায় নিয়ে যাওয়া গুটি বসন্তের জীবাণুর সংক্রমণে আমেরিকার আদি জনগোষ্ঠী প্রায় নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। অষ্টাদশ শতাব্দীতে অ্যাডওয়ার্ড জেনার নামক ব্রিটিশ ডাক্তারের আবিষ্কৃত ওষুধে গুটিবসন্তের প্রাদুর্ভাব দমন করা সম্ভব হয়। ১৯৮০ সালের দিকে বিশ্বস্বাস্থ্য কর্তৃক জানানো হয়, স্মলপক্সের ভাইরাসটি বিশ্ব থেকে একেবারেই মুছে গেছে।

এরপর স্প্যানিশ ফ্লু-তে পৃথিবীতে মারা গিয়েছিল পাঁচ কোটি মানুষ। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষে ঘরে ফেরা সৈন্যদের থেকে এই ফ্লু ছড়িয়েছিল। ওই মহামারিতে গোটা বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ৩ থেকে ৫ শতাংশ প্রাণ হারায়। স্প্যানিশ ফ্লুর ব্যাপ্তিকাল ছিল ১৯১৮ জানুয়ারি থেকে ১৯২০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। যদিও এর নাম দেওয়া হয় স্প্যানিশ ফ্লু; তবে এর সঙ্গে স্পেনের কোনো সম্পর্ক ছিল না। ধারণা করা হয়, ফ্রান্সের ব্রিটিশ সেনা ঘাঁটি থেকে অথবা যুক্তরাষ্ট্রের মার্কিন সেনাদের শরীরে প্রথম ধরা পড়ে ভাইরাসটি। এরপর চীনা শ্রমিকদের মাধ্যমে ইউরোপে স্প্যানিশ ফ্লু ছড়িয়ে পড়ে। আশির দশকে যখন এইচআইভি এইডস মহামারি আকারে প্রথম ছড়িয়েছিল তখন সেই মহামারিতেও প্রাণহানি ঘটেছিল ৩ কোটি ২০ লাখ মানুষের। এই রোগে এখনো অনেক দেশের মানুষই মৃত্যুবরণ করে থাকেন।

আজও এই রোগ থেকে সম্পূর্ণ সুস্থ হওয়ার ওষুধ আবিষ্কৃত হয়নি। এক সময় কলেরা মহামারি আকার ধারণ করে। ১৯ শতকের শুরুতে প্রথমে ইংল্যান্ডব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে কলেরা। বাতাসের মাধ্যমে বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছিল এই রোগের জীবাণু। পানি দূষণের কারণেই মূলত কলেরা রোগটি তখন মহামারি আকার ধারণা করেছিল। বিগত ২০০ বছরে মোট সাতবার কলেরায় আক্রান্ত হয়েছে ভারতসহ গোটা বিশ্ব। ১৮১৭ থেকে ১৮৬০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত কলেরা-অতিমারিতে ভারতে প্রাণ হারিয়েছেন দেড় কোটির বেশি মানুষ।

১৮৬৫ থেকে ১৯১৭ অবধি এই পরিসংখ্যান ছিল ২ কোটি ৩০ লাখ। দূষিত পানি পান করার মাধ্যমে এই রোগের জীবাণু শরীরে প্রবেশ করে থাকে। এই রোগে এখনো অনেক মানুষই মারা যায়। ইতিহাসে এসব ভয়াবহ মহামারির ঘটনার পর কেট বিংগ্যামের নতুন ভাইরাসের হুঁশিয়ারির বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা। সংস্থার বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, ‘এক্স’ নামের রোগটি একটি ভাইরাস, একটি ব্যাকটেরিয়াম এবং ফাঙ্গাস হতে পারে। আর এই রোগের চিকিৎসা দেওয়ার মতো কোনো ওষুধ থাকবে না। প্রসঙ্গত, চলতি বছরের মে মাসে নিজেদের ওয়েবসাইটে প্রথমবার ‘এক্স’ রোগের কথাটি উল্লেখ করেছিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।