February 14, 2025

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Tuesday, January 28th, 2025, 11:36 pm

ভিক্ষাবৃত্তি আর ক্ষমতার চোরাগলির নিষ্ঠুর বাস্তবতা নিয়ে লেখা হয়েছে—‘মৃত্যু কখনো কখনো জরুরি হয়’

 

অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০২৫ এ প্রকাশিত ‘মৃত্যু কখনো কখনো জরুরি হয়’ উপন্যাসের সমাজের নিম্নস্তরে লুকিয়ে থাকা অন্যায়, আর ক্ষমতার অসীম দম্ভের এক অনবদ্য গল্প তুলে ধরা হয়েছে।
সাংবাদিক ও লেখক জামশেদ নাজিম তার নতুন উপন্যাসে আমাদের চোখ খুলে দেয় ভিক্ষাবৃত্তির কুয়াশায় ঢাকা এক অন্ধকার দুনিয়ার। কখনো একটি মৃত্যু যা সমাজকে নাড়িয়ে দেয় সে বিষয়টি শুরু থেকে শেষ অবধি ফুটিয়ে তুলতে সত্যিকারের ঘটনার মতো পুলিশের তদন্তের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে পরিষ্কার বর্ণনা করা হয়েছে।
উপন্যাসের সূচনা এক ভিক্ষুক নেতার নির্মম হত্যার মধ্য দিয়ে। তার মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে বেরিয়ে আসে এমন এক সত্য, যা আমাদের বিবেককে প্রশ্নবিদ্ধ করে। ভিক্ষাবৃত্তি শুধুই দরিদ্র মানুষের বেঁচে থাকার হাতিয়ার নয়, বরং এটি আজ ক্ষমতার লোভে জর্জরিত এক বিশাল যন্ত্র। দেশের প্রভাবশালী ব্যক্তিরা, এমপি-মন্ত্রী থেকে শুরু করে রাজনৈতিক গোষ্ঠীগুলি, এই যন্ত্রের পেছনে লুকিয়ে রয়েছে। তাদের স্বার্থের কাছে ভিক্ষুকরা কেবল এক একটি পুতুল।

লেখক তাঁর গল্পে এমন কিছু মুহূর্ত তুলে ধরেছেন, যা পাঠকের মনোজগতে তোলপাড় সৃষ্টি করবে। যখন ভিক্ষুক নেতার মৃত্যুর আসল রহস্য প্রকাশ পায়, তখন প্রশ্ন ওঠে—আমরা কি এমন এক সমাজে বাস করছি, যেখানে মানুষের জীবনের মূল্য ক্ষমতার খেলায় মুছে যায়? উপন্যাসটি ক্ষমতার দম্ভ আর মানবিকতার মলিন বাস্তবতাকে গভীরভাবে তুলে ধরে।
বাস্তবতার চিত্র দেখে লেখালেখির বিভিন্ন বিষয়ে জামশেদ নাজিম বলেন, “আমাদের সমাজে এমন কিছু অন্ধকার চোরাগলি আছে, যেখানে আমরা হয়তো কখনোই পৌঁছাই না। আমি সেই দিকটা তুলে ধরতে চেয়েছি। মৃত্যু মাঝে মাঝে একটা গল্পের শেষ নয়, বরং শুরু। এটি কেবল একটি গল্প নয়, বরং আমাদের সমাজের অসংখ্য না বলা কথার দর্পণ। উপন্যাসটি পড়তে পড়তে বারবার মনে হবে, আমরা কি আসলেই এই পৃথিবীর অংশ? এতো নির্মম বাস্তবতা মেনে নেওয়া কঠিন।”

ইত্যাদি গ্রন্থ প্রকাশ থেকে প্রকাশিত ‘মৃত্যু কখনো কখনো জরুরি হয়’ অমর একুশে গ্রন্থমেলার ১৯ নম্বর প্যাভিলিয়নে পাওয়া যাবে। সেই সঙ্গে দেশের বিভিন্ন অনলাইন বই শপেও এটি সহজলভ্য।
অপরাধবিষয়ক সাংবাদিকতার ফলে জামশেদ নাজিমের লেখা উপন্যাসগুলোতে জনজীবনের চিত্র ফুটে ওঠে। সে কারণে অল্প সময়ের মধ্যে তার লেখা উপন্যাস পাঠকপ্রিয়তা পেয়েছে। বিশেষ করে থ্রিলার উপন্যাসগুলো পাঠক প্রিয়তার শীর্ষে রয়েছে।

জামশেদ নাজিমের লেখা প্রথম উপন্যাস— একটি গল্পের গল্প, দ্বিতীয় উপন্যাস— গল্পটির বাকি অংশ পাঠকপ্রিয়তা পাওয়ার পর থেকে এ লেখক পেশাগত দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি লেখালেখিতে পুরোপুরি মনোনিবেশ করেন। তৃতীয় উপন্যাস ‘আবেগ জল ডুবি’ উপন্যাস বাংলাদেশ ও ভারতের বাংলা বইয়ের পাঠকদের কাছে দারুণ সাড়া ফেলে। পরবর্তীতে ২০২২ সালে ‘নিষিদ্ধ নাগরিক’ উপন্যাস পৃথকভাবে অমর একুশে বইমেলা ঢাকার ইত্যাদি গ্রন্থ প্রকাশ ও আন্তর্জাতিক বই মেলায় কলকাতার অভিযান পাবলিসার্স থেকে প্রকাশিত হয়। ভারত ও বাংলাদেশের অপরাধ, গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকাণ্ড এবং দুই দেশের সামাজিক চিত্র তুলে ধরায় উপন্যাসটি দুই দেশে সমানভাবে পাঠক প্রিয়তা পায়। ওই বছরেরর বই মেলায় ইত্যাদি গ্রন্থ প্রকাশের বেস্টসেলার হয় উপন্যাসটি।

উপন্যাসটি সম্পর্কে প্রকাশক আদিত্য অন্তর আশাবাদী হয়ে বলেছেন, ‘জামশেদ নাজিমের লেখা নিষিদ্ধ নাগরিক উপন্যাস দিয়ে ইত্যাদি গ্রন্থ প্রকাশের লেখক হন জামশেদ নাজিম। নিষিদ্ধ নাগরিক উপন্যাসটি বই মেলায় ভীষণ পাঠক টেনেছে। এক মাসের মধ্যেই উপন্যাসটির দুটি মুদ্রণ শেষ হয়ে যায়। পরের বছর বই মেলা ওই উপন্যাসটি সমান তালে বিক্রি হয়েছে। নিষিদ্ধ নাগরিকের পাশাপাশি মৃত্যু কখনো কখনো জরুরী হয় উপন্যাসটি আরো বেশি পাঠক প্রিয়তা পাবে।’

কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘লেখক হিসেবে জামশেদ নাজিমের পাঠক তালিকা দিনে দিনে লম্বা হচ্ছে। অন্যান্য উপন্যাসের তুলনায় মৃত্যু কখনো কখনো জরুরি হয় উপন্যাসটিতে লেখার ধরন দারুণ হয়েছে। পাঠক প্রতিটি পৃষ্ঠায় পূর্ণাঙ্গ থ্রিলারের মজা পাবেন। সেজন্য বলাই যায়, এই উপন্যাসটি পাঠকপ্রিয়তা বেশি পাবে।’