মাগুরায় মধুমতি নদীর পানি ক্রমেই বৃদ্ধি পাওয়ায় ভাঙন তীব্র আকারে ধারণ করেছে। ভাঙনে ফলে জমিজমা ও বসতভিটা হারিয়ে নিঃস্ব হচ্ছে জেলার মহম্মদপুর উপজেলার ১৭ গ্রামের মানুষ।
সংশ্লিষ্টরা জানান, উপজেলার উত্তরে চরসেলামতপুর থেকে শুরু করে দক্ষিণে কালিশংকরপুর পর্যন্ত মধুমতির ভাঙন ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। তাই নদীর তীরবর্তী বসবাসকারী মানুষের মধ্যে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। ইতোমধ্যে গোপালনগর, মহেষপুর, হরেকৃষ্ণপুর, ঝামা, আড়মাঝি, যশোবন্তপুর, চরপাচুড়িয়া, রায়পুর, মুরাইল, ধুপুড়িয়া, জাঙ্গালিয়া, রুইজানি, কাশিপুর, ধুলজুড়ি, দ্বিগমাঝি, দেউলি ও ভোলানাথপুর মোট সতেরটি গ্রাম ভাঙনের শিকার হয়েছে। প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে এসব গ্রামের মানুষের কাছে মধুমতি ভয়াবহ রূপ দেখে পান। তাই ভাঙন রোধে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন তারা।
সরেজমিনে দেখা গেছে যে ভাঙনের কবলে পড়ে ঘরসহ প্রয়োজনীয় মালামাল অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছে গ্রামবাসী। গাছপালা বিক্রি করে দিতেও দেখা গেছে। অনেক অসহায় নারী-পুরুষ স্বর্বস্ব হারিয়ে আহাজারি করে চলছে। চোখের সামনে ভিটেবাড়ি মধুমতিতে বিলীন হয়ে যেতে দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন অনেকেই।
সদরের গোপালনগর গ্রামের গৃহবধূ রেহেনা খাতুন বলেন, এই পর্যন্ত ছয় বার বাড়ি সরিয়েছি। আমরা দরিদ্র কৃষক পরিবার। এবারও ভাঙনে বসতবাড়ি ও গাছপালা নদীগর্ভে চলে গেছে। দূরে কোথাও নতুন করে বাড়িঘর তোলার সামর্থ নেই।
এ রকম অগণিত পরিবার একাধিকবার বাড়িঘর সরিয়েও মাথা গোজার শেষ আশ্রয়টুকুও রক্ষা করতে পারছেন না। সবকিছু মধুমতি পেটেই যাচ্ছে।
গোপালনগর গ্রামের বাসিন্দা ধোয়াইল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. রফিকুল ইসলাম জানান, গোপালনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ অনেক বসতবাড়ি ও ফসলি জমি মধুমতি নদী ভাঙনের চরম ঝুঁকিতে রয়েছে। একটা পরিবার পাঁচ থেকে সাতবার বাড়ি সরিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছে। তাই নদীপাড়ের অসহায় পরিবারের কথা ভেবে ভাঙন রোধে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের ব্যবস্থা করতে ঊর্ধ্বতন কতৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন তিনি।
মাগুরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী জি এম রাইসুল ইসলাম জানান, মধুমতি নদী ভাঙন কবলিত এলাকা কিছুদিন আগে পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক পরিদর্শন করেছেন এবং কিছু নির্দেশনা দিয়েছেন। সেই নির্দেশনা অনুযায়ী পানি উন্নয়ন বোর্ড কাজ করছে। খুব দ্রুত ভাঙন কবলিত এলাকায় গত বছরের ন্যায় জিও ব্যাগ ফেলা হবে।
তিনি জানান, ইতোপূর্বে হরেকৃষ্ণপুর থেকে ঝামা পর্যন্ত ৩০০ মিটার এলাকায় জিও ব্যাগ ফেলা এবং কাশিপুর এলাকায় প্রায় দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে ১৫০ মিটার বাঁধ নির্মাণ কাজ করা হয়েছে।
এই বছরেও নদী ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করা হয়েছে। ভাঙন প্রবন এলাকাগুলো চিহ্নিত করে স্থায়ী বাঁধ দেয়ার জন্য স্থানীয় সংসদ সদস্য ড. বীরেন শিকদার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন বলে জানিয়েছেন জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের এই কর্মকর্তা।
—ইউএনবি
আরও পড়ুন
কার দিকে, কেন তেড়ে গিয়েছিলেন তামিম
২২০ চলচ্চিত্র নিয়ে ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব
রংপুরে তারুণ্যের উৎসব-২০২৫ উপলক্ষ্যে ব্যাডমিন্টন প্রতিযোগিতার উদ্বোধন