জেলা প্রতিনিধি, গাইবান্ধা :
গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলায় হাসনা খাতুন হেনা নামে ১০ বছরের এক শিশুকে ধর্ষণের পর হত্যার দায়ে হাফেজ মোহাম্মদ মোরসালিন (১৯) নামে এক যুবককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার বিকেলে নিজ কার্যালয়ে প্রেস করফারেন্স করে বিষয়টি সাংবাদিকদের জানান গাইবান্ধার পুলিশ সুপার মুহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম।
নীলফামারীর ডোমার উপজেলার জোড়াবাড়ী গ্রামের মোঃ জাহিদুল ইসলামের ছেলে হাফেজ মোরসালিন বড় সাতাইল বাতাইল গ্রামের মসজিদের মোয়াজ্জেম ও আরবির শিক্ষক। তিনি মসজিদ সংলগ্ন একটি কক্ষে থাকতেন। তিনি মক্তবে সকালে এলাকার শিশুদের কোরআন শিক্ষা দিতেন মোরসালিন। হাসনা খাতুন হেনা ও মা রুবি বেগম মসজিদের অদুরে নানা খয়বর রহমান বাবলুর বাড়িতে থাকতো। তার বাবা রাখালবুরুজ ইউনিয়নের কাজীপাড়া গ্রামের হাসানুর রহমান ঢাকায় কাজ করেন।
এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে নীলফামারীর জোড়াবাড়ী গ্রামের মাহাতাব আলীর ছেলে আবদুল্লাহ আল মামুন (২১), গোবিন্দগঞ্জের হিরোকপাড়া গ্রামের আজাহার আলীর ছেলে আলামিন হোসেন (২২) ও একই উপজেলার জঙ্গলমারা গ্রামের মোজাফফর আলী খন্দকারের ছেলে আরাফাত খন্দকারকে (১৭) গ্রেপ্তার করা হয়েছে। শিশুটিকে মসজিদে মক্তব পড়াতেন মোহাম্মদ মোরসালিন।
প্রেস করফারেন্সে পুলিশ সুপার মুহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম উল্লেখ করেন, প্রতিদিনের ন্যায় গত ২৬ ফেব্রুয়ারি সকালে মোয়াজ্জেম মোরসালিন হাসনা খাতুনসহ আরও কয়েকটি শিশুকে মসজিদে মক্তব পড়ান। পড়া শেষে মোরসালিন গোবিন্দগঞ্জ পৌরসভার বর্ধনকুঠি এলাকার এক ব্যক্তির বাড়ীতে আরবি পড়াতে যান। সেখান থেকে ফেরার পথে রাস্তায় ওই হাসনা খাতুনের সাথে তার দেখা হলে তাকে মসজিদ সংলগ্ন কক্ষটিতে নিয়ে আসেন মোরসালিন। এ সময় হাসনা খাতুনকে টাকা দিয়ে পার্শ্ববর্তী দোকান থেকে বিস্কুট কিনে আনতে বলেন মোয়াজ্জেন। হাসনা খাতুন বিস্কুট কিনে আনলে মোরসালিন তাকে বিস্কুট খেতে দেয়। বিস্কুট খাওয়ার পর হাসনাকে ধর্ষণের চেষ্টা করলে সে বাঁধা দেয় এবং নানিকে বিষয়টি বলে দিবে এই কথা বলার পর হাসনার গলা টিপে ধরেন মোয়াজ্জেম মোরসালিন। এর কিছুক্ষণ পর হাসনা নিস্তেজ হলে তাকে ধর্ষণ করেন মোরসালিন। তারপর হাসনার পড়নের হিজাব স্কার্ফ দিয়ে তার গলায় পেঁচিয়ে তাকে হত্যা করে মোরসালিন। পরে মোরসালিন হাসনা খাতুনের নিথর দেহ সিমেন্টের খালি বস্তায় ঢুকিয়ে দুই কিলোমিটার দূরে সাইকেলের পিছনে ক্যারিয়ারে বেঁধে নিয়ে বর্ধনকুঠি এলাকার একটি বাঁশঝাড়ে ফেলে দিয়ে আসেন। পরের দিন দুপুরে লাশটি উদ্ধার করে গোবিন্দগঞ্জ থানা পুলিশ। এ ঘটনায় হাসনা খাতুনের মামা সাইফুল ইসলাম বাদী হয়ে অজ্ঞাত আসামী দেখিয়ে একটি মামলা দায়ের করে। পরে ঘটনার সাথে জড়িত সন্দেহে মোরসালিন, আবদুল্লাহ আল মামুন, আলামিন হোসেন ও আরাফাত খন্দকারকে আটক করে জেলা গোয়েন্দা শাখা(ডিবি) ও গোবিন্দগঞ্জ থানার পুলিশ। তাদের মধ্যে মোরসালিন, আবদুল্লাহ আল মামুন, আলামিন হোসেনকে তিন দিনের রিমা-ে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদে মোরসালিন ঘটনার সাথে জড়িত থাকার বিষয়ে স্বীকারোক্তি প্রদান করেন। আটককৃত অন্যদের বিষয়ে তথ্য যাচাই-বাছাই চলছে বলে জানান পুলিশ সুপার। ঘটনাস্থল থেকে মোরসালিন সাইকেলে করে ওই শিশুটির মরদেহ বর্ধনকুঠি এলাকায় নিয়ে যাওয়ার সময় রাস্তার পাশে একটি চায়ের দোকানে লাগানো সিসি ক্যামেরার ফুটেজে সংগ্রহ করা হয়। ফুটেজে মোয়াজ্জেম বাই সাইকেলের পিছনে করে লাশ পরিবহনের চিত্র দেখা যায়। এজন্য ওই দোকানের মালিককে পুরস্কার দেন পুলিশ সুপার।
ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বি-সার্কেল) আবু লাইচ মো. ইলিয়াচ জিকু, সহকারী পুলিশ সুপার (সি-সার্কেল) উদয় কুমার সাহা, জেলা ট্রাফিক ইন্সপেক্টর নূর মোহাম্মদ, জেলা গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) ওসি মো. মাহবুবুল আলম, গোবিন্দগঞ্জ থানার ওসি মো. ইজার উদ্দিন, মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা পরিদর্শক (তদন্ত) মো. মোস্তাফিজুর রহমান ও ডিবির উপ-পরিদর্শক নওশাদ আলী প্রমুখ।
আরও পড়ুন
রংপুরে এক্্র ক্যাডেটস্্ মিলনমেলা অনুষ্ঠিত
কোম্পানীগঞ্জে অস্ত্রসহ ব্যবসায়ীকে আটক করলো সেনাবাহীনী
৭২ ঘন্টার মধ্যে হত্যা মামলার আসামী গ্রেফতার