জেলা প্রতিনিধি, রংপুর (মিঠাপুকুর):
রংপুরের মিঠাপুকুরে ইমাদপুর ইউনিয়ন পরিষদের হিসাব সহকারী জুয়েল মিয়ার বিরুদ্ধে একাধিক ধর্ষণের অভিযোগ রয়েছে বলে জানা গেছে। মামলা থেকে বাচঁতে আরেক নারী পারুল বেগম ওরফে সাদা রানীকে দিয়ে ধর্ষণ মামলার বাদীর পরিবারের বিরুদ্ধে মিথ্যা ধর্ষণ মামলা করেছেন জুয়েল মিয়া। জুয়েল মিয়া উপজলোর মির্জাপুর ইউনয়িনরে বৈরাতীহাট এলাকার স্কুল শিক্ষক মতি মিয়ার ছেলে।
মামলা নথিপত্র ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, উপজলোর পূর্ব মুরাদপুর গ্রামের সাদিকুল ইসলামের স্ত্রী ববিতা খাতুন তার নিজের ঘরে শুয়ে থাকা অবস্থায় গত ১ সপ্টেম্বের রাত দশটায় অভিযুক্ত জুয়েল মিয়া ধর্ষণের চেস্টা করেন। এ ঘটনায় রংপুর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা দায়ের হয়। এরআগে জুয়েল মিয়া পীরগঞ্জ উপজেলার অমোদপুর গ্রামের সাইফুল ইসলামের মেয়ে জান্নাতি বেগমের ঘরে ঠুকে ধর্ষণকালে হাতেনাতে ধরা খেয়ে তিন মাস জেল হাজতে ছিলেন। সে সময় ধর্ষণ মামলা থেকে বাঁচতে একটি পাল্টা র্ধষণের নাটক সাজিয়ে মামলা করেন ধর্ষিতার পরিবারের বিরুদ্ধে। ওই মিথ্যা ধর্ষণ মামলায় ধর্ষিতার বাবা সাইফুল ইসলাম ও মামা আবুল কাশেম মিয়া সাড়ে সাত মাস জেল খাটেন। এই মামলার বাদী উপজলোর পূর্ব মুরাদপুর গ্রামের পারুল বেগম।
ভুল বুঝতে পেরে মিথ্যা মামলার বাদী পারুল বেগম বলেন, ধর্ষক জেুয়েলের মা, বাবা, ও বোনকে নিয়ে একদিন সন্ধ্যায় আমার বাড়িতে আসেন। আমাকে ভ্যানে তুলে রতিয়া এলাকার কালী মন্দিরে নির্জনে বসিয়ে রাখেন। তাদের কথামত আমি চিৎকার করলে আশপাশের রাস্তার লোকজন নিয়ে তারা আমাকে উদ্ধার করতে আসে। এ ঘটনায় থানায় একটি মিথ্যা ধর্ষণ মামলা দায়ের করায় জুয়েল মিয়ার পরিবার। তিনি আরও বলনে, ২ লাখ ৬০ হাজার টাকার প্রলোভন দেখিয়ে আমাকে দিয়ে পাল্টা ধর্ষণ মামলা করান ধর্ষক জুয়েল মিয়ার স্কুল শিক্ষক পিতা মতি মিয়া। তারা দু’পক্ষ আপোষ হলেও আমাকে টাকা দেওয়াতো দুরের কথা একটা যাকাতের কাপড়ও দেয়নি।
মিথ্যা ধর্ষণ মামলা আসামী আবুল কাশেম বলেন, আমার ভাগিনীকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করেন জুয়েল মিয়া। তাকে হাতেনাতে আটক করে পুলিশে দেওয়া হয়। দায়ের হয় একটি ধর্ষণ মামলা। সে ওই মামলায় ৩ মাস জেল খেটেছে। পরে আমাদের বিরুদ্ধে পারুল বেগম নামে একজন নারীকে দিয়ে মিথ্যা ধর্ষণ মামলা দায়ের করেন। ওই মামলার আমরা ৭ মাস জেল খেটেছি।
স্থানীয় রফিকুল ইসলাম বলেন, জুয়েল মিয়া এলাকায় একাধিক মেয়েকে ধর্ষণ করেছে। একটি ধর্ষণ মামলার রেশ কাটতে না কাটতেই আরেকটি ধর্ষণ করেছে জুয়েল। এ ঘটনায় মামলা হলেও ধরাছোঁয়ার বাইরে আছে জুয়েল মিয়া। আমরা তার দৃষ্টান্ত মুলক শাস্তি দাবি করছি।
অভিযুক্ত জুয়েল মিয়া সাথে এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোন প্রকার বক্তব্য দিতে রাজি হননি। উল্টো সাংবাদিককে গালিগালাজ করেছেন। মিথ্যা মামলার বিষয়ে মুরাদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও অভিযুক্ত জুয়েল মিয়ার পিতা মতি মিয়া বলেন, পারুলের সাথে আমাদের যে চুক্তি হয়েছিল, সেটি করে আমাদের কাজ হয়েছে, টাকাও নিয়েছে। সে আমার কিছুই করতে পারবে না।
ইমাদপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম বলেন, হিসাব সহকারী জুয়েল মিয়ার বিরুদ্ধে একাধিক ধর্ষণের মামলার ঘটনা শুনেছি। মামলাগুলো আদালতে বিচারাধীন। তার বিরুদ্ধে মন্ত্রনালয় যে শাস্তি দেবে আমরা মেনে নেব।
২০২১ সালরে ১২ অক্টোবর তদন্ত ছাড়ায় মিঠাপুকুর থানায় মিথ্যা মামলাটি রেকর্ডভুক্ত করে সেদিন রাতেই ধর্ষিতার বাবা সাইফুল ইসলাম ও মামা আবুল কাশমেকে গ্রেফতার করা হয়। মামলা রেকর্ডকারী তৎকালীন মিঠাপুকুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ছিলেন জাকির হোসেন। তিনি বর্তমানে নৈতিকস্থলনের দায়ে ঢাকা পুলিশ লাইনসে ক্লোজড রয়েছেন। মিঠাপুকুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নজরুল ইসলাম বলেন, মামলাগুলো আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। আদালতেই রায়ে তার শাস্তি হবে।
আরও পড়ুন
রংপুরে তারুণ্যের উৎসব-২০২৫ উপলক্ষ্যে ব্যাডমিন্টন প্রতিযোগিতার উদ্বোধন
রংপুরে প্রিপেইড মিটার স্থাপন বন্ধের দাবিতে নাগরিক কমিটির সংবাদ সম্মেলন
কোম্পানীগঞ্জে বাস চাপায় শ্রমিকের মৃত্যু,আহত ২