রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা মুসলিম জনগোষ্ঠীর ওপর চালানো দমন-পীড়নকে ‘গণহত্যা’ হিসেবে ঘোষণা দেয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে রোহিঙ্গাদের জাতিগত হিসেবে গ্রহণ করতে অস্বীকার করে তাদের আবারও ‘বাঙালি সম্প্রদায়’ হিসাবে বর্ণনা করেছে মিয়ানমার।
মিয়ানমারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে রোহিঙ্গাদের ‘বাঙালি সম্প্রদায়’ বর্ণনা করে জানিয়েছে, মিয়ানমার কখনোই গণহত্যামূলক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়নি এবং কোনো জাতি, ধর্মীয় গোষ্ঠী বা অন্য কোনো গোষ্ঠীকে পুরোপুরি বা আংশিকভাবে ধ্বংস করে দেয়ার কোনো গণহত্যার সাথে যুক্ত নেই।
এতে বলা হয়, জাতিসংঘের সনদসহ গণহত্যার অপরাধ প্রতিরোধ ও শাস্তি সংক্রান্ত কনভেনশন এবং আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের (আইসিজে) সংবিধির একটি পক্ষ হিসেবে মিয়ানমার বিদ্যমান সব বাধ্যবাধকতাকে সম্মান করতে সম্পূর্ণরূপে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাদের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে শেয়ার করা বিবৃতিতে জানায়, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী তার বক্তব্যে যা তুলে ধরেছেন সেগুলো বাস্তবতা থেকে অনেক দূরে। তার বক্তব্যে দেয়া রেফারেন্সগুলো অবিশ্বস্ত এবং অপ্রত্যাশিত উত্স থেকে পাওয়া।
মিয়ানমার স্পষ্টভাবে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মন্তব্যকে প্রত্যাখ্যান করে জানিয়ে বলেছে, এর বিষয়বস্তু এবং বর্ণনাগুলো রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং একটি সার্বভৌম রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের শামিল।
এদিকে, ফোরটিফাই রাইটসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ম্যাথিউ স্মিথ মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের ঘোষণাকে রোহিঙ্গা এবং মিয়ানমারের সকল মানুষের জন্য এবং গণহত্যা প্রতিরোধ ও প্রতিকারের ব্যাপক প্রচেষ্টার জন্য ‘ঐতিহাসিক’ অর্জন বলে অভিহিত করেছেন।
ম্যাথিউ স্মিথ বলেন, ‘গণহত্যা প্রতিরোধ করার জন্য বিশ্বনেতাদের অবশ্যই তা স্বীকার করতে হবে। মার্কিন সরকার আজকে ঠিক তাই করেছে।’
সোমবার ফোরটিফাই রাইটস বলেছে, জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলোর উচিত মিয়ানমারে রোহিঙ্গা গণহত্যার বিষয়টি প্রকাশ্যে স্বীকার করা এবং জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ বিষয়টি আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) উত্থাপন করে তার নিষ্পত্তি নিশ্চিত করা।
এর আগে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলিম জনগোষ্ঠীর ওপর চালানো দমন-পীড়নকে ‘গণহত্যা’ হিসেবে ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। সোমবার ওয়াশিংটনের ইউএস হলোকাস্ট মেমোরিয়াল মিউজিয়ামে এক অনুষ্ঠানে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন এ ঘোষণা দেন।
তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টি এবং সম্ভাব্য আইনি পদক্ষেপের ভিত্তি স্থাপনের উদ্দেশ্যে এই ঘোষণা দেয়া হয়েছে।
ব্লিঙ্কেন বলেন, জাতিগত সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে ব্যাপক ও নিয়মতান্ত্রিক প্রচারণায় মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী বেসামরিক নাগরিকদের ওপর ব্যাপক নৃশংসতার নিশ্চিত বিবরণের ভিত্তিতে কর্তৃপক্ষ এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এই ঘোষণা মিয়ানমারের বর্তমান সরকারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ বাড়াতে পারে। কারণ ইতোমধ্যে হেগের আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে ‘গণহত্যা’র অভিযোগের মুখোমুখি হচ্ছে জান্তা সরকার।
২০১৭ সালে মিয়ানমারের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা জাতিগত সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু হওয়ার পর ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে।
—ইউএনবি
আরও পড়ুন
কার দিকে, কেন তেড়ে গিয়েছিলেন তামিম
২২০ চলচ্চিত্র নিয়ে ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব
রংপুরে তারুণ্যের উৎসব-২০২৫ উপলক্ষ্যে ব্যাডমিন্টন প্রতিযোগিতার উদ্বোধন