নিজস্ব প্রতিবেদক:
বিবিয়ানা গ্যাস ফিল্ডের মজুদ বর্তমানে নিঃশেষের দিকে এগোচ্ছে। মার্কিন কোম্পানি শেভরন পরিচালিত এই গ্যাস ক্ষেত্র থেকে বর্তমানে জাতীয় গ্রিডে দৈনিক ১ হাজার ২ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে, যা দেশের মোট গ্যাস সরবরাহের ৩৯ শতাংশ। বিবিয়ানা থেকে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ হলে দেশের জ্বালানি ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তা মারাত্মক হুমকির মুখে পড়বে।
বর্তমানে বিবিয়ানায় গ্যাসের প্রাথমিক মজুদ প্রায় ছয় ট্রিলিয়ন ঘনফুট (টিসিএফ) হওয়ার কথা, কিন্তু ইতোমধ্যে উত্তোলন ছয় টিসিএফ ছাড়িয়ে গেছে। শেভরনের পক্ষ থেকে গত বছর মার্কিন সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে জানানো হয় যে, বিবিয়ানায় অতিরিক্ত ৪৮১ বিলিয়ন কিউবিক ফুট (বিসিএফ) গ্যাস মজুদ রয়েছে।
জাতীয় গ্রিডে প্রতিদিন এলএনজি (লিকুইফায়েড ন্যাচারাল গ্যাস) যুক্ত হওয়ার কথা ১ হাজার ১০০ মিলিয়ন ঘনফুট, তবে এলএনজি সম্পূর্ণরূপে আমদানিনির্ভর। বর্তমানে টার্মিনাল দুটি সচল থাকলেও এলএনজির অভাবে সরবরাহ বৃদ্ধি করা সম্ভব হচ্ছে না। এর ফলে দেশটির শিল্প, বিদ্যুৎ ও সার উৎপাদন চাপে পড়েছে।
গ্যাসের প্রাথমিক হিসাব অনুযায়ী, বিবিয়ানায় মোট মজুদের পরিমাণ ৮ হাজার ৩৮৩ বিসিএফ, তবে গ্যাস রিকভারি ফ্যাক্টর অনুযায়ী এর ৭০ শতাংশ উত্তোলনযোগ্য। দেশের গ্যাসের আর কোনো বড় মজুদ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়নি এবং নতুন মজুদ শনাক্তের বিষয়ে কোনো ঘোষণা হয়নি।
শেভরনের ২০২৩ সালের বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিবিয়ানায় গ্যাসের মজুদ ৬ হাজার ২৩৬ বিসিএফ। চলতি বছরের জুন পর্যন্ত ৫ হাজার ৯৭৫ বিসিএফ এবং জুলাই থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে অন্তত ৮৭ বিসিএফ গ্যাস উত্তোলন করা হবে। সব মিলিয়ে চলতি মাস পর্যন্ত ৬ হাজার ৬২ বিসিএফ গ্যাস উত্তোলন হবে। ফলে ফিল্ডটিতে অবশিষ্ট থাকবে ১৭৪ বিসিএফের মতো।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বিবিয়ানায় নতুন কূপ খনন ও উত্তোলনযোগ্য মজুদ নির্ণয় করা জরুরি। যদি সেখানে আরো ১-২ টিসিএফ মজুদ পাওয়া যায়, তবে তা দেশের জ্বালানি খাতের গ্যাস সংকটের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে। তবে জাতীয় গ্রিডে এই মুহূর্তে বিবিয়ানার গ্যাসের কোনো বিকল্প নেই।
বর্তমানে জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ ২ হাজার ৫৯০ মিলিয়ন ঘনফুট, যার মধ্যে বিবিয়ানা ফিল্ডের অংশ ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুটের ওপরে। উৎপাদন ধারাবাহিকভাবে ধরে রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে শেভরন, তবে ভবিষ্যতে উৎপাদন কমে এলে তা দেশের গ্যাস সরবরাহ ব্যবস্থায় বড় সমস্যা তৈরি করতে পারে।
এদিকে, সিলেট অঞ্চলে কাজের পরিধি বাড়াতে ২০২২ সালের অক্টোবরে পেট্রোবাংলার সঙ্গে তিনটি চুক্তি করেছে শেভরন। এর আওতায় কোম্পানিটি বিবিয়ানায় নতুন জায়গা পেয়েছে এবং মৌলভীবাজার ও জালালাবাদ গ্যাস ক্ষেত্রের সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ বাড়িয়েছে।
দেশে গ্যাস সংকট তীব্র হয়ে উঠছে, যার ফলে শিল্প, বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও সার কারখানার উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। বিপাকে পড়েছেন শিল্পোদ্যোক্তারা, বিশেষ করে বৃহৎ শিল্পগুলো, যেখানে গ্যাস সংকটের কারণে উৎপাদন কমে যাচ্ছে।
পেট্রোবাংলার পরিচালক প্রকৌশলী কামরুজ্জামান খান জানান, দুটি এলএনজি টার্মিনালই বর্তমানে সচল, তবে এলএনজির অভাব রয়েছে। আশা করা হচ্ছে, আগামী ৫-৬ অক্টোবর থেকে এলএনজি সরবরাহ বাড়ানো সম্ভব হবে।
এ পরিস্থিতিতে, দ্রুত জ্বালানি সরবরাহ আইন স্থগিত থাকায় এলএনজি আমদানি সহজ হচ্ছে না, যা দেশের জ্বালানি নিরাপত্তার জন্য উদ্বেগের বিষয়।
আরও পড়ুন
স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানি বন্ধ হতে পারে
প্রোগ্রেসিভ লাইফ ইনস্যুরেন্সের শেয়ারদর বেড়েই চলেছে
পুঁজিবাজার সংক্রান্ত সংবাদ মনিটরিং শুরু করবে বিএসইসি