নিজস্ব প্রতিবেদক:
ট্রেনে সংঘবদ্ধ অপরাধীদের দাপট ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। ফলে অনিরাপদ হয়ে উঠছে রেলভ্রমণ। ট্রেনে চুরি, ছিনতাই কিংবা ডাকাতি এখন নিত্য ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। পাশাপাশি ইয়াবা, ফেনসিডিল, গাঁজাসহ বিভিন্ন মাদক পরিবহনের নিরাপদ যানে পরিণত হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, যাত্রীদের নিরাপত্তা এবং অপরাধ নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্টরা কার্যকর কোনো পদক্ষেপ তো গ্রহণ করছেই না, অপরাধী চক্রের সঙ্গে আঁতাত করে যাত্রীবাহী রেল থেকে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য কমানোর পাঁয়তারা চলছে। বাংলাদেশ রেলওয়ে সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দেশের বিভিন্ন রুটে প্রায় ৫শ’ যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল করে। আর ওসব ট্রেনে প্রতিদিন যাতায়াত করে সোয়া ৩ লাখ যাত্রী। বিভিন্ন রুটে চলাচলকারী ১০০টির মতো আন্তনগর ট্রেনে দুই থেকে তিনজন করে রেলওয়ে পুলিশ (জিআরপি) ও রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর (আরএনবি) সদস্য নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত থাকেন। বাকি চার শর মতো মেইল, লোকাল, কমিউটার ট্রেন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য ছাড়া চলছে। ফলে সব ধরনের ট্রেন দিন দিন অপরাধীদের চারণভূমি হয়ে উঠছে। যাত্রাপথে পর্যাপ্ত নিরাপত্তাব্যবস্থা না থাকায় যাত্রীরা প্রতিনিয়তই পড়েন অজ্ঞানপার্টি, মলমপার্টি, ছিনতাইকারী, ডাকাতির কবলে। হচ্ছে মোবাইল ও মূল্যবান জিনিসপত্র চুরি। যাত্রীদের ওপর পাথর নিক্ষেপের মতো ঘটনা এখন নিয়মিতই ঘটছে। আর ছিনতাই কিংবা ডাকাতিতে বাধা দিলে খুনের ঘটনাও ঘটছে অহরহ। রয়েছে হিজড়াদের উৎপাত। শুধু তা-ই নয়, পর্যাপ্ত নিরাপত্তাব্যবস্থা না থাকায় ইয়াবা, ফেনসিডিল, গাঁজাসহ নানা ধরনের মাদক বহনের নিরাপদ বাহনে পরিণত হয়েছে ট্রেন।
অভিযোগ রয়েছে, ট্রেনে সক্রিয় অপরাধী চক্রের সদস্যদের সঙ্গে সখ্য গড়ে উঠেছে ট্রেনের কতিপয় কর্মকর্তা-কর্মচারীর। তাই তারা ট্রেনে নিরাপত্তা বৃদ্ধি না করে উল্টো নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য কমানোর ষড়যন্ত্র করছেন। সূত্র জানায়, সারা দেশের চলন্ত ট্রেনে সংঘবদ্ধ কয়েকটি ছিনতাইকারী চক্র ঘুরে বেড়ায়। তারা সুযোগ পেলেই সর্বস্ব কেড়ে নিয়ে যাত্রীদের ট্রেন থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। তবে লোকাল ও মেইল ট্রেনে সবচেয়ে বেশি এ ধরনের ঘটনা হয়। এ ধরনের ঘটনাপ্রবণ এলাকার মধ্যে রয়েছে রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলীয় জেলার কমলাপুর থেকে গাজীপুর, ভৈরব, কিশোরগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা, নারায়ণগঞ্জ, ময়মনসিংহ এবং পশ্চিমাঞ্চলীয় জেলার সান্তাহার ও পার্বতীপুর। ওসব এলাকায় চলাচলকারী ট্রেনগুলোয় ছিনতাইয়ের ঘটনা বেশি ঘটে।
এ চক্রের সদস্যরা কামরার দরজায় আসা যাত্রীদের গলায় গামছা পেঁচিয়ে টাকাপয়সা নিয়ে ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলে দেয়। এ কাজে তারা সময় নেয় বড়জোর দুই থেকে তিন মিনিট। বিদ্যমান অবস্থায় রেলের যাত্রাপথে নিরাপত্তা সদস্য বৃদ্ধি এখন সময়ের দাবি। দ্রুততম সময়ের মধ্যে রেলে নিরাপত্তাব্যবস্থা বৃদ্ধি করা না হলে ট্রেন আতঙ্কের পরিবহনে পরিণত হবে। এদিকে এ বিষয়ে রেলওয়ে চট্টগ্রাম অঞ্চলের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাছান চৌধুরী জানান, রেলের যাত্রা নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন করতে জিআরপি রাতদিন কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছে।
যাত্রাপথে অপরাধ দমনে অপরাধীদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তারও করা হচ্ছে। অপরাধপ্রবণ এলাকায় জনসচেতনতা বাড়াতে নিয়মিত উঠান-বৈঠকসহ বিভিন্ন কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। অন্যদিকে রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর (আরএনবি) কমান্ড্যান্ট মো. রেজওয়ান উর রহমান জানান, হাতে গোনা কয়েকটি ট্রেনে আমরা যাত্রাপথে নিরাপত্তার দায়িত্বে আছি। ট্রেনে নিরাপত্তায় যত সদস্য আছে, তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। নিরাপত্তার জন্য আরএনবির সদস্যদের উপস্থিতি আরো বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।
আরও পড়ুন
“ভারতীয় মিডিয়ার গুজবে বাংলাদেশে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে”
ডেঙ্গুতে আরও ৫ মৃত্যু, একদিনে হাসপাতালে ৫৭০ রোগী
৯ ডিসেম্বর ড. ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন ২৭ দেশের রাষ্ট্রদূত