December 27, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Monday, November 11th, 2024, 8:22 pm

সন্তান জন্মের পর মুসলমানদের করণীয়

নিজস্ব প্রতিবেদক

সন্তান-সন্ততি আল্লাহর বিশেষ নিয়ামত। সন্তান পৃথিবীতে মানুষের জন্য সৌন্দর্যস্বরূপ। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘ধনৈশ্বর্য ও সন্তান-সন্ততি পার্থিব জীবনের শোভা।’ (সুরা : কাহফ, আয়াত : ৪৬)

ইসলামী শরিয়ত সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর কিছু করণীয় নির্ধারণ করে দিয়েছে, তা নিম্নরূপ—

শোকর আদায় করা : সন্তান যেহেতু নিয়ামত, এ জন্য সর্বপ্রথম কাজ হলো আল্লাহ তাআলার শোকর আদায় করা।

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা মানুষকে কৃতজ্ঞ বান্দা হতে আদেশ করেছেন এবং অকৃতজ্ঞ হতে নিষেধ করেছেন। মহান আল্লাহ বলেন, ‘যদি তোমরা শোকর আদায় করো, তাহলে আমি অবশ্যই তোমাদের আরো বাড়িয়ে দেব, আর যদি তোমরা অকৃতজ্ঞ হও, তাহলে আমার শাস্তি অবশ্যই কঠিন।’
(সুরা : ইবরাহিম, আয়াত : ৭)

ভূমিষ্ঠ সন্তানের জন্য আল্লাহর দরবারে ইবরাহিম (আ.) এভাবে শোকর আদায় করেন, ‘সব প্রশংসা মহান আল্লাহর, যিনি বৃদ্ধ বয়সে আমাকে ইসমাঈল ও ইসহাককে দান করেছেন। নিশ্চয়ই আমার রব দোয়া শ্রবণকারী।

হে আমার রব! আমাকে নামাজ কায়েমকারী বানান এবং আমার বংশধরদের মধ্যে থেকেও। হে আমাদের রব! আমাদের দোয়া কবুল করুন।’
(সুরা : ইবরাহিম, আয়াত : ৩৯-৪০)

এই আয়াত থেকে শোকর আদায়ের পাশাপাশি নবজাতকের জন্য দোয়া করাও প্রমাণিত হয়।

আজান দেওয়া : সন্তান জন্মের পর ডান কানে আজান এবং বাঁ কানে ইকামত দেওয়া সুন্নত।

হোসাইন (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে যার সন্তান হয়, সে যেন ডান কানে আজান এবং বাঁ কানে ইকামত দেয়।’
(শুআবুল ইমান, হাদিস : ৮৬১৯)

এ ছাড়া মহানবী (সা.) হজরত হাসান (রা.)-এর কানে আজান দিয়েছেন বলে হাদিসে বর্ণিত হয়েছে।

তাহনিক করানো : তাহনিক অর্থ হলো, খেজুর চিবিয়ে নরম করে নবজাতকের মুখে দেওয়া। খেজুর না থাকলে মধু কিংবা মিষ্টিজাতীয় বস্তু দ্বারাও তাহনিক করানো যায়। আবু মুসা আশআরি (রা.) বলেন, ‘আমার একটি ছেলে জন্ম হয়।

আমি তাকে রাসুলুল্লাহ (সা.) এর কাছে নিয়ে আসি। তিনি তার নাম রাখেন ইবরাহিম এবং তাকে খেজুর দিয়ে তাহনিক করান।’
(সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৫৭৩৯)

আকিকা করা : সন্তান জন্মের সপ্তম দিনে আকিকা করা মুস্তাহাব। ছেলেসন্তানের পক্ষ থেকে দুটি এবং মেয়েসন্তানের পক্ষ থেকে একটি বকরি আকিকা করতে হয়। আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) বলেন, ‘ছেলের জন্য দুটি সমবয়সী ছাগল এবং মেয়ের জন্য একটি ছাগল আকিকা করতে রাসুলুল্লাহ (সা.) তাদের আদেশ করেছেন।’

(জামে তিরমিজি, হাদিস : ১৫১৯)

মাথা মুণ্ডন করা : বাচ্চা জন্মের সপ্তম দিনে মাথা মুণ্ডন করা ও চুলের সমপরিমাণ স্বর্ণ বা রুপা সদকা করা মুস্তাহাব। আলী (রা.) বলেন, ‘একটি বকরি দ্বারা রাসুলুল্লাহ (সা.) হাসান (রা.)-এর আকিকা করেন এবং বলেন, হে ফাতিমা! তার মাথা মুণ্ডন করে দাও এবং তার চুলের সমপরিমাণ ওজনের রুপা দান করে দাও।’

(জামে তিরমিজি, হাদিস : ১৫১৯)

সুন্দর নাম রাখা : সন্তানের ভালো নাম রাখা অতি গুরুত্বপূর্ণ। কেননা বিচার দিবসে মানুষকে নিজের নাম ও বাবার নাম ধরে ডাকা হবে। নাম যদি খারাপ হয়, তাহলে সেদিন সে হাশরবাসীর সামনে লজ্জিত হবে। হজরত আবু দারদা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘কিয়ামত দিবসে তোমাদেরকে তোমাদের পিতাদের নাম ধরে ডাকা হবে। তাই তোমরা তোমাদের সুন্দর নামকরণ করো।’

(সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ৪৯৪৮)

উত্তম শিক্ষায় শিক্ষিত করা : সন্তানকে উত্তম শিক্ষায় শিক্ষিত করা এবং আদব-কায়দা শিক্ষা দেওয়া মা-বাবার দায়িত্ব ও কর্তব্য। শিশুদের শিক্ষার ব্যাপারে ইসলামই সবচেয়ে বেশি গুরুত্বারোপ করেছে। কোরআনের প্রথম ঘোষণাই ছিল ‘ইকরা’ (পড়ুন)। আনাস ইবনে মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমরা সন্তানদের আদর-স্নেহ করো এবং তাদের সুন্দর আদব-কায়দা শিক্ষা দাও।’

(সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৩৬৭১)

মহান আল্লাহ আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।