এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (এডিবি) ভাইস প্রেসিডেন্ট ইংমিং ইয়াং বলেছেন, বাংলাদেশ কৌশলগতভাবে প্রধান সামুদ্রিক রুটের পাশে অবস্থিত। এটি বাংলাদেশকে বাণিজ্য ও পরিবহনের একটি সম্ভাব্য কেন্দ্রে পরিণত করেছে।
বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম মাছ ও চিংড়ি উৎপাদনকারী উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আগামী ১০-১৫ বছরে বাংলাদেশের সমুদ্র অর্থনীতির আকার দ্বিগুণ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বঙ্গোপসাগর বরাবর বিস্তৃত উপকূলরেখা বাংলাদেশের সমুদ্র অর্থনীতি সামগ্রিক প্রবৃদ্ধির জন্য গুরুত্বপূর্ণ।’
এডিবির মধ্য ও পশ্চিম এশিয়া এবং দক্ষিণ এশিয়া বিভাগের কার্যক্রম পরিচালনার দায়িত্বে থাকা ইংমিং ইয়াং বলেন, ‘সমুদ্র বাণিজ্য সম্পর্কিত অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড জোরদারের জন্য বন্দর, শিপিং অবকাঠামো ও লজিস্টিক উন্নয়ন জরুরি।’
‘সামুদ্রিক বাতাস, ঢেউ ও জোয়ার থেকে নবায়নযোগ্য শক্তি উৎপাদনও দেশটির জন্য ভালো সুযোগ।’
অর্থনৈতিক উন্নয়নে ৩০ বছরেরও বেশি কাজের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ইয়াং বলেন, ‘বাংলাদেশের উকূলীয় এলাকায় পর্যটন বিকাশের ভালো সম্ভাবনা রয়েছে। পর্যটনের সর্বাধিক সুফল পেতে টেকসই পর্যটন চর্চার পাশাপাশি উপকূলীয় অঞ্চলে অবকাঠামোগত উন্নয়নও অপরিহার্য।’
এডিবি বিভিন্ন অর্থায়ন পদ্ধতির মাধ্যমে বাংলাদেশের অর্থনীতির এসব দিক উন্নয়নে সহায়তা করতে পারে এবং যথাযথ নীতিগত পদক্ষেপ নিতে পারে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
এডিবি ‘ন্যাচারাল ক্যাপিটাল ফান্ড’ ও ‘নেচার সল্যুশনস ফাইন্যান্স হাব’-এর মতো নতুন অর্থায়ন পদ্ধতির বিকাশ করছে জানিয়ে তিনি বলেন, এগুলো সমুদ্র অর্থনীতির অন্তর্ভুক্ত প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণ প্রকল্পগুলোকে তহবিল দেওয়ার পাশাপাশি ক্রাউড-ইন মূলধন সরবরাহ করতে চায়।
ইয়াং বলেন, ‘আমরা ২০২৫ থেকে ২০২৭ সাল পর্যন্ত তিন বছরে দেড় বিলিয়ন ডলারের একটি পাইপলাইন তৈরি করেছি, যার মধ্যে উপকূলীয় স্থিতিস্থাপকতা, জলাভূমি ব্যবস্থাপনা ও নদী ব্যবস্থাপনাসহ সমুদ্র অর্থনীতির বিভিন্ন দিক অন্তর্ভুক্ত থাকবে।’
সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি এবং চরম আবহাওয়াসহ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের কারণে বাংলাদেশ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।
এ বিষয়ে এডিবি ভাইস প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘এডিবির এই সহায়তা প্রকল্প একটি টেকসই সমুদ্র অর্থনীতি গড়ে তুলতে প্রচেষ্টা চালাবে, যা জলবায়ু পরিবর্তনের স্থিতিস্থাপকতা ও অভিযোজন গড়ে তুলবে।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাংলাদেশকে সহায়তা করতে এডিবির বিভিন্ন সমাধানের পথ রয়েছে। তথ্যগত অংশীদার স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে ‘ন্যাচারাল ক্যাপিটাল ল্যাব’ প্রাকৃতিক সম্পদের মূল্যায়ন এবং হিসাব পরিচালনা করছে। তারা পাশাপাশি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে উপকূলীয় বাস্তুতন্ত্রের অবদানের মানচিত্রও তৈরি করতে পারে। বিজ্ঞানভিত্তিক পদ্ধতিগুলো এই বাস্তুতন্ত্রে বিনিয়োগের জন্য উপযুক্ত ক্ষেত্র চিহ্নিত করবে।’
ইয়াং বলেন, ‘আমরা নেদারল্যান্ডস দূতাবাস, ইন্টারন্যাশনাল ফান্ড ফর এগ্রিকালচার ডেভেলপমেন্ট এবং বিশ্বব্যাংকের মতো সংস্থাগুলোর সঙ্গে নিবিড়ভাবে আলোচনা করছি, যাতে অংশীদারত্বের সুযোগ ও সমন্বয় গড়ে তোলা যায়।’
সার্বভৌম অর্থায়ন সহায়তার সুযোগ কাজে লাগাতে বেসরকারি খাত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে জানান তিনি।
সমুদ্র অর্থনীতি কেন বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, তা ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, ‘সমুদ্র অর্থনীতি বাংলাদেশকে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান, মৎস্য চাষ ও অ্যাকুয়াকালচার, শিপিং ও বন্দর উন্নয়ন, সামাজিক গুরুত্ব, পরিবেশগত ও সামাজিক সুবিধা এবং কৌশলগত জাতীয় গুরুত্বসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে লাভবান করছে।’
‘বাংলাদেশের মতো দেশের জিডিপিতে অবদান রাখতে মৎস্য চাষ, অ্যাকুয়াকালচার ও জাহাজ চলাচলের মতো খাত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। খাদ্য নিরাপত্তা, কর্মসংস্থান ও রপ্তানি আয়ে অবদান রেখে মৎস্য চাষ ও অ্যাকুয়াকালচার বাংলাদেশের সমুদ্র অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।’
তিনি বলেন, ‘এই খাত দেশের ১৩ লাখের বেশি মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে জিডিপিতে প্রায় ৩ দশমিক ৫ শতাংশ অবদান রাখে। বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ মৎস্য উৎপাদনকারী দেশ। ২০১৯-২০ অর্থবছরে দেশে মোট মৎস্য উৎপাদন হয়েছে ৪ দশমিক ৩৮ মিলিয়ন টন।’
বাংলাদেশের সমুদ্র পরিবহন খাত আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনটি প্রধান সমুদ্রবন্দর-চট্টগ্রাম, মোংলা ও পায়রা দেশের বাণিজ্যের ৯০ শতাংশের বেশি পরিচালনা করে। এই খাতটি বাংলাদেশকে বিশ্ববাজারের সঙ্গে যুক্ত করতে এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
তবে প্রতিযোগিতা ও স্থায়িত্ব বাড়াতে বন্দরের অবকাঠামো ও কার্যক্রমে আধুনিকায়ন ও দক্ষতা উন্নয়ন প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।
ইয়াং বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি তৈরি পোশাক শিল্পের ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল। প্রায় ৪০ লাখ লোকের কর্মসংস্থান করেছে এই শিল্প, যার ৬০ শতাংশই নারী। দেশীয় অর্থনীতিকে জ্বালানি জোগালেও এই ধরনের একক-উৎস নির্ভরতা দেশের অর্থনীতিতে ঝুঁকি তৈরি করে। কোভিড মহামারির সময় বিষয়টি স্পষ্টভাবে দেখা গেছে। তাই জীবিকার বহুমুখীকরণের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে, যা সমুদ্র অর্থনীতির পর্যটন, মৎস্য ও অ্যাকুয়াকালচারের মাধ্যমে সরবরাহ হতে পারে।
তিনি বলেন, এ ছাড়াও বাংলাদেশের উপকূলীয় সম্প্রদায়ের সমুদ্রের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক রয়েছে। মাছ ধরাই তাদের জীবিকা ও সাংস্কৃতিক পরিচয়।
সামুদ্রিক সম্পদের টেকসই ব্যবস্থাপনা জীববৈচিত্র্য সুরক্ষা নিশ্চিত করে। সেইসঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় সহায়তা করার পাশাপাশি উপকূলীয় প্রায় সাড়ে ৩ কোটি মানুষের জীবিকা ও কল্যাণে সহযোগিতা করে।
তিনি আরও বলেন, দেশের অর্থনৈতিক নিরাপত্তা ও পরিবেশ সংরক্ষণ বাড়াতে টেকসই সম্পদের ব্যবহার, অবকাঠামো উন্নয়ন ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ওপর গুরুত্বারোপ করে জাতীয় কৌশলে সমুদ্র অর্থনীতিকে একীভূত করেছে বাংলাদেশ সরকার।
—–ইউএনবি
আরও পড়ুন
কার দিকে, কেন তেড়ে গিয়েছিলেন তামিম
শিল্পে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি ও ৪৩ টি পণ্যের শুল্কহার বৃদ্ধি নিয়ে ঢাকা চেম্বারের উদ্বেগ
২০২৪ সালে ৪০ কোটি টাকার বীমাদাবি প্রদান করলো প্রগ্রেসিভ লাইফ ইনসিওরেন্স