December 4, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Wednesday, September 13th, 2023, 7:04 pm

৫০ বছরেও হয়নি সেতু

৫০ বছর ধরে নানা সময় জনপ্রতিনিধিরা প্রতিশ্রুতি দিলেও নড়াইল সদর উপজেলার কাজলা নদীর উপর নির্মাণ করা হয়নি একটি সেতু। ৮০ মিটার প্রশস্ত এ নদীতে কোনো সেতু না থাকায় তিন ইউনিয়নের ৫০ হাজার মানুষ রশি টেনে নৌকার মাধ্যমে নদী পারাপার হচ্ছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নড়াইল শহর থেকে মাত্র পাঁচ কিলোমিটার দূরে মুলিয়া বাজার। এ বাজারের পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে কাজলা নদী।

প্রতিদিন এই নদী পার হয়ে মুলিয়া বাজার ও নড়াইল শহরে আসা-যাওয়া করতে হয় মুলিয়া, শেখহাটি, তুলারামপুর ইউনিয়নের অন্তত ৫০ হাজার মানুষকে। একটি মাত্র নৌকা দিয়ে এপার-ওপার রশি বেঁধে সেই রশি টেনে পার হতে হয় নারী, পুরুষ, শিশু, বৃদ্ধ থেকে শুরু করে সব বয়সের মানুষের।

বিভিন্ন সময় জনপ্রতিনিধিসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা নদীতে সেতু নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি। ফলে এলাকাবাসী পড়েছেন চরম ভোগান্তিতে। শুধু আসা-যাওয়ার সমস্যাই নয় ব্যবসা-বাণিজ্য, কৃষি পণ্যসহ আর্থিক ক্ষতির শিকার হচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা।

মুলিয়া গ্রামের সুজিত বিশ্বাস বলেন, মুলিয়া বাজার থেকে নড়াইল শহরের দূরত্ব মাত্র ৫ কিলোমিটার হলেও সেতু না থাকায় ১৫-১৬ কিলোমিটার ঘুরে শহরে আসতে হয়। বারবার আশ্বাস দিলেও কেন সেতু নির্মাণ হচ্ছে না, এটা বুঝতে পারছি না।

দেবভোগ গ্রামের রেমো শীল জানান, সারা জীবন আমাদের বাবা-দাদারা রশি টেনে নৌকা দিয়ে নদী পার হয়েছেন। এখন আমরাও রশি টেনে পার হই। এই দুর্ভোগ যে কবে শেষ হবে, সেটা কেউ বলতে পারে না।

একই এলাকার রমেশ সাহা বলেন, সেতু না থাকায় বেশি দুর্ভোগে পড়তে হয় রোগীদের। ঘাটে নৌকার জন্য অপেক্ষা করে পার হতে দেরি হওয়া গর্ভবতী মায়ের মৃত্যুও হয়েছে এই ঘাটে।

পানতিতা গ্রামের সবুজ বিশ্বাস বলেন, রাত ১০টা বাজলে ভোগান্তি বাড়ে। তখন ঘণ্টার পর ঘণ্টা ঘাটে এসে নৌকার জন্য অপেক্ষা করতে হয়। ওই পার থেকে কেউ এলে তারপর নৌকা পাওয়া যায়।

ব্যবসায়ী রতন হালদার বলেন, সেতু না থাকায় প্রতি ট্রাক মাল আনতে ১ হাজার থেকে দেড় হাজার টাকা বেশি দিতে হয়। ২০ বছর ধরে শুনে আসছি এই নদীতে সেতু হবে। কিন্তু বাস্তবে সেতু নির্মাণের কোনো আলামত দেখছি না। সেতু না থাকায় আমার মতো শত শত ব্যবসায়ী আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

মুলিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী মুক্তি বিশ্বাস জানায়, প্রতিদিন তাদের তিন থেকে চারবার রশি টেনে নৌকা পারাপার হতে হয়। এতে তার মতো শত শত ছাত্রছাত্রীর দুই থেকে তিন ঘণ্টা নদীর পাড়ে বসে থেকে সময় নষ্ট হয়।

শিক্ষক সসিম কুমার জানান, এলাকাটিতে ভুক্তভোগী অন্তত ৮ হাজার শিক্ষার্থী রয়েছে যারা প্রতিনিয়ত মুলিয়া ও নড়াইল শহরের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া করে। সেতু না থানায় শিক্ষার্থীরা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। দ্রুত সেতু নির্মাণ করার দাবি জানান তিনি।

এ ব্যাপারে মূলিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রবীন্দ্রনাথ রায় বলেন, প্রতিদিন এই ঘাট দিয়ে ৮ থেকে ১০ হাজার মানুষ পারাপার হয়। ১৫ থেকে ২০ গ্রামের অন্তত ৬০ হাজার মানুষ প্রায় বছর ধরে এভাবে রশি টেনে নদী পার হচ্ছেন। এই ঘাটে একটি সেতু নির্মাণ করা খুবই জরুরি। দ্রুত এখানে সেতু নির্মাণের জোর দাবি জানাচ্ছি।

নড়াইল এলজিইডি নির্বাহী প্রকৌশলী বিশ্বজিৎ কুমার কুন্ডু বলেন, নদীটি মাত্র ৮০ মিটার প্রশস্ত হলেও এখানে ৪০০ মিটার সেতু নির্মাণ করার পরিকল্পনা রয়েছে। ছোট সেতু নির্মাণ করা হলে পাশের মুলিয়া বাজারের ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তখন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাঙা পড়বে। সেজন্য একটু বড় করে সেতু নির্মাণ করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। আশা করি দ্রুত সেতুটির নির্মাণকাজ শুরু হবে।

—-ইউএনবি