অনলাইন ডেস্ক :
২২ বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রে ঘটেছিল একটি নারকীয় ঘটনা। তখন থেকেই বিশ্বজুড়ে নতুন করে জন্ম নেয় অবিশ্বাস, ভয় ও ক্রোধ। সারা বিশ্ব নতুন করে ভাবতে শুরু করে। দিনটি ছিল ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার। সেদিন বিশ্ববাসী দেখে একটি বীভৎস ভোর। একটি আস্ত বিমান যুক্তরাষ্ট্রের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের ভেতরে দিয়ে ঢুকে হামলা চালায়। এ ঘটনার ৬০ বছর আগে জাপান পার্ল হারবারে হামলা হয়েছিল। সেই হামলার পর যুক্তরাষ্ট্র প্রথম ভয়াবহ হামলার সাক্ষী হয়। প্রথম হামলার পরেই আরেকটি যাত্রীবাহী বিমান দ্বিতীয় ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে আঘাত হানে। তারপর তৃতীয় বিমানটি মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগনে হামলা চালায়। প্রতিরক্ষা দফরে আঘাত হানার পরপরই আকাশসীমা বন্ধ করে দেয় ওয়াশিংটন।
কয়েক মিনিট পরে ইউনাইটেড এয়ারলাইন্স ফ্লাইট ৯৩-এর যাত্রীরা নিজেদেরকে বাঁচানোর জন্য প্রতিরোধ করে। তারা বিমানটির নিয়ন্ত্রণ নিতে ককপিটে গেলে সম্ভব হয়নি। ধস্তাধস্তির কারণে ছিনতাইকারীরা বিমানটিকে বেশি দূর নিয়ে যেতে পারেনি। ফলে পাঁচ মিনিটের মধ্যে পেনসিলভানিয়ার শ্যাঙ্কসভিলের একটি খালি মাঠে আছড়ে পড়ে বিমানটি। ঘটনাস্থলে সব আরোহী নিহত হন। সেদিনের ঘটনায় নিউ ইয়র্ক সিটিতে শত শত মানুষ বাঁচার জন্য নর্থ টাওয়ার থেকে লাফিয়ে পড়ে। বাঁচবে তো দূরের কথা আরও মৃত্যু মুখে ঝাঁপিয়ে পড়ে। সেই দৃশ্য মানবমনে হতাশা ও ক্ষত অনুভূতির জন্ম দিয়েছিল।
ম্যানহাটনে দুটি ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার টাওয়ার ধসে পড়ায় বিশৃঙ্খলা আরও বেড়ে গিয়েছিল। আকাশজুড়ে বিষাক্ত ধোঁয়া ও ছাই ছড়িয়ে পড়ে। আশপাশে যারা ছিল তারাও স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ে। ওই ঘটনায় প্রায় তিন হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। হাজার হাজার মানুষ আহত হয়েছে। প্রায় চার লাখ মানুষ কার্সিনোজেনিক ধূলিকণার কবলে পড়েছিল। এই পরিস্থিতিতে অগ্নিনির্বাপক কর্মী ও পুলিশ জীবিতদের উদ্ধারে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল।
সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে বিশ্বযুদ্ধ
৯/১১ হামলার পর যুক্তরাষ্ট্র আল-কায়েদা ও সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোকে নির্মূল করতে উঠে পড়ে লাগে। শুরু হয় সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে বিশ্বযুদ্ধ। তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ হামলার ৯ দিন পরে বলেন, ‘আপনি আমাদের সঙ্গে থাকবেন, না হয় সন্ত্রাসীদের সঙ্গে থাকবেন। তিনি আরও বলেন, ‘আজ থেকে যে জাঁতি সন্ত্রাসবাদকে আশ্রয় দেবে, যুক্তরাষ্ট্র তাকে শত্রু গণ্য করবে। আমাদের জীবনযাত্রার জন্য হুমকি হিসেবে সন্ত্রাসবাদকে বন্ধ করতে হবে।’ এরপরই সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়েছিল। আফগানিস্তানে তালেবানদের ক্ষমতাচ্যুত করতে মার্কিন ও মিত্র বাহিনীর মাত্র দুই মাস সময় লেগেছিল। কিন্তু ৯/১১ হামলার মাস্টারমাইন্ড ওসামা বিন লাদেনকে ধরতে পারেনি। পরবর্তীতে পাকিস্তানে তাকে অভিযান চালিয়ে হত্যার দাবি করে।
আফগানিস্তানে হামলার প্রায় আড়াই বছর পর প্রতিরক্ষা সচিব ডোনাল্ড রামসফেল্ড যুদ্ধ অভিযানের সমাপ্তি ঘোষণা করেন। তারপরও যুক্তরাষ্ট্র ১৮ বছর আফগানিস্তান ছাড়েনি। ২০২১ সালের আগস্টে রাজধানীতে কাবুলে প্রবেশ করে তালেবান। ক্ষমতা দখল করে মার্কিন বাহিনীকে দেশ ত্যাগ করতে বাধ্য করে। আফগানিস্তান যুদ্ধ শুরুর এক দশক পর বিন লাদেন নিহত হয়েছেন। ১০ বছর পর অবশেষে লাদেনকে ধরেছিল। তাকে সীমান্তের ওপারে পাকিস্তানের শহর অ্যাবোটাবাদে খুঁজে পাওয়া যায়। ঝটিকা অভিযানে হত্যা করেছিল মার্কিন বাহিনী।
এখানেই শেষ নয়,তারপর উয়েপেন অব মাস ডেস্ট্রাকশন থাকার অজুহাতে মার্কিন নেতৃত্বাধীন বাহিনী ২০০৩ সালে ইরাকের সাদ্দাম হোসেনকে উৎখাত করে। সাদ্দাম হোসেনের পতনের পর ইরাকে উঠে আসে ইসলামিক স্টেট (আইএস)। ইরাকে তারা স্থাপন করে খিলাফত। ফলে আবারও মার্কিন বাহিনীকে নামতে হয় যুদ্ধে। আজ অবধি মার্কিন বাহিনী আইএসআইএস ও আল-কায়েদা নিয়ন্ত্রণে কাজ করে যাচ্ছে। শুরু হয় আইএস ও যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধ। যখন খিলাফত ঘোষণা করে,তখন সারা বিশ্ব থেকে অনুগামীদের আকৃষ্ট হয়েছিল। সে জোয়ারে ইরাক ও সিরিয়া আসে তারা। ৯/১১’র টুইন টাওয়ার হামলার সঙ্গে জড়িত খালিদ মোহাম্মদ শেখসহ গুয়ানতানামো কারাগারে বন্দি করা হয় পাঁচ জনকে।
এই আল কায়েদা সদস্যকে গুয়ানাতানামোতেই বিচারের মুখোমুখি করা হয়েছিল। তাদের বিরুদ্ধে এই হামলা ছাড়াও বিভিন্ন অভিযোগ আনা হয়েছিল। অভিযোগ প্রমাণিত হলে অভিযুক্তদের মৃত্যুদ- দেওয়া হবে বলে জানায় পেন্টাগন। বন্দিশিবিরে খালিদ শেখ মার্কিনিদের হাতে ব্যাপক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। সূত্র: এএ ওয়ার্ড
আরও পড়ুন
চেন্নাইয়ে বাংলাদেশ-বিরোধী বিক্ষোভ, গ্রেফতার ৫০০
সীমান্ত বন্ধ হলে বড় ক্ষতি ভারতের, ঝুঁকিতে লাখো মানুষের জীবিকা
আগরতলায় বাংলাদেশ মিশনে হামলার ঘটনায় তিন পুলিশ সাময়িক বরখাস্ত, গ্রেপ্তার ৭