মোজাহেদুল ইসলাম ঢেউ
মোটরযান এর কাগজপত্র ও ফিটনেস হালনাগাদে জরিমানা মওকুফ করেছে সরকার। তারপরও কাঙ্ক্ষিত সাড়া দিচ্ছেন না গাড়ির মালিকরা। যে কারণে রাস্তায় প্রতিনিয়ত কাগজ মেয়াদোত্তীর্ণ গাড়ির সংখ্যা বাড়ছে।
সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জরিমানা মওকুফ করা হলেও অতিরিক্ত করের কারণে গাড়ির মালিকরা কাগজপত্র হালনাগাদ করছেন না।
মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সিসিভেদে (ইঞ্জিন ক্ষমতা) একটি গাড়ির কাগজপত্র হালনাগাদ করতে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষকে (বিআরটিএ) নির্ধারিত যে ফি দিতে হয়, তার চেয়ে প্রায় পাঁচগুণ অগ্রিম কর দিতে হয়। আবার যদি মালিকের একাধিক গাড়ি থাকে তাহলে যোগ হবে পরিবেশ সারচার্জ। অগ্রিম কর আর পরিবেশ সারচার্জ মিলে বিশাল অঙ্কের ট্যাক্স জমা দিতে হয় তাদের। এ কারণে বিআরটিএ জরিমানা মওকুফের সুযোগ দিলেও করের ভয়ে গাড়ির মালিকরা কাগজপত্র হালনাগাদে উৎসাহ দেখাচ্ছেন না।
সমস্যা সমাধানে মাত্র দুই বছরের (চলতি ও এর আগের অর্থবছর) অগ্রিম কর আদায়ের ব্যবস্থা করতে মন্ত্রণালয় থেকে সম্প্রতি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) চিঠি দেওয়া হয়েছে। সেখানে বাকি অর্থবছরগুলোর বকেয়া কর মোটরযান মালিকের রিটার্ন দাখিলের সময় আদায়ের ব্যবস্থা করতে অনুরোধ করা হয়েছে। এতে এনবিআরের অগ্রিম আয়কর, ভ্যাট, পরিবেশ সারচার্জ, সম্পূরক শুল্ক ইত্যাদি আদায় যেমন বাড়বে, তেমনি মোটরযান কর ও ফি উল্লেখযোগ্য পরিমাণে আদায় হবে এবং ফিটনেসবিহীন মোটরযানের সংখ্যা কমবে।
এনবিআর সূত্রে জানা যায়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বিআরটিএ মোটরযান কর ও ফি হিসেবে দুই হাজার ২১৪ কোটি টাকা এবং এনবিআর নির্ধারিত কর হিসেবে দুই হাজার ৫০৬ কোটি টাকা আদায় করেছে। বিআরটিএ’র সফটওয়্যারের মাধ্যমে এ দুই ধরনের ফি ও কর আদায় করা হয়। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছর থেকে একই সফটওয়্যারে এনবিআরের পরিবেশ সারচার্জ আদায় শুরু হয়েছে।
সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের চিঠি ও এনবিআরের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, প্রতিটি গাড়ির কাগজপত্র হালনাগাদ বা নবায়নে বিআরটিএ’র কর ও ফি’র চেয়ে এনবিআর নির্ধারিত কর প্রায় পাঁচ গুণ বেশি।
রফিকুল ইসলাম নামক জনৈক এক ব্যক্তির নামে থাকা একটি ১৫০০ সিসির গাড়ির কাগজপত্র যদি নবায়ন করতে হয়, তাকে বিআরটিএ’র ফি (ফিটনেস ফি ১৬০৫ টাকা ও সড়ক কর ৫৮০২ টাকা) হিসেবে মোট দিতে হয় সাত হাজার ৪০৭ টাকা। সেখানে তাকে ওই গাড়ির জন্য এনবিআর নির্ধারিত অগ্রিম কর দিতে হয় ২৫ হাজার টাকা। ফলে বিআরটিএ’র ফি ও এনবিআর নির্ধারিত অগ্রিম করসহ এ গাড়ি নবায়নে তাকে পরিশোধ করতে হয় ৩২ হাজার ৪০৭ টাকা।
আবার সেই রফিকুল ইসলামের ১৫০০ সিসির গাড়ির সঙ্গে যদি আর একটি ২০০০ সিসির জিপ থাকে, তাহলে তাকে পরিবেশ সারচার্জ দিতে হয়। কারণ, একাধিক গাড়ি থাকলে পরিবেশ সারচার্জ দেওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। রফিকের ১৫০০ সিসির সঙ্গে ২০০০ সিসির জিপের কাগজপত্র নবায়ন করার সময় তাকে বিআরটিএ’র ফি (প্রতিটির ফিটনেস ফি ১৬০৫ টাকা ও সড়ক কর ৫৮০২ টাকা) হিসেবে দিতে হবে মোট ১৪ হাজার ৮১৪ টাকা। সঙ্গে দুটি গাড়িতে অগ্রিম কর এক লাখ টাকা ও পরিবেশ সারচার্জ ৫০ হাজার টাকাসহ মোট কর দিতে হয় এক লাখ ৬৪ হাজার ৮১৪ টাকা। অর্থাৎ রফিকুল ইসলামকে একটি গাড়িতে বিআরটিএ’র ফি হিসেবে ৩২ হাজার ৪০৭ টাকা আর দুটি গাড়ি থাকলে এনবিআর নির্ধারিত কর হিসেবে দিতে হচ্ছে এক লাখ ৬৪ হাজার ৮১৪ টাকা। এক্ষেত্রে একটি গাড়ির জন্য যে পরিমাণ অর্থ পরিশোধ করতে হয় তার চেয়ে পাঁচ গুণ বেশি অর্থ পরিশোধ করতে হয় গাড়ি মালিককে।
সার্বিক বিষয় বিবেচনা করে ‘মোটরযান মালিকদের উৎসাহ’ দিতে এনবিআরের কাছে দুই অর্থবছরের কর আদায়ের একটি প্রস্তাবনা দিয়েছে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়। তাদের প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, খেলাপি মোটরযান মালিকদের কাগজপত্র নবায়নের ক্ষেত্রে যত বছরের বকেয়া থাকুক না কেন, কাগজপত্র নবায়নের সময় চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছর ও এর আগের এক বছরের (২০২৩-২৪) বকেয়া অগ্রিম কর আদায় করা যেতে পারে। বিআরটিএ’র সফটওয়্যারে এনবিআর এ দুই বছরের কর পরিশোধের সুযোগ দিলে বিপুল সংখ্যক মোটরযান মালিক কাগজপত্র নবায়ন করবেন। আগের অর্থবছরগুলোর বকেয়া অগ্রিম আয়কর মোটরযানের মালিকদের আয়কর রিটার্ন দাখিলের সময় আয়কর অফিস আদায়ের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে। এ ছাড়া ইলেকট্রিক মোটরযানের পরিবেশ সারচার্জ মওকুফ করারও অনুরোধ জানিয়েছে মন্ত্রণালয়।
আরও পড়ুন
নিজেকে ৩ প্রশ্ন করলেন পরীমনি, বললেন প্লিজ ছেড়ে দেন
এস আলম পরিবারের ১৭৫ বিঘা জমি ক্রোক
সবচেয়ে দরিদ্র মাদারীপুর এর মানুষ,ধনী নোয়াখালীর