June 1, 2025

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Saturday, May 17th, 2025, 7:54 pm

অতিরিক্ত পরিশ্রম কি আপনার মস্তিষ্কের ক্ষতি করছে? গবেষণা কী বলে

লাইফস্টাইল ডেস্ক

সারাদিন বাড়ির কাজ, পরিবারের সদস্যদের খেয়াল রাখা, রাস্তায় ট্রাফিক জ্যাম আর অফিসে কাজের চাপ। দিন শেষে শরীর ভেঙে ক্লান্তি ভর করে। এমন নিশ্ছিদ্র রুটিনে নিজের জন্য সময় বের করা যেন অসম্ভব মনে হয়। আবার কাজের চাপে কখনও ঘুমের অভাব দেখা দেয়। কিন্তু এই পরিশ্রমের প্রভাব কি শুধু শারীরিক ক্লান্তির মধ্যে সীমাবদ্ধ? না, শারীরিক ক্ষতির পাশাপাশি মস্তিষ্কে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলে অতিরিক্ত পরিশ্রম।

তাই পেশাগতভাবে আপনি কত ঘণ্টা কাজ করছেন, তার ওপর নির্ভর করছে আপনার মস্তিষ্কের গঠন ও পরিবর্তন। নতুন এক গবেষণায় দেখা গেছে, সপ্তাহে ৫২ ঘণ্টার বেশি কাজ করলে মস্তিষ্কের গঠনে পরিবর্তন আসতে পারে। বিশেষ করে আবেগ নিয়ন্ত্রণ, স্মৃতিশক্তি এবং সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য মস্তিষ্কের যে অংশগুলো দায়ী, সেখানেই পরিবর্তনগুলো দেখা গেছে।

অক্যুপেশনাল অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল মেডিসিনের জার্নালে প্রকাশিত গবেষণাটিতে বলা হয়েছে, অতিরিক্ত পরিশ্রমের ফলে ব্যক্তির মস্তিষ্ক এবং মানসিক সুস্থতার ওপর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব পড়তে পারে। দক্ষিণ কোরিয়ার ইয়োনসেই বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের পর্যবেক্ষণ, যারা খুব বেশি পরিশ্রম করেন, তাদের মস্তিষ্কের কিছু অংশে স্পষ্ট পরিবর্তন লক্ষ করা গেছে। পরিবর্তনগুলো সেসব স্থানে, যে অংশগুলো সিদ্ধান্ত নেওয়া এবং অনুভূতি-আবেগের সঙ্গে জড়িত।

মোট ১১০ জন কর্মীকে নিয়ে এই গবেষণাটি করা হয়েছে। যাদের মধ্যে অধিকাংশই স্বাস্থ্যকর্মী বা চিকিৎসক। তাদের মধ্যে ৩২ জন সপ্তাহে ৫২ ঘণ্টার বেশি কাজ করেন ও বাকি ৭৮ জন স্বাভাবিক কর্মঘণ্টা অনুযায়ী কাজ করতেন। গবেষণাটিতে দেখা যায় যে, যারা বেশি সময় কাজ করেন, তাদের মস্তিষ্কের কিছু অংশে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হয়েছে। তাদের মনোযোগ, আবেগনিয়ন্ত্রণ, স্মৃতিশক্তি এবং সমস্যার সমাধানের ক্ষমতার ওপর প্রভাব পড়েছে।

ফ্রন্টাল জাইরাস মস্তিষ্কের একটি অংশ, যা স্মৃতি এবং ভাষা তৈরির সঙ্গে যুক্ত। গবেষণায় মস্তিষ্কের সে অংশে সবচেয়ে বেশি পার্থক্য লক্ষ করা গিয়েছে। এ ছাড়াও সুপিরিয়র ফ্রন্টাল জাইরাসে প্রভাব পড়েছে, যা সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং পরিকল্পনায় সাহায্য করে। আর প্রভাব পড়েছে ইনসুলা অংশে, যেটি আবেগের সঙ্গে বোঝাপড়া করতে এবং নিজের চারপাশের পরিবেশ সম্পর্কে সচেতন থাকার বিষয়ে সাহায্য করে।

আগেও অনেক গবেষণায় লক্ষ করা গেছে যে, অতিরিক্ত পরিশ্রমের ফলে হৃদরোগ ও ডায়াবিটিসের ঝুঁকিও তৈরি হয়। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, অতিরিক্ত খাটনির কারণে প্রতি বছর বিশ্ব জুড়ে ৮ লাখের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়।

তবে একই সঙ্গে গবেষকেরা জানিয়েছেন, এটি একেবারেই ছোট একটি গবেষণা। এখান থেকে এ কথা প্রমাণ হয় না যে মস্তিষ্কের এই বদল বেশিক্ষণ কাজ করার কারণেই হয়েছে। কাজের অভ্যাস মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের উপর কীভাবে প্রভাব ফেলতে পারে, তা পুরোপুরি বোঝার জন্য এই গবেষণার সাহায্য নিয়ে ভবিষ্যতে আরও কাজ হতে পারে।

গবেষণার লেখকেরা বিভিন্নসংস্থা এবং মালিকদের পরামর্শ দিয়েছেন, যেন কর্মঘণ্টা কমানোর বিষয়টি ভেবে দেখা হয়। কারণ কাজ আর ব্যক্তিজীবনের ভারসাম্য স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত জরুরি।