অনলাইন ডেস্ক :
গাজার দুই হাসপাতাল পরিদর্শন করে নির্মম পরিস্থিতি দেখতে পেল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ত্রাণ মিশনের সদস্যরা। মিশনের সদস্যরা জানান, সেখানে না খেতে পেয়ে ধুঁকে ধুঁকে মারা যাচ্ছে শিশুরা । মঙ্গলবার প্রকাশিত বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) প্রধান তেদ্রোস আধানম গেব্রিয়াসুস জানিয়েছেন, গাজার উত্তরাংশের শিশুরা অনাহারে মারা যাচ্ছে। সংস্থাটি রোববার গাজার আল-আওদা ও কামাল আদওয়ান হাসপাতাল পরির্দশন করে সেখানে ‘নির্মম পরিস্থিতি’ দেখেছে বলে তেদ্রোস জানান। অক্টোবরের গাজায় ইসরায়েলের হামলা শুরুর পর থেকে এই প্রথম সেখানে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছেন তারা। তেদ্রোস বলেন, আমরা উত্তর গাজায় নিয়মিত পরিদর্শনের চেষ্টা চালালেও এই উদ্যোগ সফল হয়নি। পরিদর্শনে তিনি যা দেখেছেন তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক পোস্টে তুলে ধরে লিখেছেন, খাবারের অভাবে ১০ শিশুর মৃত্যু হয়েছে আর সেখানে ‘গুরুতর পর্যায়ের অপুষ্টি’ বিরাজমান।
হাসপাতাল ভবনগুলো ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে। সেখানে সংস্থাটির কর্মীরা ‘ভয়াবহ’ পরিস্থিতির মুখে পড়েন বলে উল্লেখ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেয়া এক পোস্টে তিনি জানান, আল-আওদা (হাসপাতালের) পরিস্থিতি ছিল বিশেষভাবে উদ্বেগজনক। কারণ সেখানে একটি ভবন ধ্বংস হয়ে গেছে। উত্তর গাজার একমাত্র শিশু হাসপাতাল কামাল আদওয়ানে রোগীদের ভিড় সামলাতে চিকিৎসাকর্মীরা হিমশিম খাচ্ছেন বলে জানান তেদ্রোস।
প্রসঙ্গত, গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ত্রাণবঞ্চিত উত্তর গাজায় সব মিলিয়ে অন্তত ১৬ শিশু অপুষ্টিজনিত কারণে মারা গেছে। গত সপ্তাহে জাতিসংঘ হুঁশিয়ারি দেয়, হামাস ও ইসরাইলের মধ্যে চলমান যুদ্ধের কারণে তৈরি হওয়া বৈরী পরিস্থিতিতে গাজা উপত্যকায় দুর্ভিক্ষ ‘এড়ানোর উপায় নেই বললেই চলে।’ উত্তর গাজার দুই হাসপাতালে খাবারের ভয়াবহ সংকটের পাশাপাশি তেদ্রোস আরও সতর্ক করেন, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ না থাকায় হাসপাতালে রোগীদের চিকিৎসা বিঘ্নিত হচ্ছে।
বিশেষত শিশু ও প্রাপ্তবয়স্কদের নিবিড় পরিচর্যা ইউনিটে সবসময় বিদ্যুৎ না থাকায় রোগীদের জীবন বিপন্ন হচ্ছে। ডব্লিউএইচও প্রধান আরও জানান, সপ্তাহের শেষ এই মিশনে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা উভয় হাসপাতালে ৯ হাজার ৫০০ লিটার করে জ্বালানি তেল ও কিছু জরুরি চিকিৎসা সামগ্রী দিয়েছে। তবে ‘সবার জীবন বাঁচাতে যতটুকু উপকরণ দরকার, এটা তার একটি সামান্য অংশ মাত্র’ বলেও উল্লেখ করেছেন তিনি।
ইসরাইলের প্রতি ‘নিরাপদে ও নিয়মিত মানবিক ত্রাণ সরবরাহ’ নিশ্চিতের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, বেসামরিক মানুষ, বিশেষত, শিশুরা এবং স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদের জন্য বড় আকারে সহায়তা প্রয়োজন। গাজার সব রোগীর জন্য সবচেয়ে বড় ওষুধ হলো শান্তি ও যুদ্ধবিরতি। এদিকে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে গত ২৪ ঘণ্টায় অন্তত ৯৭ ফিলিস্তিনি নিহত এবং ১২৩ জন আহত হয়েছে।
গাজা শহরের কুয়েত গোলচত্বরে সাহায্যের অপেক্ষায় থাকা ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরাইলি বাহিনীর গুলি চালানোর ভিডিও ধরা পড়েছে সংবাদমাধ্যম আলজাজিরার ক্যামেরায়। দ্বিতীয়বারের মতো এ ঘটনা ঘটাল বর্বর ইসরাইলি বাহিনী। সংবাদমাধ্যম ওয়াফার প্রতিবেদন অনুযায়ী, গাজার দক্ষিণাংশে খান ইউনিসের বাড়িতে ইসরাইলি বিমান হামলায় অন্তত আটজন নিহত হয়েছে। আর গত ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরাইলি হামলায় কমপক্ষে ৩০ হাজার ৬৩১ ফিলিস্তিনি নিহত এবং ৭২ হাজার ৪৩ জন আহত হয়েছে। অন্যদিকে হামাসের হামলায় ইসরাইলে সংশোধিত নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ১৩৯ জনে।
আরও পড়ুন
উড়োজাহাজ বিধ্বস্তে ৩৮ জনের মৃত্যু, আজারবাইজানে রাষ্ট্রীয় শোক পালন
বিশ্বে ক্ষুধার্ত মানুষ বাড়ছে, কমছে ধনী দেশের সাহায্য
গাজায় ইসরায়েলের আগ্রাসন চলছেই, একদিনে নিহত ৫৮