December 27, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Saturday, December 21st, 2024, 8:07 pm

অভ্যুত্থানের স্প্রিট রক্ষা করার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করব : সারজিস আলম

মাসুম বিল্লাহ ইমরান, খুলনা:
জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সারজিস আলম পুলিশের উদ্দেশ্যে বলেন, পুলিশ চাইলে অনেক কিছু ঠিক হয়ে যাওয়া সম্ভব। তাদের প্রভাবটা মাঠ পর্যায়ে সবচেয়ে বেশি। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী অল্প কিছুদিন সহযোগিতার জন্য এসেছে, আবার চলে যাবে। পুরো বাংলাদেশের মাঠ পর্যায়ের আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করার জন্য পুলিশ যে ভূমিকা পালন করতে পারে আর কেউ সেটা পারে না। যাদের কাছে প্রত্যাশা সবচেয়ে বেশি, তাদের কাছে চাওয়াটাও বেশি হয়। আমরা এখনো আপনাদের প্রতি আস্থা হারায়নি, আমরা আস্থাটা রাখতে চাই। কিন্তু আস্থাটা রাখতে পারব কিনা সেটা আপনাদের কাজের মাধ্যমে প্রমাণ করতে হবে।

শুক্রবার (২০ ডিসেম্বর) সকালে খুলনা জেলা শিল্পকলা একাডেমি অডিটোরিয়ামে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন আয়োজিত জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে শহিদ পরিবারের সদস্যদের আর্থিক অনুদান প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

সারজিস আলম বলেন, জেলা পর্যায়ে যে সকল শহীদ পরিবার ও আহত যোদ্ধারা রয়েছেন। জেলা প্রশাসন এবং পুলিশসহ অন্যান্য স্টক হোল্ডাররা মিলে যদি তাদের দায়িত্ব আমরা ভাগ করে নিলে আমাদের জন্য সহজ হয়ে যায়। যোগ্যতা অনুযায়ী শহীদ পরিবার থেকে একজন করে হলেও চাকরির ব্যবস্থা করি, তাহলে আমাদের দায়িত্বগুলো সহজ হয়ে যায়। জীবনের বিনিময় হলেও এই অভ্যুত্থানের স্প্রিট রক্ষা করার জন্য আমরা আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করব।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উদ্দেশ্যে সারজিস আলম বলেছেন, যদি আপনাদের জায়গা থেকে এই দায়িত্বটুকুর ক্ষেত্রে বিন্দু মাত্র গড়ি মসি করেন এই বাংলাদেশে আপনাদের মুখ দেখানো আর কোন পথ থাকবে না।

তিনি বলেন, এই রাষ্ট্রের বিভিন্ন কাঠামোর যারা কর্মকর্তা কর্মচারী রয়েছেন, রাষ্ট্রের কর্মকর্তা কর্মচারী হিসেবে যতটুকু দায়িত্ব পালন করার উচিত ছিল ততটুকু করেনি। একটা ফ্যাসিস্ট দল একটা ফ্যাসিস্ট রেজিম আওয়ামী লীগের হুকুম মতো দায়িত্ব পালন করেছেন। বাংলাদেশের প্রত্যেকটি মানুষের প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ দায় যে বিগত ১৬ বছরে আমরা এরকম একটা স্বৈরাচার সিস্টেমকে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হতে দিয়েছি। রাষ্ট্র কাঠামোর বিভিন্ন ক্ষেত্রে যার যতটুকু পাওয়ার ছিল তার দায়িত্ব ততো বেশি। আমাদের এই অভ্যুত্থান চলাকালীন সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথমে ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা নিশংস একটি হামলা চালায় এবং রংপুর থেকে শুরু করে বিভিন্ন জায়গায় হত্যাযজ্ঞটি শুরু হয়, তখন এই খুনি শেখ হাসিনা ক্ষমতার অপব্যবহার করে। রাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য সবচেয়ে মাঠ পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পুলিশকে ব্যবহার করেছে। বিগত ১৬ বছরেও বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে ব্যবহার করেছে। যারা শেখ হাসিনা দালাল ছিল, তোষামোদকারী ছিল, তারা বেঁচে গিয়েছে। আরেকটা বেঁচে যাওয়ার পদ্ধতি ছিল, হয় আপনাকে নিষ্ক্রিয় দর্শক হতে হবে অথবা দাস হতে হবে। এর বাইরে যদি আপনি কিছু হওয়ার চিন্তা করেন তাহলে আপনাকে হয়রানি করার জন্য মামলা, জেল, জুলুম, গুম, খুন, হত্যা যেভাবে যা কিছু করা যায় সব কিছু করার জন্য বাংলাদেশ পুলিশের মত গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় একটি প্রতিষ্ঠানকে অপব্যবহার করা হয়েছে। এই ক্ষতিটা যতটা না বাংলাদেশ পুলিশের হয়েছে, তার চেয়ে বেশি বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটি হয়েছে। প্রায় আড়াই লক্ষ সদস্যের একটি পরিবার, এই একটি পরিবার যদি চায় এবং পদ অনুযায়ী, শপথ অনুযায়ী তাদের দায়িত্বটুকু রাষ্ট্রের জন্য সঠিকভাবে পালন করে তাহলে যে এই বাংলাদেশের আমরা স্বপ্ন দেখি, প্রত্যাশা করি, সেই বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হওয়ার অর্ধেকের বেশি রাস্তা অটোমেটিক প্রশস্ত হয়ে যায়। কিন্তু বিগত ১৬ বছরে এবং এই অভ্যুত্থানের সময় এই গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রতিষ্ঠানকে অপব্যবহার করা হয়েছে।

সারজিস আলম বলেন, আগস্টে অভুত্থান শেষ হয়েছে, ডিসেম্বর চলে, চার মাস শেষ হয়েছে। এখনো আমরা শহীদ পরিবারের কাছে অসংখ্য অভিযোগ পাই। তারা যে মামলাগুলো করেছে এগুলোকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না। হত্যা মামলার আসামি অনেকে লুকিয়ে বেড়াচ্ছে গোপনে, অনেকে প্রকাশ্যে। অনেকে বিভিন্ন দলের বিভিন্ন ব্যানারে এগিয়ে যুক্ত হচ্ছে, অনেকে টাকার বিনিময়ে উন্মুক্ত হাঁটাচলা করছে। অনেকেই তাদের জায়গা থেকে বিভিন্ন রেফারেন্সের এবং এখনো খুনি হাসিনার দল আওয়ামী লীগের রেফারেন্সে কাজ করে।

পুলিশের উদ্দেশ্যে তিনি আরও বলেন, আমরা বলছি না যে যাকে ইচ্ছা তাকে ধরে আনতে হবে, আওয়ামী লীগের হলেই নিয়ে আসতে হবে, ছাত্রলীগ হলেই নিয়ে আসতে হবে। তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে এই হামলার সাথে, এই রক্তাক্ত ঘটনাগুলো সাথে, হত্যা যজ্ঞের সাথে যারা জড়িত সে যেই পরিচয় এরই হোক না কেন যদি তার বিরুদ্ধে ওই মামলা থাকে, উপযুক্ত প্রমাণ থাকে, দয়া করে আপনাদের দায়িত্ববোধ, কর্তব্যের জায়গা থেকে প্রয়োজনীয় আইনানক ব্যবস্থা গুলো নিন।

সারজিস আলম বলেন, আমরা এই অভ্যুত্থানের সাথে কোনদিনও, জীবন চলে গেলেও বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারিনা। এটা কোনদিনও সম্ভব না।

তিনি বলেন, এখন অনেকেই রয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক, ব্যক্তিগত, গোষ্ঠীগত উদ্দেশ্যে এই অভ্যুত্থানের সাথে সম্পৃক্ত অনেককেই প্রশ্নবিদ্ধ করার নোংরা চেষ্টা চালাচ্ছে। অনেক রাজনৈতিক দল জুলাইয়ের ৩০ তারিখ পর্যন্ত বলেছিল আমরা এখনো সিদ্ধান্ত নিতে পারিনি, আমরা ফ্যাসিস্ট হাসিনার পতনের সাথে একমত হবো কিনা। এই সংগ্রামে যুক্ত হব কিনা। তারা যদি বড় বড় গলায় আমাদের সামনে বলে এই গণঅভ্যুত্থানে তারাই সামনের সারিতে ছিল, আমরা শুধু অংশগ্রহণ করেছি। তাদেরকে শুধু আমরা বলতে চাই বড় গলায় কথা বলার আগে নিজেরা বিবেকবোধের জায়গা থেকে একটি জিনিস শুধু চিন্তা করুন জুলাই এর পুরো মাসে আপনাদের অবস্থানটা কি ছিল। জুলাইয়ের পুরো মাসে আপনাদের কথা বলার জায়গা গুলো কেমন ছিল। কথা বলার জায়গা গুলো কেমন ছিল। ব্লেইম গেম দিয়ে আমাদের আত্মবিশ্বাসকে নষ্ট করতে পারবেন না।

অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন খুলনা বিভাগীয় কমিশনার মোঃ ফিরোজ সরকার, কেএমপি কমিশনার জুলফিকার আলী হায়দার, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক তারিকুল ইসলাম, আশশেফা খাতুন, পুলিশ সুপার টিএম মোশাররফ হোসেন, খুলনার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের কেন্দ্রীয় নেতা মোঃ ওয়াহিদুজ্জামান প্রমুখ।

জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে খুলনা বিভাগের ৫৮ শহীদ পরিবারকে
দুই কোটি ৯০ লাখ টাকার চেক প্রদান করা হয়। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনে প্রধান নির্বাহী মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ।