October 6, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Wednesday, October 5th, 2022, 8:03 pm

অস্ট্রেলিয়ায় বিদেশি কর্মীর জন্য হাহাকার

অনলাইন ডেস্ক :

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি এশিয়ার দেশগুলোতে কখনো কখনো ব্যাকপ্যাকারদের অভিশাপ বলেই মনে করা হয়। বাছবিচারহীন সাশ্রয়ী জীবনযাপনে অভ্যস্ত এ ধরনের ভ্রমণকারীরা ফূর্তি করেন বেশি, খরচ করেন কম। কিন্তু এই ব্যাকপ্যাকারদেরই আশীর্বাদ বলে মনে করে অস্ট্রেলিয়া। এরা দেশটির সৈকতে বালির ওপর বসে সমুদ্র উপভোগ করে সময় কাটান সত্য। কিন্তু ভ্রমণের অর্থ জোগাড় করতে সেখানে কাজও করেন। তারাই মূলত অস্ট্রেলিয়াকে কম খরচে স্বল্প-দক্ষ শ্রমের জোগান নিশ্চিত করে থাকেন। ২০২০ সালে কোভিড-১৯ মহামারির শুরুতে সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়ার আগপর্যন্ত প্রতি বছর কয়েক হাজার ব্যাকপ্যাকার পেতো অস্ট্রেলিয়া। এদের বেশিরভাগই যেতেন যুক্তরাজ্য, আয়ারল্যান্ড ও ইউরোপের মূল ভূখ- থেকে। গত ফেব্রুয়ারিতে অস্ট্রেলিয়ার সীমান্ত ফের খুলে দেওয়া হয়েছে, কিন্তু ব্যাকপ্যাকারদের দেখা নেই। এটি গোটা অস্ট্রেলিয়ায় ব্যাপক কর্মী সংকট সৃষ্টি করেছে। দেশটিতে অস্থায়ীভাবে বসবাস করার পাশাপাশি কাজের অনুমতি পাওয়া ভিসাধারীদের ‘ওয়ার্কিং হলিডে-মেকার’ বলা হয়। ২০১৯ সালের শেষের দিকে এদের সংখ্যা ছিল অন্তত ১ লাখ ৪১ হাজার। কিন্তু গত জুলাই মাসে এর সংখ্যা মাত্র ৪৪ হাজারে নেমে এসেছে। এর ফলে পাব, রেস্তোরাঁ, হোটেলগুলোতে কর্মীর ভয়াবহ ঘাটতি দেখা দিয়েছে। গ্রাহকদের সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছে বারগুলো। পরিচ্ছন্নতাকর্মীর অভাবে বন্ধ থাকছে হোটেলগুলোর কক্ষ। ‘আমরা এসব কাজের জন্য অস্ট্রেলীয়দের কাছ থেকে আবেদন পাই না’, বলেছেন মেলবোর্ন-ভিত্তিক পাবলিকান লিয়াম গ্যানলি। তিনি কর্মী পেতে এতটাই মরিয়া যে, যুক্তরাজ্য-আয়ারল্যান্ড থেকে অস্ট্রেলিয়ায় স্থানান্তরিত হওয়ার জন্য লোকদের অর্থ দিতেও রাজি হয়েছেন। তার সংস্থার চারটি ভেন্যুর মধ্যে দুটিতে খোলার সময় পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। কারণ সেগুলোর ডিউটির রোস্টার পূরণ করা যায়নি। এই সংকট শুধু বড় বড় শহরেই নয়, অস্ট্রেলিয়ার প্রত্যন্ত গ্রামগুলোতেও আঘাত হেনেছে। ব্যাকপ্যাকাররা সাধারণত গ্রেট ব্যারিয়ার রিফ বরাবর থাকতে আগ্রহী হওয়ায় দূর-দূরান্তে অবস্থিত কম জনবহুল এলাকাগুলোতে চাকরি নেন। খামারগুলোতে ফলমূল-শাকসবজি তোলার কাজ করলে তারা অস্ট্রেলিয়ায় অবস্থানের সময়সীমা বাড়ানোর সুযোগ পান। অনেক ক্ষেত্রেই অবশ্য বিরূপ পরিস্থিতি ও নূন্যতম মজুরির চেয়ে কম অর্থের বিনিময়ে এসব কাজ করতে হয় ব্যাকপ্যাকারদের। মহামারির আগে অস্ট্রেলিয়ার মৌসুমী কৃষি শ্রমের ৮০ শতাংশ সরবরাহ করতেন ব্যাকপ্যাকাররা। তারা চলে গেলে ফসল কাটার জন্য প্রায় ২৬ হাজার কর্মীর ঘাটতি তৈরি হয়। লোকবলের অভাবে ঘরে তুলতে না পারায় ক্ষেতেই পচে যায় অনেক কৃষকের ফসল। স্বল্প-দক্ষের পাশাপাশি অস্ট্রেলিয়া দক্ষ কর্মী খুঁজে পেতেও হিমশিম খাচ্ছে। তবে করোনাজনিত বিধিনিষেধই এর একমাত্র কারণ নয়। মহামারি চলাকালে সরকার আর্থিক প্রণোদনা দিয়ে অর্থনীতিকে চাঙ্গা করেছে। কোভিড আবির্ভাবের পর থেকে দেশটিতে বেকারত্বের হার প্রায় দুই শতাংশ পয়েন্ট কমে ৩ দশমিক ৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে, যা পাঁচ দশকের মধ্যে সর্বনিম্ন। প্রায় পাঁচ লাখ পদ খালি রয়েছে, যা কাজের বাইরে থাকা অস্ট্রেলীয়দের সংখ্যার চেয়েও বেশি। বেশিরভাগ ধনী দেশগুলোর জোট ওইসিডি’র সদস্যদের মধ্যে কেবল কানাডাই অস্ট্রেলিয়ার চেয়ে বেশি শ্রম সংকটে ভুগছে। মেলবোর্ন-ভিত্তিক থিংক-ট্যাংক সিডা মনে করে, সীমান্ত বন্ধ থাকায় অন্তত পাঁচ লাখ কম অভিবাসী কর্মী নিয়ে মহামারি থেকে বেরিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। অস্ট্রেলিয়ায় গত মে মাসে নির্বাচিত নতুন লেবার সরকার চায়, সব ধরনের অভিবাসীরা ফিরে আসুক। গত ২ সেপ্টেম্বর দেশটির প্রধানমন্ত্রী অ্যান্টনি আলবানিজ বলেছেন, তিনি নার্স-প্রকৌশলীসহ দক্ষ অভিবাসী গ্রহণের পরিমাণ এক-পঞ্চমাংশেরও বেশি বাড়িয়ে বছরে ১ লাখ ৯৫ হাজারে উন্নীত করবেন। তবে আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় আটকে গেছে এই উদ্যোগের ভিসা-প্রক্রিয়াকরণ। অস্ট্রেলিয়ায় প্রায় ১০ লাখ ভিসা আবেদন অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। প্রক্রিয়াটিকে দ্রুততর করতে দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে ৩ কোটি ৬০ লাখ ডলার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী আলবানিজ। এই অর্থ ব্যবহার করে ভিসা প্রক্রিয়াকরণের কাজে আরও অন্তত ৫০০ জনকে নিয়োগ দেবে অস্ট্রেলীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।