December 27, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Wednesday, December 18th, 2024, 6:01 pm

অস্তিত্ব সংকটে শ্যামাসুন্দরী খাল, সংরক্ষণের ওপর গুরুত্বারোপ

আব্দুর রহমান মিন্টু, রংপুর:

স্থানীয় সরকারসহ সংশ্লিষ্টদের উদাসীনতা ও নাগরিক সচেতনতার অভাবে শ্যামাসুন্দরী খালটি দখলের সঙ্গে সঙ্গে ময়লা-আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে খালটি পুনরুদ্ধার করে বিজ্ঞানসম্মতভাবে খনন ও সংরক্ষণে যথাযথ উদ্যোগ নেওয়া জরুরি। নয়তো ভবিষ্যতে খালটির অস্তিত্ব বিলীন হওয়ার সঙ্গে তীব্র জলাবদ্ধতায় ভোগান্তিতে পড়বে রংপুর নগরবাসী।

রোববার রংপুর নগরীতে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি-বেলা আয়োজিত ‘অস্তিত্ব সংকটে শ্যামাসুন্দরী খাল : পুনরুদ্ধার ও সংরক্ষণে করণীয়’ শীর্ষক আলোচনা সভায় অংশগ্রহণকারীরা এসব কথা বলেন।সভা থেকে মৃত্যু শয্যাশায়ী শ্যামাসুন্দরী খালকে বাঁচাতে অন্তরবর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও পরিবেশ উপদেষ্টাসহ সংশ্লিষ্টদের কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য আহ্বান জানানো হয়।আলোচনা সভায় মানবাধিকার ও পরিবেশ সংগঠক অ্যাডভোকেট এ এ এম মুনীর চৌধুরীর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মো. ময়নুল ইসলাম। সম্মানিত অতিথির বক্তব্য দেন পরিবেশ অধিদপ্তর রংপুর বিভাগীয় পরিচালক একেএম রফিকুল ইসলাম, রংপুর সিটি কর্পোরেশনের নগর পরিকল্পনাবিদ নজরুল ইসলাম, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড-বাপাউবো রংপুরের প্রকৌশলী মো. আখিনুজ্জামান।

প্যানেল আলোচক ছিলেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শ্যামাসুন্দরী পুনরুদ্ধার কোর কমিটির সদস্য ও নদী বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. তুহিন ওয়াদুদ ও সুজন-সুশাসনের জন্য নাগরিক রংপুর মহানগর সভাপতি খন্দকার ফখরুল আনাম বেঞ্জু।

সভার শুরুতে বেলা’র সমন্বয়কারী তন্ময় কুমার সান্যাল শ্যামাসুন্দরী খালের অতীত ও বর্তমান অবস্থা তুলে ধরেন। এ সময় তিনি শ্যামাসুন্দরীর অস্তিত্ব রক্ষায় সিএস খতিয়ান অনুযায়ী শ্যামাসুন্দরী খালের সীমানা চিহ্নিত করা, দখল ও দূষণকারীদের উচ্ছেদ করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ জানান।

শ্যামাসুন্দরী খাল পুনরুদ্ধার ও সংরক্ষণে বেলা’র পক্ষ থেকে হাইকোর্টে একটি জনস্বার্থ মামলা করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, শ্যামাসুন্দরী খালের প্রবাহ বিঘ্নকারী স্থাপনা অপসারণ করতে হবে। খালটির স্বাভাবিক প্রবাহ নিশ্চিত করতে দৈর্ঘ্য-প্রস্থ (সিএস জরিপ) অনুযায়ী প্রয়োজনীয় খনন করতে হবে। প্রতি মাসে এলাকাভিত্তিক কমপক্ষে একবার পরিচ্ছন্নতা অভিযান চালাতে হবে। শ্যামাসুন্দরী খাল সংস্কার ও সংরক্ষণে প্রয়োজনীয় অন্যান্য ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। একইসঙ্গে ২০১৯ সালে ৫১১ জন দখলদার চিহ্নিত করা হলেও পরবর্তীতে তা কীভাবে ১১৭ জনে দাঁড়াল, তা খতিয়ে দেখতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

প্যানেল আলোচক ড. তুহিন ওয়াদুদ বলেন, বর্তমানে শ্যামাসুন্দরীকে বাঁচাতে হলে এতে পানি লাগবে। ৩০ বছর আগে কীভাবে পানি প্রবাহিত হতো, ঘাঘট থেকে শ্যামাসুন্দরীতে কেন পানি প্রবাহিত হচ্ছে না, কোথায় কোথায় প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়েছে তা আমাদের চিহ্নিত করতে হবে। বর্তমানে রংপুর শহরের আকাশ খারাপ হলে গোটা নগরী পানিতে ডুবে যাবে, যা দুই বছর থেকে আমরা বুঝতে পারছি। অবৈধ দখল উচ্ছেদ করতে হবে এবং এ খালে পানির প্রবাহ যেন স্বচ্ছ থাকে সে ব্যাপারেও অধিকতর নজর দিতে হবে।

শ্যামাসুন্দরীর কান্না শোনার দাবি জানিয়ে তিনি আরও বলেন, নদী রক্ষকরা শ্যামাসুন্দরীর কান্না দেখেও না দেখার ভান করে। তাদের সামনে শ্যামাসুন্দরী দখল হচ্ছে, দূষিত হচ্ছে। মাত্র ৪ কোটি টাকা হলে তিন মাসের মধ্যে শ্যামাসুন্দরীর দখল উচ্ছেদপূর্বক এর দূষণ দূর করা সম্ভব। প্রথমে চাই নদীর সুরক্ষা তারপর এর সৌন্দর্যবর্ধন।
ঘাঘটের উৎসমুখ তিস্তা নদী থেকে শ্যামাসুন্দরীকে বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। ফলে শ্যামাসুন্দরী স্রোত হারিয়েছে। নদীটির স্বাস্থ্য সুরক্ষা অত্যন্ত জরুরি। এজন্য শ্যামাসুন্দরী বাঁচাতে ঘাঘটের উৎসমুখ খুলে দেওয়া, শ্যামাসুন্দরী থেকে অবৈধ দখল উচ্ছেদ করা, দূষণ বন্ধ করা ও বিজ্ঞানসম্মতভাবে খনন করার দাবি জানিয়েছে আলোচনায় অংশ নেওয়া শিক্ষক, শিক্ষার্থী, সংগঠক, চিকিৎসক, শিল্পী, সাংবাদিক, ধর্মীয় নেতাসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার প্রতিনিধিরা।
অনুষ্ঠানে রংপুর সিটি কর্পোরেশনের নগর পরিকল্পনাবিদ নজরুল ইসলাম বলেন, পরামর্শক প্রতিষ্ঠান খালের উন্নয়নে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়েছে। সেই পরিকল্পনার ভিত্তিতে প্রাক্কলন তৈরি করে তা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হবে। বরাদ্দ আসার পর পুরোদমে খালের উন্নয়নকাজ শুরু করা সম্ভব হবে। ইতোমধ্যে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান প্রকল্প পরিকল্পনার ৮০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন করেছেন বলেও জানান তিনি।

প্রসঙ্গত, জলাবদ্ধতা দূর ও ম্যালেরিয়ার হাত থেকে রংপুরকে মুক্ত রাখতে পৌরসভার প্রথম চেয়ারম্যান ও ডিমলার রাজা জানকী বল্ভ সেন ১৮৯০ সালে তার মা চৌধুরানী শ্যামাসুন্দরী দেবীর নামে খালটি পুনঃখনন করেন। ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এ খালের সম্মুখে রয়েছে নগরীর কেলাবন্দের ঘাঘট নদ।সেখান থেকে শুরু করে নগরীর ধাপ পাশারীপাড়া, কেরানীপাড়া, মুন্সীপাড়া, ইঞ্জিনিয়ারপাড়া, গোমস্তাপাড়া, সেনপাড়া, মুলাটোল, তেঁতুলতলা শাপলা সেতু, নূরপুর, বৈরাগীপাড়া হয়ে মাহিগঞ্জের মরা ঘাঘটের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। এলাকাভেদে এর প্রস্থ ২৩ থেকে ৯০ ফুট ছিল। বর্তমানে শ্যামাসুন্দরী দখল-দূষেণের কারণে মৃতপ্রায়।