অনলাইন ডেস্ক :
ঢাকাই চলচ্চিত্রে শনিরদশা লেগেছে। এটি অবশ্য নতুন কোনো ঘটনা নয়। নব্বই দশকের শেষভাগ থেকেই এই ভগ্নদশা চলছে। একদিকে ছবি মুক্তির সংখ্যা কমছে অন্যদিকে যাও মুক্তি পাচ্ছে তা মুখ থুবড়ে পড়ছে। করোনা প্রাদুর্ভাবের কারণে এই অবস্থা আরও করুণ হয়েছে। গেল বছর থেকেই নেই তেমন সিনেমার কাজ ও মুক্তি। এদিকে গত ১ জুলাই থেকে বাংলাদেশে টানা সাধারণ ছুটি চলছে। এই সময়ে সব ধরনের জমায়েত নিষিদ্ধ থাকায় শুটিং ও সিনেমা হল দুটোই বন্ধ হয়ে যায়। সামনে আসছে মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব কোরবানির ঈদ। সাধারণত ঈদের সময় বাংলাদেশে সিনেমা হলগুলোতে সবচেয়ে বেশি সিনেমা মুক্তি পায়। এবার তা হচ্ছে না! এই সময়ে মুক্তির অপেক্ষায় থাকা প্রায় ২৫টি চলচ্চিত্র আটকে আ।ে সেইসঙ্গে সিনেমা হল বন্ধ থাকায় এই খাতে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় শত কোটি টাকা। গত ২৫ জুন অনেক আশার আলো জ¦ালিয়ে দেশের শীর্ষ নায়ক শাকিব খানের সিনেমা ‘নবাব এলএলবি’ মুক্তি পায় হলে। কিন্তু পরিতাপের বিষয় হচ্ছে, এই ছবিটিও ব্যবসায়িক আনুকূল্য পায়নি। এ নিয়ে চলচ্চিত্রকারদের হতাশা বাড়ছে। ভবিষ্যৎ নিয়ে তারা আরও শঙ্কিত হয়ে পড়ছেন। এমন অবস্থায় দেশের সিনেমা বাজারে চলছে অনলাইন প্লাটফর্ম ওটিটির জোয়ার। সময়ের চাহিদার কারণে এই জোয়ারে গা ভাসাচ্ছেন টেলিভিশন ইন্ডাস্ট্রির নির্মাতা ও অভিনয়শিল্পীরা। সুযোগে বাংলাদেশ এখন দেশের বাইরেও তাদের কন্টেন্টের বাজার তৈরি করার চেষ্টা করছে। অনেকটা পারছেও বলা যায়। এই সুবাদে অনেক দেশীয় শিল্পী কাজের সুযোগ পাচ্ছেন। অনেক অবহেলিত, বেকার শিল্পী-নির্মাতারা কাজে ফিরছেন। তবে এই ওটটির জোয়ারে অস্তিত্ব সংকটে পড়ছেন ঢালিউডের নিয়মিত তারকারা। বিশেষ করে ইন্ডাস্ট্রির প্রথম সারির নায়ক-নায়িকারা প্রায় কাজহীন হয়ে পড়ছেন বলা চলে। ওটিটিগুলোতে তাদের উপস্থিতি একেবারে নেই। এমনকী নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ও পরিচালকদের পরিকল্পনাতেও তাদের নাম দেখা যাচ্ছে না। ওটিটি প্লাটফর্মের জন্য সিরিজ বা সিনেমাগুলোতে দেখা যাচ্ছে ছোট পর্দা ও মঞ্চ নাটকের শিল্পী-কলাকুশলীদের। তারা বেশ প্রশংসাও পাচ্ছেন। ‘তাকদীর’, ‘মহানগর’ তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। তাছাড়া পারিশ্রমিকের দিক থেকেও ঢালিউডের নায়ক-নায়িকাদের ব্যাপারে অনাগ্রহী নির্মাতারা। কেউ কেউ দাবি করছেন, সিনেমার তারকাদের একজনের পারিশ্রমিক দিয়ে একটা ওয়েব সিরিজের এক পর্বের নির্মাণ কাজ অর্ধেক শেষ হয়ে যায়। অনেকে আবার বলছেন, এফডিসি ঘরানার শিল্পীরা ওটিটি কন্টেন্টের সঙ্গে নিজেদের মানিয়ে দিতে পারছেনা না। এতে করে পিছিয়ে পড়ছেন তারা। স্বাভাবিকভাবেই কিছুদিন আগেও যারা ছিলেন ঢাকাই সিনেমায় আলোচনার শীর্ষে- তাদের হাতে এখন কাজ নেই! কেউ কেউ সিনেমা জগত ছেড়ে বিকল্প পথ খুঁজছেন। কেউবা আবার বিয়ে করে চলচ্চিত্রকে বিদায় জানানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেশ কয়েকজন নির্মাতা বলেন, ওটিটি কন্টেন্টের সঙ্গে চলচ্চিত্রের শিল্পীরা মানিয়ে নিতে পারছেন না। কেউ কেউ তো বিশ্বজুড়ে অনলাইন প্লাটফর্মের জোয়ার দেখেও ভুল মতবাদ নিয়ে পড়ে আছেন। তাদের মতে ওটিটি কখনো বিনোদনের যোগ্য প্লাটফর্ম হতে পারে না। ওটিটির কাজ নিয়ে নাক সিঁটকান, অবমূল্যায়ন করেন। আসলে সময়ের সঙ্গে তাল মেলাতে পারছেন না তারা। আজকাল দর্শক অনেক আপডেট। তারা সিনেমা হলে গিয়ে সিনেমা দেখছেন না। বিশেষ করে করোনার এই মহামারীর সময়টাতে। তারা মোবাইলে ৪৫০ টাকার বিনিময়ে সারা বছর বিশ্বের আলোচিত সব কন্টেন্ট খুবই সহজে দেখতে পারছেন। এ বিষয়টা উপলব্ধিই না করতে পারলে ক্রমেই অস্তিত্ব সংকটে পড়বেন সিনেমার প্রথম সারির তারকারা। অস্তিত্ব হারাবেন সিনেমার এক সময়ের ডাকসাইটে পরিচালকরাও।
আরও পড়ুন
দীর্ঘদিন পর ফেরা তারকারা
ভিন্ন পরিচয়ে রিচি
বাড়িতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় যা বললেন শান