November 20, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Thursday, September 16th, 2021, 8:05 pm

আইএসে যোগ দেওয়া শামিমা পুড়ছেন ‘অনুতাপে’

অনলাইন ডেস্ক :

শামিমা বেগম এখন ‘অনুতপ্ত’, কিশোর বয়সে আইএসে যোগ দিতে দেশ ছাড়ার জন্য। নিজের জীবনের সেই ভুল শুধরাতে এখন সন্ত্রাসবিরোধী লড়াইয়ে যুক্তরাজ্যকে সহায়তা করতে চাইছেন তিনি। বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এই নারী বলেছেন, তিনি তার জীবনকে মানুষের জন্য কাজে লাগাতে চান, শরণার্থী শিবিরে ‘পচে’ মরে তা অপচয় করতে চান না। বিবিসি, বিবিসি ফাইভ লাইভ এবং আইটিভিকে আলাদাভাবে দেওয়া সাক্ষাৎকারে নিজের এখনকার অনুভূতি তুলে ধরেন তিনি। শামিমা কিশোর বয়সে আইএসে যোগ দিতে লন্ডন থেকে পাড়ি জমিয়েছিলেন সিরিয়ায়। আইএসের খেলাফতের পতনের পর ধরা পড়েন। তবে তার যুক্তরাজ্যে ফেরার পথ হয়েছে বন্ধ। আইনি লড়াইয়েও সেই পথ খোলেনি। ২২ বছর বয়সী শামিমা এখন সিরিয়ার একটি শরণার্থী শিবিরে রয়েছেন। শামিমার বিরুদ্ধে আইএসের হয়ে সক্রিয় তৎপরতা চালানোর অভিযোগ রয়েছে; যদিও তিনি তা অস্বীকার করে আসছেন। কীভাবে আইএসের মতো একটি দলে যোগ দিয়েছিলেন, যারা গণহত্যা চালিয়েছিল, এখন সেটা ভাবলে কী মনে হয় – বিবিসির এই প্রশ্নে শামিমা বলেন, “সেটা চিন্তা করলেই আমি অসুস্থ হয়ে পড়ি। নিজের উপরই ঘৃণা জন্মায়।” আইএসের খেলাফতের পতন হওয়ার পরই কি এটা মনে হচ্ছে- এই প্রশ্নে তার উত্তর, “অনেক দিন ধরেই আমি এমন চিন্তা করছিলাম। হয়ত এখন আমি খোলাখুলিভাবে বলিতে পারছি।” শামিমা বলছেন, তিনি যুক্তরাজ্যে ফিরতে চান। আর সেই ফেরাটা কাজেও লাগাতে চান ‘সমাজের জন্য’। তিনি বলছেন, কী কৌশলে আইএস দলে নতুন সদস্য ভেড়ায়, তার পরিণতি কী হতে পারে, সে বিষয়ে তিনি সবাইকে বোঝাতে পারবেন। এখন সেই ‘দায়বদ্ধতা’ অনুভব করার কথাও বলেন এই নারী। তার ভাষায়, যে মোহে তিনি তার কৈশোর-তারুণ্য জলাঞ্জলি দিয়েছেন, নতুন করে কারও যেন তা না হয়। শামিমা বলছেন, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তিনি প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের ‘সম্পদ’ হয়ে উঠতে পারেন, যদি তাকে সেই সুযোগ দেওয়া হয়। “আমি জানি, কিছু মানুষ আছে, যারা আমাকে বিশ্বাস করবে না। বিশ্বাস করবে না যে আমি বদলে গেছি। কিন্তু বিশ্বাস করুন, আমি সত্যিকারভাবেই সহযোগিতা করতে চাইছি।” যুক্তরাজ্যে ফেরার আকুতি জানিয়ে তিনি বলেন, “আমি আমার হৃদয়ের অন্তঃস্থল থেকে বলছি, সিরিয়ায় যাওয়ার সময় আমি যে সিদ্ধান্তগুলো নিয়েছিলাম, সেগুলোর জন্য এখন আমার ভীষণ রকমের আফসোস হচ্ছে। এটা আমাকে সারা জীবন বয়ে বেড়াতে হবে। “আমি এখন আমাকে যতটা ঘৃণা করি, অতটা বোধ হয় অন্য কেউ করে না। আমি শুধু বলতে পারি, আমি খুবই দুঃখিত, দয়া করে আমাকে আরেকবার সুযোগ দিন।” পুনরায় আইএসে যোগ দেওয়ার ইচ্ছে রয়েছে কি না- জানতে চাইলে শামিমা বলেন, “তার চেয়ে আমার মরে যাওয়াও ভালো।” তিনি দাবি করেন, সন্ত্রাসী তৎপরতার হোতা, এমন অভিযোগ তার বিরুদ্ধে উঠলেও তার কোনো প্রমাণ কেউ দেখাতে পারবে না। যুক্তরাজ্যে ফিরে আদালতে লড়াই চালিয়ে নিজেকে নিষ্কলুষ প্রমাণ করতে পারবেন বলে আশাবাদী শামীমা। “কারণ আমি তো জানি, আমি কিছুই করিনি, শুধু সেখানে বিয়ে করা এবং মা হওয়া ছাড়া।” শামিমা নতুন ইচ্ছার কথা জানালেও তার নাগরিকত্ব যুক্তরাজ্য বাতিল করেছে এবং তা ফিরিয়ে দেওয়ার কোনো পরিকল্পনা সরকারের নেই বলে বিবিসিকে জানিয়েছেন দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রী সাজিদ জাভেদ। শামিমার নাগরিকত্ব বাতিলের সময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকা সাজিদ বলেন, যুক্তরাজ্যের জনগণের ‘নিরাপত্তার স্বার্থেই’ ওই সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার এবং তা ঠিকই আছে। যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্রও শামীমার বিষয়ে সরকারি সিদ্ধান্ত যথার্থ বলে দাবি করেন। তিনি বলেন, “সরকারের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় নিরাপত্তা এবং দেশের মানুষকে নিরাপদ রাখা।” তবে মানবাধিকার সংস্থা লিবার্টি শামীমার বিরুদ্ধে যুক্তরাজ্য সরকারের আচরণে ক্ষোভ জানিয়ে বলেছে, তার ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার হুজুগের বশে উড়িয়ে দেওয়া কোনো গণতান্ত্রিক সরকারেরর কাজ নয়। শামিমা তার মুসলমান পরিবারের সঙ্গে ইস্ট লন্ডনে থাকতেন, পড়তেন স্কুলে। ১৫ বছর বয়সে তিনিসহ তিনি স্কুলছাত্রী আইএসে যোগ দিতে সিরিয়ায় চলে গিয়েছিলেন। শামিমার সঙ্গে আর যে দুজন সিরিয়ায় গিয়েছিলেন, তাদের একজন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত খাদিজা সুলতানা বোমা হামলায় মারা গিয়েছিলেন বলে খবর এসেছে। অন্যজন আমিরা আবাসের কোনো খোঁজ আর পাওয়া যায়নি। সিরিয়ায় এক ডাচ আইএস যোদ্ধার সঙ্গে শামিমার বিয়ে হয়। তারা আইএসের শাসনাধীন এলাকায় তিন বছর সংসার করেছিলেন। আইএসের পতনের পর ২০১৯ সালে শামিমাকে একটি শরণার্থী শিবিরে পাওয়া যায়, তখন তিনি নয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা। শরণার্থী শিবিরে শিশুটির জন্ম হলেও সেটা বাঁচেনি। শামিমার ‘জিহাদী’ স্বামী ইয়াগো রেইডিকও এখন রয়েছেন সিরিয়ার কুর্দিনিয়ন্ত্রিত একটি বন্দিশিবিরে। স্বামীর দেশ নেদারল্যান্ডসও শামিমাকে নেবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে। যুক্তরাজ্য শামিমার নাগরিকত্ব বাতিলের পর ধারণা করা হচ্ছিল, তিনি বাংলাদেশের নাগরিকত্ব চাইবেন। তবে বাংলাদেশও তাকে নাগরিকত্ব দিতে অস্বীকৃতি জানায়।