November 26, 2025

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Wednesday, November 26th, 2025, 7:51 pm

আওয়ামী লীগের জোটসঙ্গী ১৪ দলের কার কী অবস্থা, নির্বাচনে অংশ নিয়ে অনিশ্চয়তা

 

আওয়ামী লীগের জোটসঙ্গী ১৪ দলের অনেকগুলো রাজনৈতিক দলের অবস্থা এখন সক্ষমতাহীন ও নামসর্বস্ব। ভাঙা আসবাবপত্র, লণ্ডভণ্ড বই–লিফলেট, ব্যানারসহ কেন্দ্রীয় কার্যালয়গুলো পরিত্যক্ত। ঢাকার তোপখানা রোডে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির কার্যালয় গত ১২ নভেম্বর রাতে দ্বিতীয় দফায় হামলা-ভাঙচুরের পর থেকে বন্ধ থাকছে।

জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) সহ অনেক দলের নেতারা মামলার ঝুঁকি, হামলা বা কারাবন্দি হওয়ায় মাঠের রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয়। জাসদের দপ্তর সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন জানান, সারা দেশে তাদের ১২টির বেশি অফিস দখল বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা চলছে, তবুও সীমিত আকারে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন।

বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন ও গণতন্ত্রী পার্টির কার্যালয়ও দীর্ঘদিন তালাবদ্ধ। জাতীয় পার্টি-জেপি অফিস খোলা রাখলেও দলীয় ব্যানার ও পোস্টার সরানো হয়েছে। বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির পলিট ব্যুরোর সদস্য নুর আহমদ বকুল মন্তব্য করেছেন, “১৪ দল কার্যত অস্তিত্বহীন, ইন ফ্যাক্ট, ইন প্র্যাকটিস। তবুও আমাদের অফিস দখল করা হলো।”

প্রকাশ্যে তেমন তৎপরতা নেই বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল, কমিউনিস্ট কেন্দ্র, গণ আজাদী লীগ ও গণতান্ত্রিক মজদুর পার্টির মতো দলগুলোর। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর শরিক দলগুলোর রাজনৈতিক প্রভাব অনেকটা ক্ষুণ্ণ হয়েছে।

এ পরিস্থিতিতে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই দলগুলোর অংশগ্রহণ নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। সম্প্রতি নির্বাচন কমিশন ৪৭টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ করেছে, যেখানে জাতীয় পার্টি ও ১৪-দলীয় জোটের অন্তত ৬টি নিবন্ধিত দল আমন্ত্রণ পায়নি।

কমিশনের এই সিদ্ধান্ত নিয়ে যেমন আলোচনা হচ্ছে, তেমনই আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে শরিক দলগুলোর অনেক নেতার বক্তব্য, প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনে সমর্থন এবং জুলাই অভ্যুত্থানে দলগুলোর অবস্থান নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। অতীত ভূমিকার কারণে ইসির সংলাপ বা আসন্ন নির্বাচনে এই দলগুলো যেন অংশ নিতে না পারে সেই দাবিও জানিয়েছে কয়েকটি রাজনৈতিক দল।

গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান বলেন, “যারা গণতান্ত্রিক অবাধ নির্বাচনের বিপর্যয় ঘটিয়েছে, তাদের সঙ্গে কমিশনের সংলাপে বসা উচিত নয়।”

এমন প্রেক্ষাপটে কমিশনকে ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা বলছেন নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সদস্য জেসমিন টুলি। তিনি বলছেন, অভ্যুত্থানের পরে গণতন্ত্রের পথে ফেরার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ আসন্ন নির্বাচন।

জেসমিন টুলি বলেন, “আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ, তাই আওয়ামী লীগ ইলেকশন আসতে পারবে না। সংলাপে তাকে ডাকার কোনো প্রয়োজন নেই। কিন্তু অন্য যে দলগুলো আছে, কিন্তু নিষিদ্ধ না, তাদের কার্যক্রম করার কোনো বাধা নেই। সেক্ষেত্রে তারা তো নির্বাচন করবে। যদি কেউ বলে যে, সে তো দোসর ছিল, কিন্তু দোসর হলেও তার কার্যক্রম থামায়নি কেউ। অতএব, সে তো এগুলো প্রাপ্য। আমার কাছে মনে হয় যে, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের জন্য সবার প্রতি সমআচরণ করাটা খুবই জরুরি।”

এদিকে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, নিবন্ধন প্রক্রিয়া শেষ পর্যায়ে রয়েছে। কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার জানিয়েছেন, “নিবন্ধনের কাজটা এখনও শেষ হয়নি। শেষ পর্যায়ে। আমরা আশা রাখি, কিছুদিনের ভেতরে এটি হবে। কমিশন যদি মনে করে যে ওদেরসহ আবার ডাকার প্রয়োজন, সেক্ষেত্রে কমিশন সিদ্ধান্ত নেবে। এখনও এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়নি। নিবন্ধিত দল হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেওয়াটাই তো স্বাভাবিক।”

রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বাংলাদেশে জুলাই অভ্যুত্থানের পর সংস্কার আলোচনায় একটি বড় অংশ জুড়ে রয়েছে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের বিষয়টি। আর সেটি নিশ্চিত করা নির্বাচন কমিশনের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হতে পারে।

তথ্যসূত্র: বিবিসি বাংলা

এনএনবাংলা/