August 23, 2025

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Saturday, August 23rd, 2025, 1:12 am

আওয়ামী লীগ নেতাদের কলকাতার জীবন, যেভাবে কাটছে তাদের দিনকাল

 

বাংলাদেশে শেখ হাসিনার সরকারের পতন এবং তার ভারতের নির্বাসনের পর এক বছরেরও বেশি সময় কেটে গেছে। এ সময়টাতে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা কলকাতার নিউটাউনে গড়ে তুলেছেন নতুন এক জীবনযাত্রা। সকালবেলার নামাজ, জিমে অনুশীলন, অনলাইন মিটিং আর এর ফাঁকে কেউ কেউ সময় বের করছেন ব্যক্তিগত জীবন গোছানোর জন্যও।

ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম দ্য প্রিন্টকে সাবেক তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, বাংলাদেশ শেখ হাসিনার বিদায়ের পর থেকে অন্ধকারে নিমজ্জিত। আমার এখন একটাই লক্ষ্য দেশকে আবার সঠিক পথে ফেরানো।

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র আন্দোলনের পর শেখ হাসিনা দেশ ছাড়েন। তারপর থেকে প্রায় সাবেক মন্ত্রী, এমপি, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী ও আওয়ামী লীগ সমর্থক সরকারি সাবেক কর্মকর্তাসহ প্রায় ১৩শ ব্যক্তি ভারতসহ অন্যান্য দেশে নির্বাসনে রয়েছেন। কলকাতার নিউটাউন এলাকায় বেশিরভাগ নেতা ভাড়া অ্যাপার্টমেন্টে থাকছেন। এলাকাটি শপিং মল ও বিমানবন্দরের কাছে হওয়ায় এটি হয়ে উঠেছে তাদের জন্য নিরাপদ ঠিকানা।

প্রতিদিন ফজরের নামাজ, জিম বা হাঁটা, দুপুরে খানিক বিশ্রাম আর সন্ধ্যায় অনলাইন মিটিং করে দিন কাটছে নির্বাসিত নেতাদের সময়।

তাদের মধ্যে একজন বাংলাদেশের প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, যাকে গত অক্টোবরে কলকাতার নিকো পার্কে দেখা যায়। তিনি এখন নিউটাউনে স্ত্রী ও কন্যাকে নিয়ে থাকেন। দলের বৈঠক ও ভারতীয় প্রভাবশালী মহলের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য নিয়মিত দিল্লি যাতায়াত করেন । তার ছেলে সাফি মুদ্দাসসির খান জ্যোতি বর্তমানে ঢাকায় কারাগারে আটক আছেন।

আসাদুজ্জামান খান কামাল সহকর্মীদের নিয়মিত আশ্বস্ত করেন, আমরা এখানে বিশ্রাম নিতে আসিনি, বেঁচে থাকতে এসেছি। আবার লড়াই করার প্রস্তুতি নিচ্ছি।

কক্সবাজারের এক সাবেক সংসদ সদস্য জানিয়েছেন, তিনি আরেকজন এমপির সঙ্গে ৩ বেডরুমের ফ্ল্যাটে থাকেন। প্রতিদিন ভোরে নামাজ শেষে ফিটনেস স্টুডিওতে যান। ওয়েট ট্রেনিং করেন, আর তার ফ্ল্যাটমেট পিলাটেস ক্লাসে যোগ দেন। তবে মাঝে মাঝে খাবারের ঝামেলা হয়। তখন ঢাকায় থাকা স্ত্রীর সঙ্গে ভিডিও কলে রান্নার নির্দেশনা নিয়ে নিজেরাই রান্না করেন। ওই নেতা মজা করে বলেন, ফিরে গেলে হয়তো নতুন পেশা হিসেবে শেফ হয়ে যেতে পারি।

সম্প্রতি সংবাদমাধ্যমে কলকাতায় আওয়ামী লীগের গোপন অফিস থাকার খবর এলেও প্রবাসী নেতারা তা অস্বীকার করেছেন। তারা বলছেন, প্রায় ১৩শ নেতাকর্মী এখানে থাকেন, তাই সবার দেখা-সাক্ষাতের জন্য আলাদা জায়গা ভাড়া নেওয়া হয়েছে। তবে এটিকে অফিস বলা অতিরঞ্জিত হবে।

অন্যদিকে সাবেক কূটনীতিক হারুন আল রশিদ এখন কানাডার অটোয়ায় স্থায়ী হয়েছেন। নির্বাসিত এই কূটনীতিক লিখছেন তার প্রথম উপন্যাস দ্য ম্যাপমেকারস প্রেয়ার্স। যা ১৯৪৬ সালের বাংলা দাঙ্গা থেকে ১৯৭১ সালের বাংলাদেশের জন্ম পর্যন্ত ওয়াদুদের কাল্পনিক চরিত্রকে ঘিরে আবর্তিত।

নিউটাউনে থাকা এক তরুণ সাবেক এমপি আবার ব্যক্তিগত জীবনে ছোট্ট সাফল্য পেয়েছেন। তিনি দিল্লিতে গিয়ে হেয়ার ট্রান্সপ্লান্ট করিয়েছেন। তিনি বলেন, ঢাকা থেকে পালিয়ে আসার সময় আমার চুল কমে যাচ্ছিল। আমার স্ত্রী কয়েক বছর ধরে আমাকে চুল প্রতিস্থাপনের জন্য বলছিলেন। কিন্তু প্রথমবারের মতো এমপি হওয়ার কারণে আমি আমার নির্বাচনী এলাকায় এতটাই ব্যস্ত ছিলাম যে আমি কখনই সময় বের করতে পারিনি।

২০২৫ সালের জানুয়ারিতে তিনি দক্ষিণ দিল্লির একটি চুল প্রতিস্থাপন কেন্দ্র থেকে চুলের ট্রিটমেন্ট শুরু করেন। তিনি বলেন, এত অস্থির সময়ে মাথায় নতুন চুলও একধরনের স্বস্তি।

কলকাতার নিউ টাউনে পালাতক আওয়ামী লীগ নেতাদের জীবন এখন এক ভিন্ন ছন্দে চলছে। কেউ দিন কাটাচ্ছেন রাজনৈতিক বৈঠকে, কেউ লেখালেখিতে, কেউবা পরিবার নিয়ে নতুন করে জীবন সাজানোর চেষ্টায়। কেউ জিম ও পিলাটিসে শরীরচর্চা করছেন, কেউ ব্যক্তিগত রূপে পরিবর্তন আনছেন। তবে এত কিছুর মাঝেও তারা তাকিয়ে আছেন বাংলাদেশের ক্ষমতার দিকে।

এনএনবাংলা/