September 20, 2025

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Saturday, September 20th, 2025, 5:38 pm

আজ মৌলভীবাজার পৌর বিএনপির কাউন্সিল, শহর জুড়ে উৎসবের আমেজ

জেলা প্রতিনিধি, মৌলভীবাজার:

রাত পোহালেই মৌলভীবাজার পৌর বিএনপির দ্বি-বার্ষিক কাউন্সিল। সময় যত ঘনিয়ে আসছে ততই ভোটের আমেজ বাড়ছে। শেষ হাসি কে কে হাসবেন? তারই অপেক্ষায় দলীয় নেতাকর্মী ও সমর্থকরা। বহুল কাঙ্খিত সম্মেলন ও কাউন্সিল ঘিরে উচ্ছ্বসিত মৌলভীবাজার পৌর বিএনপি’র নেতাকর্মীরা। মৌলভীবাজার শহর যেন সাজসজ্জায় এক নতুন রূপ পেয়েছে। কোথাও রঙিন ব্যানার, কোথাও প্রার্থীদের ফেস্টুন, আবার কোথাও ছাপাখানায় রাতদিন ব্যস্ততা—সব মিলিয়ে শহর এখন এক রাজনৈতিক উৎসবের নগরী।

আজ ২০ সেপ্টেম্বর শনিবার জেলা শিল্পকলা অডিটোরিয়ামে বসছে মৌলভীবাজার পৌর বিএনপির দ্বি-বার্ষিক কাউন্সিল-২০২৫। দীর্ঘদিন পর এ প্রথম গোপন ব্যালটে পৌর বিএনপির নেতৃত্ব নির্বাচন হতে যাচ্ছে। তাই নেতাকর্মীদের মুখে মুখে শুধু একটাই শব্দ-ভোট, ভোট আর ভোট।

শহরে উৎসবের আমেজ:

ওয়ার্ড থেকে ওয়ার্ডে ছুটছেন প্রার্থীরা। কারো হাতে লিফলেট, কারো কণ্ঠে ভোট প্রার্থনার সুর। দোকানপাট, চায়ের আড্ডা, মোড়ের গল্প—সব জায়গায় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু এখন বিএনপির কাউন্সিল। ছাপাখানার মালিকরা বলছেন, বহুদিন পর এমন অর্ডারের ভিড় পেয়েছেন তারা।

একজন ওয়ার্ড কর্মী বললেন, আমাদের জীবনে প্রথমবার এত বড় আয়োজনের অংশ হতে পারছি। আমাদের ভোটের মূল্য আছে, এই অনুভূতিই সবচেয়ে বড় আনন্দ।

প্রার্থীদের কণ্ঠে উচ্ছ্বাস:

প্রার্থীরা দিন-রাত সমানতালে ভোট চাইতে ব্যস্ত। সভাপতি পদপ্রার্থী মো: অলিউর রহমান বললেন, গোপন ব্যালটে নির্বাচন আমাদের জন্য নতুন দিগন্ত। এই নির্বাচন বিএনপিকে আরও শক্তিশালী করবে। অন্য সভাপতি প্রার্থী আনিসুজ্জামান বায়েস মনে করেন, এবারের কাউন্সিল সত্যিকার অর্থে গণতান্ত্রিক নির্বাচন। জয়-পরাজয় যাই হোক, নেতাকর্মীদের এই উৎসবমুখর উপস্থিতিই আমাদের শক্তি।

সিনিয়র সহ-সভাপতি পদপ্রার্থী সারওয়ার মজুমদার বললেন, প্রতিটি ওয়ার্ডে নেতাকর্মীদের সাড়া আমাকে অনুপ্রাণিত করছে। এটি হবে আমাদের ঐক্যের প্রতীক। অপর প্রার্থী রুনু আহমদ জানালেন, দীর্ঘদিন পর নেতাকর্মীদের চোখেমুখে এমন উদ্দীপনা দেখছি। গণতান্ত্রিক চর্চার এ উৎসবই আমাদের ভবিষ্যতের ভরসা। সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী মনোয়ার আহমদ রহমান বললেন, মানুষের দ্বারে দ্বারে ভোট চাইতে গিয়ে যে সাড়া পাচ্ছি, তা সত্যিই অভাবনীয়। প্রতিদ্বন্দ্বী সালাম আহমদ জিতু বললেন, গোপন ব্যালটের এই নির্বাচন হবে স্বচ্ছ ও ঐতিহাসিক। কর্মীরা পরিবর্তনের জন্য প্রস্তুত। সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বী চারজনই গণতন্ত্রের জয়গান শোনালেন। কামাল আহমদ বললেন, শহরজুড়ে ব্যানার-পোস্টারের ভিড় গণতন্ত্রের উৎসবের প্রতীক। আমিনুর রশিদ জানালেন, কর্মীরা নির্বাচনের অপেক্ষায় দিন গুনছেন। সামছুল ইসলাম স্বপন বললেন, কর্মীদের রায়কেই আমি মেনে নেব, সেটিই হবে প্রকৃত নেতৃত্ব। আর মহসিন আহমদ বললেন, এটি নেতৃত্ব বাছাইয়ের পাশাপাশি গণতান্ত্রিক সংস্কৃতিরও বড় চর্চা। সবচেয়ে বেশি প্রতিদ্বন্দ্বিতা সাংগঠনিক সম্পাদক পদে। এখানে ছয়জন প্রার্থী। মোস্তাফিজুর রহমান শাহিন বললেন, নেতাকর্মীদের চোখেমুখে উচ্ছ্বাস প্রমাণ করছে বিএনপি এখনও মানুষের হৃদয়ের সংগঠন।

কমরু মিয়া মনে করেন, সঠিক নেতৃত্বই দলকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। শেখ জুবেদ বললেন, এই কাউন্সিল আসলে ঐক্যের প্রতিচ্ছবি। শেখ সুজন আহমদ প্রতিশ্রুতি দিলেন, কর্মীদের প্রত্যাশা পূরণে কাজ করব। তুহিন আহমদ বললেন, এটি হবে বিএনপির সাংগঠনিক পুনর্জাগরণ। আর রেজাউল করিম রেজা বললেন, গোপন ব্যালটে এই নির্বাচন আমাদের জন্য ঐতিহাসিক মাইলফলক।

প্রার্থীদের উচ্ছ্বাস, কর্মীদের প্রাণচাঞ্চল্য আর শহরজুড়ে রঙিন সাজ-সব মিলিয়ে মৌলভীবাজার পৌর বিএনপির কাউন্সিল এখন এক গণতান্ত্রিক উৎসব। ভোটের দিন যত ঘনিয়ে আসছে, ততই বাড়ছে উত্তেজনা। জয়-পরাজয় যাই হোক, নেতাকর্মীদের চোখেমুখের আনন্দ বলে দিচ্ছে—এই কাউন্সিল ইতিহাস হয়ে থাকবে মৌলভীবাজারে।

মৌলভীবাজার জেলা বিএনপির আহবায়ক ও সাবেক পৌর মেয়র ফয়জুল করিম ময়ূন বলেছেন, সারা জীবন আমি ভোট দিয়েছি, কিন্তু এই প্রথম ভোট নিচ্ছি। জেলার ১২টি ইউনিটের (৭ উপজেলা ও ৫ পৌরসভা) মধ্যে ইতোমধ্যে ৫টি উপজেলা ও ১টি পৌরসভার কাউন্সিল সম্পন্ন হয়েছে। আজ ২০ সেপ্টেম্বর মৌলভীবাজার পৌর বিএনপির সম্মেলন ও কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন-হ্যাঁ, জানি অন্যান্য জেলার তুলনায় আমাদের এখানে আল্লাহর রহমতে পরিস্থিতি শান্তিপূর্ণ। আমাদের জেলার মানুষও ভালো। কিছু লোক বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছে, কিন্তু পারেনি। এখানে আগে গ্রুপিং ছিল, এখনো আছে বলে অনেকে মনে করে। তবে বাস্তবে এখন আর নেই। গ্রুপিং বর্তমানে না থাকার কারণেই আমি আর জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আব্দুর রহিম রিপন সম্পূর্ণ নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করছি। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা কাজ করছি। নির্দেশনা মানলে গ্রুপিং থাকে না। আমরা গ্রুপিংকে পছন্দ করি না, আমরা চাই দলের মধ্যে সুদৃঢ় ঐক্য। দল পুনর্গঠনের দায়িত্ব পেয়ে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করছেন উল্লেখ করে ময়ূন বলেন, আমি খুবই আনন্দিত যে আমাকে এই গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি কাউন্সিলে গিয়ে আমি অভিভূত হচ্ছি। মনে হয় যেন পৌর মেয়র নির্বাচন চলছে। ভোটারের এমন ভালোবাসা, আদর আর কদর বিএনপিতে জীবনে কখনো দেখিনি। এখন দেখি দয়া-মায়ার সীমা নেই। এগুলো দেখলে সত্যিই ভালো লাগে। মন উৎফুল্ল হয়।