January 12, 2025

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Sunday, January 12th, 2025, 7:16 pm

আতঙ্ক নয়, রিভাইরাস দিয়ে ক্যান্সারের ওষুধ তৈরির চেষ্টা চলছে

প্রতীকী ছবি

অনলাইন ডেস্ক:
রিও ভাইরাস হলো এক ধরনের আরএনএ ভাইরাস। যেখানে অনেকগুলো ভাইরাস একত্রে হয়ে থাকে, যাকে রিও ভাইরেডি বলা হয়। এটা হলো একটা ফ্যামিলি, সেখানে অনেক ভাইরাস থাকে। কিছু কিছু আছে রেসপিরেটরি অর্থাৎ শ্বাসযন্ত্রের মাধ্যমে ছড়ায়, কিছু আছে এন্টেরিক অর্থাৎ খাওয়ার মাধ্যমে ছড়ায়, এগুলোকে সমন্বয় করে বলা হয় রিও ভাইরাস।

ইতিহাস

একেক ভাইরাস একেক সময় আবিষ্কার হয়। রিও ভাইরাস ১৯৫০ সালের দিকে প্রথম সামনে আসে। এটি বড় ধরনের রোগ তৈরি করে না এবং ক্ষতিও করে নয়। রিও ভাইরাস ক্ষতিকারণ না হওয়ায়, এটা নিয়ে গবেষণাও খুব একটা হচ্ছে না, আর এটি যেহেতু রোগ তৈরি করে না এজন্য এটার তথ্যও খুব কম। এই ভাইরাসটা আমাদের জন্য উপকারও করে থাকে। এই ভাইরাস দিয়ে গবেষণাগারে বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সারের ওষুধ তৈরি করার চিন্তা ভাবনা চলছে। এটা ক্ষতিকারণ হলে ক্যান্সারের ওষুধের জন্য ব্যবহার করার চিন্তা করা হতো না। সুতরাং ভাইরাসটাকে আমরা যতটা প্রাণহানি মনে করছি, ততটা প্রাণহানিকর নয়।

কারা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে

রিও ভাইরাসে নির্দিষ্ট কোনো জনগোষ্ঠীর জন্য নয় কিংবা নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠী আক্রান্ত হচ্ছে এমন নয়। গবেষণায় দেখা গেছে, বিশ্বের ৫০ শতাংশ কোনো না কোনো রিও ভাইরাসে আক্রান্ত। আমরা যদি রক্তের এন্টিবডি টেস্ট করে দেখি, ১০০ জনের মধ্যে ৫০ জনই কোনো না কোনোভাবে রিও ভাইরাসের সাথে আক্রান্ত হয়েছে ইতিপূর্বে। আর এই ভাইরাস শুধু মানুষের মধ্যে রয়েছে, তা কিন্তু নয়। কোনো পশু-পতঙ্গ, এমনকি পাখি, গাছের মধ্যেও এই ভাইরাস রয়েছে। সুতরাং নতুন যে পাঁচজন আক্রান্ত হয়েছেন, তাদেরকে নিয়ে আমাদের আরও বেশি গবেষণা করতে হবে। আসলে এটা কোন জায়গা থেকে এলো। এমনও হতে পারে, এটা খেজুরের রস খেয়েছেন এমন ব্যক্তিরা আক্রান্ত হওয়ার সূত্র পাওয়া যাচ্ছে। নিপা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার মতো লক্ষণগুলো ছিল রিও ভাইরাসে আক্রান্তদের। রিও ভাইরাস হতে পারে কোনো প্রাণী থেকে ছড়িয়েছে। সেই বাঁদুরেও রিও ভাইরাস আছে। গবেষণার মাধ্যমে দেখতে হবে, রিও ভাইরাসের অরিজিনটা কোথায়। এটা হিউম্যান অরিজিন, না এনিমেল অরিজিন নাকি প্লান্ট অরিজিন বা অন্য কিছু থেকে আসছে, বিষয়টা গবেষণা করার মতো।

যেভাবে রিও ভাইরাস ছড়ায়

দুই-তিনটা মাধ্যমে রিও ভাইরাস ছড়ায়। একটা হলো শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে ছড়ায়, হাঁচি-কাশির মাধ্যমে ছড়ায়, আরেকটা হলো খাদ্য গ্রহণের মাধ্যমে ছড়াতে পারে। সুতরাং রিও ভাইরাস শ্বাস-প্রশ্বাস, হাঁচি-কাশি কিংবা খাদ্যের মাধ্যমে ছড়াতে পারে।

জটিলতা আছে কিনা?

আক্রান্তদের লক্ষণের দিকে তাকালে দেখায় যায়, আক্রান্তরা নিপা ভাইরাসের মতো লক্ষণ নিয়ে এসেছেন। তবে তাঁদের শরীরে নিপা ভাইরাসের কোনো চিহৃ পাওয়া যায়নি। সেখানে পাওয়া গেছে রিও ভাইরাসের চিহৃ। দেখেন নিপা ভাইরাসের লক্ষণের সাথে রিও ভাইরাসের লক্ষণের কোনো যোগসাজস আছে কিনা। রিও ভাইরাসে অনেকে আক্রান্ত হয়েছে। কেউ কিন্তু খারাপ পর্যায়ে যায়নি। সুতরাং যারা আক্রান্ত হয়েছেন, তাদের বিষয়ে গবেষণা করা দরকার। নিপা ভাইরাসের সাথে লক্ষণ আছে কিনা উচ্চতর গবেষণার মাধ্যমে প্রমাণ করতে হবে।

চিকিৎসা

এটি বড় ধরনের কোনো অসুখ তৈরি করে না। সুতরাং চিকিৎসারও কোনো প্রয়োজনীয় নেই। এটার কোনো ভ্যাকসিন বা ওষুধ নেই। এটা আমাদের আবহাওয়া, পরিবেশ বা সমাজে আক্রমণ ঘটায়। সেভাবে চিকিৎসা করার এখনও প্রয়োজনীয়তা দেখা যায়নি। তবে রিও ভাইরাসের রোগীরা যে লক্ষণ নিয়ে আসেন। শ্বাস কষ্ট বা অন্য কোনো লক্ষণ থাকে, উপসর্গগুলোর আলাদা আলাদা চিকিৎসা নিতে হবে। যেমন, কারও শ্বাসযন্ত্রে কোনো সমস্যা হলে তাঁর শ্বাসযন্ত্রের ওষুধ নিতে হবে। ডায়রিয়া বা অন্য কোনো অসুখ হয় সেটার চিকিৎসা নিতে হবে। তবে সুনির্দিষ্ট কোনো ভ্যাকসিন বা চিকিৎসা নাই।

রিও ভাইরাস কী ক্ষতিকারণ?

রিও ভাইরাস বিশ্বে ১৯৫০ সাল থেকে আছে। রিও শব্দটাকে ভেঙে বলা হলে বুঝা যাবে, আর দিয়ে রেসপিরেটরি, ই দিয়ে হলো এন্টেরো আর ও দিয়ে হচ্ছে ওরফেন। ওরফেন মানে হলো এতিম। আর এই ভাইরাস কোনো ধরনের ক্ষতি করে না, যার কারণে ভাইরাসটাকে ওরফেন বলা হয়। এগুলোকে একসাথে করে রিও ভাইরাস নাম দেওয়া হয়েছে। যদি ভাইরাসগুলো খুবই ক্ষতিকারক হতো, তাহলে আলোচনার মধ্যে আসতো। বাংলাদেশের রিও ভাইরাস পাওয়াটাকে ইঞ্চিডেন্টাল বলা যায়, কেননা গবেষকরা কোনো বিষয় নিয়ে গবেষণা করছেন। তারা মনে করে ছিলেন, হয়তো নিপা ভাইরাস পাবেন, কিন্তু তাঁরা রিও ভাইরাস পেয়েছেন। রিও ভাইরাসে আক্রান্তরা নিপা ভাইরাসের লক্ষণ নিয়ে এসেছিল, রিও ভাইরাসের সাথে নিপা ভাইরাসের কোনো যোগাযোগ আছে কিনা দেখতে হবে।

রিও ভাইরাসের লক্ষণ

যে পাঁচজনের রিও ভাইরাস পাওয়া গেছে, তাদের শরীরে রিও ভাইরাসের কোনো লক্ষণ ছিল না। গবেষণকরা মনে করছিলেন, নিপা ভাইরাস পাওয়া যাবে। দেখা গেল, সেখানে নিপা ভাইরাস নেই, রিও ভাইরাস রয়েছে। সাধারণভাবে যদি চিন্তা করি, তাহলে বুঝা যাবে। রিও ভাইরাসে লক্ষণ হলো শ্বাসযন্ত্রে প্রদাহ তৈরি করে, ব্রেনের আবরনে প্রদাহ করতে পারে ইত্যাদি। আর এটা কম সংখ্যক ব্যক্তির মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে। এগুলো প্রতিষ্ঠিত কোনো বিষয় না। ধারনা করা হয়, এই এই লক্ষণ থাকবে।

অধ্যাপক ডা. সাইফ উল্লাহ মুন্সী
সাবেক চেয়ারম্যান, ভাইরোলজি বিভাগ, বিএসএমএমইউ ও পরিচালক (চলতি দায়িত্ব), সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল।