August 11, 2025

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Saturday, August 9th, 2025, 3:55 pm

আবারও ভাঙছে জাতীয় পার্টি?

ছবি: সংগৃহীত

 

প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিভিন্ন সময়ে নেতৃত্ব নিয়ে বিভক্তি দেখা দিয়েছে সাবেক সেনাপ্রধান ও রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের প্রতিষ্ঠিত দল জাতীয় পার্টিতে। নেতৃত্ব নিয়ে আবারও ভাঙনের দোরগোড়ায় রয়েছে দলটি।

জাতীয় পার্টির (জাপা) নেতৃত্ব নিয়ে বিরোধ আদালতে গড়ানোর পর এবার দলটি ষষ্ঠবারের মতো ভাঙতে যাচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

১৯৮৬ সালে প্রতিষ্ঠিত দলটি এরশাদের জীবদ্দশায় চারবার ভেঙেছে। ২০১৯ সালে জি এম কাদের দলের নেতৃত্বে আসার পর এটি আরও একবার ভেঙেছে।

সম্প্রতি জাতীয় পার্টির (জাপা) একটি অংশ আনিসুল ইসলাম মাহমুদকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে ঘোষণা করেছে। তারা মূলত দলটির চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের বিরোধী।

শনিবার (৯ আগস্ট) ইমানুয়েল পার্টি সেন্টারে জাতীয় পার্টির নামে ১০তম জাতীয় কাউন্সিল হচ্ছে। যদিও জি এম কাদের নিযুক্ত মহাসচিব ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী এ কাউন্সিলকে অবৈধ আখ্যা দিয়েছেন।

গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেছিলেন, শনিবারের জাতীয় পার্টির সম্মেলন হবে ঐতিহাসিক। এই সম্মেলনের মধ্য দিয়ে পার্টির মধ্যে দীর্ঘদিনের যে বিভেদ রয়েছে, তা শেষ করে দিয়ে বৃহত্তর ঐক্য করে পল্লীবন্ধু এরশাদের স্বপ্নের জাতীয় পার্টির নবযাত্রা শুরু হবে। এই কাউন্সিলে, সারা দেশ থেকে জাতীয় পার্টির কয়েক হাজার কাউন্সিলর ও ডেলিগেট অংশ নেবেন। কাউন্সিলে প্রধান অতিথি করা হয়েছে জাতীয় পার্টি (জেপি) চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জুকে।

গতবছরের ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের পর রওশন এরশাদের নেতৃত্বে তার অনুসারীরা একই নামে দল করেছে। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পতনের পর জি এম কাদের সমর্থন করেন অন্তর্বর্তী সরকারকে।

কিন্তু অভ্যুত্থানের ছাত্র নেতৃত্বের প্রবল আপত্তির মুখে সরকারি বৈঠকে জাপাকে ডাকা বন্ধ করা হয়। স্বৈরাচারের দোসর আখ্যা দিয়ে জাপার কার্যালয়-কর্মসূচিতেও হামলা হয়। এরপর জি এম কাদের সরকারের সমালোচক হিসেবে আবির্ভূত হন।

তার এ ভূমিকার পর জাপার গঠনতন্ত্রের ২০(১) “ক” ধারা সংশোধনের দাবি তোলেন দলটিতে আওয়ামী লীগপন্থি হিসেবে পরিচিত নেতারা, যারা শেখ হাসিনার সময়ে মন্ত্রী-এমপি ছিলেন।

এদিকে, জি এম কাদেরের সভাপতিত্বে গত মে মাসে জাপার প্রেসিডিয়ামে সিদ্ধান্ত হয়, ২৮ জুন দলের কাউন্সিল হবে। তবে প্রধান উপদেষ্টার কর্মসূচির কারণে চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্র ভাড়া পাওয়া যাচ্ছে না– অজুহাতে এ কাউন্সিল স্থগিত করেন জি এম কাদের।

যদিও এতে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন দলটির জ্যেষ্ঠ কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, মহাসচিব পদে প্রার্থী হতে চেয়েছিলেন কো-চেয়ারম্যান রুহুল আমিন হাওলাদার।

জি এম কাদের কাউন্সিল স্থগিত করে এ দুজন এবং জাপার মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুকে দলের সব পদ থেকে অব্যাহতি দেন। ২০ (১) “ক” ধারার ক্ষমতাবলে আরও চার প্রেসিডিয়াম সদস্যকেও বহিষ্কার করা হয়। এ সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে জাপার ১০ নেতা মামলা করেন। মামলায় চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালনে জি এম কাদেরকে নিষেধাজ্ঞা দেন আদালত।

এরই ধারাবাহিকতায় নিজেকে জাপার ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দাবি করে কাউন্সিল ডেকেছেন ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ।

তিনি গতকালের সংবাদ সম্মেলনে আরও বলেছিলেন, কাউন্সিলের মাধ্যমে দীর্ঘদিনের বিভেদ মি‌টি‌য়ে ঐক্যবদ্ধ হয়ে নবযাত্রা করবে জাপা।

জাপার ভাঙনের ভাষ্যকে নাকচ করে ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, ‘পৃথক দল নয়, আদালতের আদেশ ও গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কাউন্সিল করছি। নির্বাচন কমিশনকে অবহিত করেছি। কাউন্সিলে তাদের প্রতিনিধি পাঠাতে জানিয়েছি।’

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির একতরফা নির্বাচনের পর গঠিত শেখ হাসিনা সরকারের মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, ‘কাউন্সিলের মাধ্যমে জাপায় গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে চাই। কাউন্সিলে গঠনতন্ত্রের বিতর্কিত ধারা বাতিল করা হবে। জাতীয় পার্টি চলবে যৌথ নেতৃত্বে।’

কাউন্সিল আহ্বানের প্রেক্ষাপট ব্যাখ্যা করে হাসিনা সরকারের সাবেক প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, ‘৩০ জুলাই আদালত চেয়ারম্যানের সাংগঠনিক কার্যক্রমে সাময়িক নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। ফলে দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম স্থবিরতার মুখে পড়ে। তাই রাজনৈতিক বাস্তবতা, আসন্ন নির্বাচন, নির্বাচন কমিশনের সময়সীমার বিধিবিধান মেনে গঠনতন্ত্রের ২০(২) (খ) ধারা অনুযায়ী যথাযথ সাংগঠনিক উদ্যোগ নেওয়া হয়। এ ধারার ক্ষমতাবলে গত ৫ আগস্ট আনিসুল ইসলাম মাহমুদের সভাপতিত্বে প্রেসিডিয়াম সভা হয়। এতে সর্বসম্মতিক্রমে নেতৃত্বের ধারাবাহিকতা রক্ষায় কাউন্সিল আয়োজনের সিদ্ধান্ত হয়।’

এদিকে, গতকাল রওশন এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি থেকে বাবলাসহ ৩ নেতাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।

শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, শফিকুল ইসলাম সেন্টু ও অ্যাডভোকেট জিয়াউল হক মৃধাকে প্রাথমিক সদস্যপদসহ সকল পদ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।

শুক্রবার (৮ আগস্ট) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বার্তায় বিষয়টি জানানো হয়। এরশাদপত্নী রওশনের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টির মহাসচিব কাজী মো. মামুনূর রশিদ দলীয় গঠনতন্ত্রে প্রদত্ত সাংগঠনিক ক্ষমতাবলে শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে এ সিদ্ধান্ত নেন বলে জানানো হয়। এতে বলা হয়, এই আদেশ ইতিমধ্যে কার্যকর করা হয়েছে।

এনএনবাংলা/আরএম