November 20, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Wednesday, November 20th, 2024, 6:17 pm

আমেরিকার অস্ত্রে হামলা, চটে লাল পুতিন

অনলাইন ডেস্ক
হাজার দিন পেরিয়ে গেলেও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ থামার নামগন্ধ নেই। উল্টে পূর্ব ইউরোপে বাড়ছে পরমাণু হামলার শঙ্কা। পরিস্থিতি যে দিকে মোড় নিচ্ছে, তাতে আরও অনেক দেশের সংঘাতে জড়িয়ে পড়া আশ্চর্যের নয়। আর সেটা যে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ ডেকে আনতে, তাতে একরকম নিশ্চিত প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা।

গতকাল (১৯ নভেম্বর) আমেরিকার থেকে পাওয়া মাঝারি পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে রাশিয়ার ব্রিয়ানস্ক এলাকায় হামলা চালায় ইউক্রেনীয় সেনা। হাতিয়ারটির পোশাকি নাম ‘আর্মি ট্যাকটিক্যাল মিসাইল সিস্টেম’ বা এটিএসিএমএস। ওয়াশিংটনের থেকে অনুমোদন মেলার পরই মস্কোর উপর এই ব্রহ্মাস্ত্র প্রয়োগের সাহস দেখাল কিভ।

আমেরিকার বিদায়ী প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সরকার ইউক্রেনের জন্য যে শেষ দফার যে হাতিয়ার বরাদ্দ করেন তার মধ্যে অন্যতম ছিল এটিএসিএমএস।

ব্রিয়ানস্কে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র আছড়ে পড়তেই পাল্টা রণকৌশল সাজাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ১৯ নভেম্বর বিশেষ একটি ডিক্রিতে সই করেন তিনি। সেখানে বলা হয়েছে, আনবিক শক্তিবিহীন শত্রু রাষ্ট্র যদি পরমাণু শক্তিধর দেশের সাহায্য পায় তা হলে আত্মরক্ষার্থে তার উপর পরমাণু হামলা চালাতে পারবে মস্কো।

প্রেসিডেন্ট পুতিন এই ডিগ্রিতে সই করায় পূর্ব ইউরোপের ‘নর্ডিক’ (মতান্তরে স্ক্যান্ডেনেভিয়া) দেশগুলিতে দেখা দেয়েছে আতঙ্ক। সেখানকার নরওয়ে, সুইডেন, ফিনল্যান্ড ও ডেনমার্কের সরকার নাগরিক ও সেনাকে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হতে বলেছে। এই চারটি রাষ্ট্রই আমেরিকার নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ‘নেটো’-র সদস্য। ফলে এদের সঙ্গে মস্কোর যুদ্ধ বাঁধলে তাতে যে যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, ফ্রান্স ও জার্মানির মতো শক্তিধর দেশগুলি জড়িয়ে পড়বে, তা বলাই বাহুল্য।

সুইডিশ প্রশাসনের পদস্থ আধিকারিক মিকেল ফ্রিসেল বলেছেন, ‘‘পরিস্থিতি যে দিকে গড়াচ্ছে, তাতে নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়া আশ্চর্যের নয়। তাই নাগরিকদের এর মোকাবিলার জন্য প্রস্তুতি নিতে বলা হচ্ছে।’’ লিফলেটে সাইবার হামলার সম্ভাবনার উল্লেখ রয়েছে। পাশাপাশি, আম সুইডিশবাসীকে অপচনশীল খাবার, জল, ওষুধ ও নগদ মজুত রাখতে বলা হয়েছে।

গত শতাব্দীর ছ’য়ের দশকে স্নায়ুযুদ্ধের সময়ে এই ধরনের লিফলেট ও পুস্তিকা আমজনতার মধ্যে বিলি করেছিল সুইডিশ সরকার। ২০১৮ সালে শেষবার এই ধরনের লিফলেট ও প্রচার পুস্তিকাগুলিকে সংশোধন করেছিল স্টকহোম। সেখানে নিজের বাড়িতেই চাষাবাদের কথা বলা হয়েছে। প্রায় ৬৩ বছর পর ব্যাপকভাবে যুদ্ধের প্রস্তুতিতে কোমর বেঁধেছে উত্তর ইউরোপের এই দেশ।

প্রায় একই ছবি দেখা গিয়েছে ফিনল্যান্ডেও। যুদ্ধ সংক্রান্ত সংকটের মোকাবিলায় নাগরিকদের সতর্ক করতে বিশেষ একটি ওয়েবসাইট চালু করেছে হেলসিঙ্কি। সেখানে সামরিক হামলা শুরু হলে কী ভাবে আত্মরক্ষা করা যাবে, তার বিস্তারিত উল্লেখ রয়েছে। বাসিন্দাদের বোঝার সুবিদার্থে ওয়েবসাইটটিতে একাধিক ভাষায় যাবতীয় তথ্য দেওয়া হয়েছে।

রাশিয়ার সঙ্গে ১ হাজার ৩৪০ কিলোমিটার লম্বা সীমান্ত রয়েছে ফিনল্যান্ডের। সেখানে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়ার কাজ শুরু করে হেলসিঙ্কি। সূত্রের খবর, ২০২৬ সালের মধ্যে শেষ হবে সেই কাজ। ওই বেড়া ১০ ফুট লম্বা হবে বলে জানা গিয়েছে। রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর মস্কোর সঙ্গে থাকা সীমান্তের আটটি চেক পয়েন্ট বন্ধ রেখেছে ফিনল্যান্ড।

সুইডেনের মতো নাগরিকদের মধ্যে লিফলেট বিলি করেছে নরওয়েও। অন্য দিকে সম্ভাব্য যুদ্ধের প্রস্তুতি ও সতর্কতার জন্য সরকারের থেকে ই-মেল পাচ্ছেন ড্যানিশরা। নর্ডিক এলাকার চারটি দেশই তাদের সামরিক বাজেট কয়েকগুণ বৃদ্ধি করতে চলেছে বলে দাবি করেছে একাদিক পশ্চিমী সংবাদমাধ্যম।

প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের একাংশের দাবি, রুশ আক্রমণের আশঙ্কায় এবার খোলাখুলিভাবে স্ক্যান্ডেনেভিয়ার দেশগুলি ইউক্রেনকে সেনা ও হাতিয়ার দিয়ে সাহায্য করতে পারে। শেষ পর্যন্ত এই পদক্ষেপ করলে যুদ্ধের গতি বদলাতে পারে। মস্কো অবশ্য জানিয়ে দিয়েছে, কিভ সেই সাহায্য পেলেও তাদের অপারেশনে কোনও প্রভাব পড়বে না। বরং দ্রুত তা শেষ করা যাবে বলে আত্মবিশ্বাসী পুতিন প্রশাসন।