অনলাইন ডেস্ক:
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে ঢাকার আশুলিয়ায় ছয় তরুণের মরদেহ পোড়ানোর মামলায় মুকুল চোকদার নামে পুলিশের এক সদস্যকে গ্রেফতার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে তাকে আগামী ২৬ জানুয়ারি ট্রাইব্যুনালে হাজির করার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল এ আদেশ দেন। ট্রাইব্যুনালের অন্য দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
শুনানিতে ছিলেন ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম ও প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার হুসাইন। এসময় প্রসিকিউটর বি এম সুলতান মাহমুদসহ অন্য প্রসিকিউটররা উপস্থিত ছিলেন।
শুনানিতে প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার হুসাইন ট্রাইব্যুনালকে জানান, পুলিশ সদস্য মুকুল চোকদার দোহার থানায় কর্মরত ছিলেন। সেখান থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ ঘটনায় কিশোরগঞ্জ থেকে আরও একজন পুলিশ সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় আশুলিয়ায় ৬ তরুণকে পোড়ানোর অভিযোগে গত ২৪ ডিসেম্বর ট্রাইব্যুনাল ঢাকা-১৯ আসনের সাবেক এমপি সাইফুল ইসলাম ও চার পুলিশকে অবিলম্বে গ্রেফতারের নির্দেশ দেন। আজ তাদের বিষয়ে তদন্তের অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়। এরই ধারাবাহিকতায় গ্রেফতারের পর মুকুলকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।
শুনানি শেষে চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, কিশোরগঞ্জ থেকে গ্রেফতার করা পুলিশ সদস্যের নাম মালেক। গতকাল বুধবার আদালত বন্ধ থাকায় সংশ্লিষ্ট ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে তাকে উপস্থাপন করা হয়। তিনি এখন কিশোরগঞ্জে বন্দি আছেন। যথাযথ প্রক্রিয়ায় ট্রাইব্যুনালে নথি পাঠানো হবে, তারপর এ মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হবে।
সবচেয়ে নৃশংস ঘটনাগুলোকে প্রাধান্য দিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, গত ৫ আগস্ট আশুলিয়ায় ছয় তরুণকে গুলি করে হত্যার পর পুলিশ ভ্যানে রেখে আগুন ধরিয়ে দেন পুলিশ সদস্যরা। তখনো একজন জীবিত ছিলেন। জীবিত থাকা অবস্থায় তার গায়ে পেট্রল ঢেলে আগুন দেওয়া হয়। এই নৃশংসতার সঙ্গে যেসব ব্যক্তি সরাসরি জড়িত, তাদের মধ্যে দুজনকে গতকাল গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের একজন কনস্টেবল মুকুল চোকদার।
তাজুল ইসলাম বলেন, মুকুল চোকদার কনস্টেবল হলেও ওই ভয়াবহ ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত, তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির দিনই পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। গতকাল বন্ধের দিন থাকায় আজ তাকে ট্রাইব্যুনালে সোপর্দ করা হয়েছে।
চিফ প্রসিকিউটর বলেন, সেখানে (সাভারের আশুলিয়া) তখন যিনি ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ছিলেন, তিনি পালিয়ে গেছেন। তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি আছে। তার ওপরে যে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) ও পুলিশ সুপার (এসপি) ছিলেন, তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে। তার ওপর আইজিপি ও প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি আছে। সুপিরিয়র কমান্ড স্ট্রাকচার (সর্বোচ্চ নির্দেশদাতা) থেকে নিচ পর্যন্ত গেছে। তারা মাঠপর্যায়ে এগুলো বাস্তবায়ন করেছেন।
গতকাল বুধবার সকালে এস আই মালেককে কিশোরগঞ্জ এবং কনস্টেবল মুকুলকে দোহার থেকে গ্রেফতার করা হয়। এর আগে গত মঙ্গলবার জুলাই-আগস্টে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় আশুলিয়ায় ছয়জনের মরদেহ পুড়িয়ে ফেলার ঘটনায় সাবেক সংসদ সদস্য সাইফুল ইসলাম ও চার পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন ট্রাইব্যুনাল।
এর আগে গত ৫ আগস্ট আশুলিয়ায় নিহত সবুরের ভাই এবং সজলের মায়ের আইনজীবী হুজ্জাতুল ইসলাম খান ১১ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থায় এ বিষয়ে অভিযোগ দাখিল করেছিলেন।
অভিযোগে বলা হয়, গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বিকেল আনুমানিক ৪টা বা সাড়ে ৪টার দিকে আশুলিয়া থানার সব পুলিশ সদস্য এবং ঢাকা ডিবি উত্তরের সদস্যরা তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট আসামিদের আদেশে আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতাকে সমূলে বা আংশিক নির্মূলের হীন উদ্দেশে বিজয় উল্লাসরত ছাত্র-জনতার ওপর নির্বিচারে গুলি চালিয়ে আস-সাবুর, আবদুল মান্নান, মিজানুর রহমান, তানজিল মাহমুদ সুজয়, সাজ্জাদ হোসেন সজল ও বায়েজিদকে হত্যা করে এবং আশুলিয়া থানার সামনেই পুলিশ ভ্যানে নিহতদের মরদেহ পুড়িয়ে দেয়। অপরাধের ধরনে এটিকে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের শামিল বলা হয়েছে।
আরও পড়ুন
শীতে শিশুদের সুস্থ রাখবে যেসব খাবার
দীর্ঘদিন পর ফেরা তারকারা
বছরজুড়ে শিক্ষায় অস্থিরতা, শিক্ষার্থীদের হাত ধরেই ‘বিজয়’