October 11, 2025

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Tuesday, September 30th, 2025, 5:42 pm

​ আশ্রায়নের ঘর আছে, মানুষ নেই

রংপুর ব্যুরো:

রংপুরের পীরগাছার প্রতিপাল গ্রামের আশ্রায়ন প্রকল্পের ঘরে এখন আর কেউ থাকেনা। ২৮টি ঘরে সবগুলো তালাবদ্ধ। ফলে ঝোপ-ঝাড়ে ভরে গেছে ঘরগুলো । কোথাও ধরেছে ফাটল, কোথাও দেখা দিয়েছে ভাঙ্গণ। এ প্রকল্পে যাওয়ার নেই কোন রাস্তা, নেই জীবিকার ব্যবস্থাও। এসব কারণে দীর্ঘদিন ধরে সেখানে আর কেউ থাকেন না। ফিরে গেছেন পুরোনো অস্থায়ী ঠিকানায়। অপরিকল্পিত ভাবে একটি নদীর পাড়ে এসব ঘর নির্মাণ করায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করেন সচেতন মহল।

জানা যায়, ২০২১-২০২২ অর্থবছরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রায়ন প্রকল্প-২ এর আওতায় উপজেলার তাম্বুলপুর ইউনিয়নের প্রতিপাল গ্রামে বুড়াইল নদীর পাড়ে ভুমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের থাকার জন্য ২৮টি ঘর নির্মাণ করা হয়। যে ঘরগুলো পতিত হাসিনা সরকারের উপহারের ঘর হিসেবে পরিচিতি ছিল। যার প্রতিটি ঘরের জন্য বরাদ্দ ছিল ১লাখ ৭১হাজার টাকা। বেশিরভাগ ঘর বরাদ্দ প্রদান করা হয় পীরগাছা রেলওয়ে স্টেশন এলাকার অস্থায়ী বাসিন্দাদের। তবে বরাদ্দ পেয়ে সেসব ঘরে উঠার পর বছর খানেক যেতে না যেতেই সেখান থেকে একে একেচলে গেছে সবাই।

সরেজমিনে সেই প্রকল্পে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিটি ঘর তালাবদ্ধ। অল্প কিছু ঘরে যাওয়ার জন্য রাস্তা থাকলেও বেশিরভাগ ঘরে যাওয়ার রাস্তা নেই। অন্যের বাড়ির আনাচে-কানাচে দিয়ে যেতে হয়। দীর্ঘদিন ধরে কেউ না থাকায় সেগুলো লতাপাতা, ঝোপঝাড়ে ভরে গেছে। স্থানীয়রা ঘরগুলোর বারান্দায় খড়, লাকড়ি স্তুপ করে রেখেছেন। বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন, নেই টিউবওয়েল। বিশেষ করে যে নদীর পাড়ে প্রকল্পটি করা হয়েছে সেই নদী পূনঃখননের কারনে মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে ঘরগুলো। ভেঙে পড়ছে অবকাঠামো।

এ সময় কথা হয় কয়েকজন স্থানীয় ব্যক্তির সাথে। তাদের অভিযোগ, সেখানকার স্থানীয় ভুমিহীনদের ঘর বরাদ্দ না দিয়ে বাইরের এলাকার মানুষদের বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। রাস্তা নাই এ জন্য তারা কিছুদিন থাকার পর চলে গেছে।

অনেক খোঁজাখুঁজি করার পর পীরগাছা রেলওয়ে স্টেশন এলাকায় দেখা হয় ওই আশ্রায়ন প্রকল্পের কয়েকজন বাসিন্দার সাথে। তারা অভিযোগ করে বলেন, সেখানে জীবিকার কোন ব্যবস্থা নাই। অনেকে ভ্যান-রিক্সা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। কিন্তু রাস্তা না থাকায় তারা আর সেখানে থাকেন না। এছাড়াও নিম্নমানের নির্মাণের কারনে অনেক ঘরে ফাটল ধরেছে এজন্যও অনেকে সেখান থেকে চলে এসেছেন।

ষ্টেশনের ভ্রাম্যমান কলা বিক্রেতা প্রকাশ চন্দ্র মোহন্ত জানান, তার তিনটি সন্তান। তিনজনই স্টেশনের পাশে স্কুলে পড়ে। আশ্রায়ন প্রকল্পের দূরত্ব স্কুল থেকে বেশ দূরে। প্রতিদিন তিনিসহ ৪ জনের যাতায়াত খরচ কুলোতে না পেরে তিনি আর সেখানে থাকেন না।

এ বিষয়ে তাম্বুলপুর ইউপি চেয়ারম্যান বজলুর রশিদ মুকুল জানান, প্রকল্পে যাওয়ার জন্য নদীর পাড় বেঁধে রাস্তা তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে । এরপরও সেখানে কেউ না থাকলে নোটিশ দিয়ে নতুন করে ভুমিহীনদের মাঝে সেগুলো বরাদ্দ দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।

পীরগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মো. রাসেল বলেন, বিষয়টি আমি শুনেছি। সেখানে রাস্তা তৈরী করা হবে। জীবিকার ব্যবস্থাসহ আরো কিছু সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তারপরও যদি কেউ না থাকে তহালে নতুন করে ভূমিহীনদের সেগুলো বরাদ্দ দেওয়া হবে।