December 23, 2025

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Tuesday, November 11th, 2025, 6:30 pm

আ. লীগ, জাপা ও ১৪ দলকে ছাড়া আমি গামছা নি‌য়ে নির্বাচন করতে যাব না : কাদের সিদ্দিকী

সখীপুর (টাঙ্গাইল) প্রতি‌নি‌ধি:

কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বী‌রোত্তম বলেছেন, ‘বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগ, মাওলানা ভাসানীর আওয়ামী লীগ, মুক্তিযুদ্ধের আওয়ামী লীগ, বাংলাদেশের মানুষের আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগের ভোটাররা যদি ভোট দিতে না পারে, আমি গামছা (তাঁর দলের প্রতীক) নিয়ে নির্বাচন করতে যাব না। জাতীয় পার্টির লাঙ্গল, তারা যদি ভোট দিতে না পারে, আমি নির্বাচনে যাব না।’

সোমবার (১০ নভেম্বর) বিকেলে টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার বহেড়াতৈল গণ উচ্চবিদ্যালয় মাঠে এক জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে কাদের সিদ্দিকী এসব কথা বলেন। ব‌হেড়া‌তৈল ইউ‌নিয়ন জনতা লী‌গের দ্বিবার্ষিক সম্মেলন উপলক্ষে আয়ো‌জিত সভায়

কাদের সিদ্দিকী আরও বলেন, ‘আমরা জনগণের অধিকার চাই। ভোটাধিকার চাই। যখন সবাই পাকিস্তান চেয়েছিল, তখন জামায়াত ব্রিটিশদের গোলামি করেছে। যখন আমরা সবাই বাংলাদেশ স্বাধীন করতে চেয়েছি, তখন এই জামায়াত পাকিস্তানের পক্ষে ছিল, খুনখারাবি করেছে। সেই জামায়াত, তাকে নিয়ে ইলেকশন করলে আমি ইলেকশন করব?’

আওয়ামী লীগ প্রসঙ্গে কাদের সিদ্দিকী বলেন, ‘এখনো হিসাব করলে দেখা যায়, ৪৩ পার্সেন্ট ভোট আওয়ামী লীগের আছে। ১৪ পার্সেন্ট জাতীয় পার্টির আছে, আমাদেরও তিন পার্সেন্টের মতো ভোট হয়েছে। এখন ইউনূস সরকার যাদের নিয়ে মিটিং করে, সেখানে তো আমাদের ডাকে নাই! আর এখন আমাদের ডাকলেই যাব? আর না।’

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের উদ্দেশে কাদের সিদ্দিকী বলেন, ‘ইউনূস সাহেব, আপনাকে আমি অনেক বড় মানুষ মনে করেছিলাম। শেখ হাসিনা যখন আপনাকে সুদখোর বলত, আমি আপনার পাশে দাঁড়িয়েছিলাম। যদি আমি পাশে না দাঁড়াতাম, তবে আপনার গ্রামীণ ব্যাংক মাটির সঙ্গে মিশে যেত। আপনার গ্রামীণ ব্যাংক না শুধু, গ্রামীণ নামে যা বানিয়েছেন, সবকিছুর বিপদ আছে। আপনার কান্না শেষ হবে না। আপনি বাংলার মানুষকে চেনেন না। এনজিও চালানো আর দেশ চালানো এক কথা না। সে জন্য বলছি, এখনো সময় আছে, আপনি যদি সবাইকে সঙ্গে নিয়ে নিরপেক্ষ ও সন্তোষজনক একটা নির্বাচন করতে পারেন, এত কিছুর পরও আপনার নাম থাকবে, আপনাকে মানুষ সম্মান করবে। আর যদি মীরজাফর হতে চান, ঘসেটি বেগম হতে চান, তাহলে যা করছেন, তা করেন, বেশি দিন লাগবে না।’

কাদের সিদ্দিকী বলেন, ‘আমি শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ করি না। আমি বঙ্গবন্ধু করি, আমি মুক্তিযুদ্ধ করি, আমি বাংলাদেশের স্বাধীনতা চাই। আমি জয় বাংলা করি। সরকার বাহাদুরকে বলে গেলাম, জয় বাংলা বলা যদি অপরাধ হয়, তাহলে আমাকে প্রথম গ্রেপ্তার করেন। সেখানেও আমি বলব, আমি জয় বাংলা বলে মুক্তিযুদ্ধ করেছি, জয় বাংলা বলেই আমার জীবন দিয়ে যেতে চাই। আমার নেতা বঙ্গবন্ধু, আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা। মুক্তিযুদ্ধ আমার ধ্যান, মুক্তিযুদ্ধ আমার চেতনা, বঙ্গবন্ধু আমার চৈতন্য।’

শেখ হাসিনার প্রসঙ্গ এনে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বলেন, ‘কম বিরক্ত হয়ে শেখ হাসিনাকে তাড়ায় নাই। মানুষ একেবারে বিরক্ত হয়ে গিয়েছিল। শেখ হাসিনাকে তাড়ানোর ক্ষমতা এই আট-দশটা বাচ্চা ছেলের ছিল না। বিএনপি পারে নাই, জামায়াত পারে নাই, কিন্তু শেখ হাসিনার পতন হয়েছিল। আমি বিশ্বাস করি, এটা আল্লাহর তরফ থেকে হয়েছে। তিনি যে পরিমাণ অত্যাচার করেছেন, মানুষকে অসম্মান করেছেন, এর জন্য আল্লাহর তরফ থেকে তিনি পরাজিত হয়েছেন।’

কাদের সিদ্দিকী বলেন, ‘গত ১৫-১৬ বছরে শেখ হাসিনা যে অত্যাচার করেছেন, ব্যাটারিচালিত গাড়ি স্ট্যান্ড, সিএনজি স্ট্যান্ড থেকে যে পরিমাণ চান্দা উঠিয়েছেন, তার ১০ গুণ এই ১২-১৪ মাসে অন্য দলেরা করেছে। শেখ হাসিনার পতনের সময় এক নম্বর দল ছিল ধানের শীষ। এখন তারা কিন্তু পেটের বিষ। এ কারণে আমি আগেও বলেছিলাম, যে কারণে মানুষ বিক্ষুব্ধ হয়ে শেখ হাসিনাকে সরিয়েছে, ঠিক একই কাজ করলে বিএনপিকেও মানুষের ভুলে যেতে কষ্ট হবে না।’

জনসভায় ইউনিয়ন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা মতিয়ার রহমান সভাপতিত্ব করেন। এতে বক্তব্য দেন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের টাঙ্গাইল জেলা কমিটির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আবু সালেক হিটলু, উপজেলা কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মেয়র সানোয়ার হোসেন সজীব, কালিহাতী কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সাধারণ সম্পাদক ইথার সিদ্দিকী, বাসাইলের সাবেক মেয়র রাহাত হাসান টিপু, উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা বিল্লাল হোসেন, আব্দুল্লাহ মিয়া, সহসভাপতি সানোয়ার হোসেন মাস্টার, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আশিক জাহাঙ্গীর, আলমগীর সিদ্দিকী, আবু জাহিদ রিপন, দেলোয়ার হোসেন মাস্টার, আঁখি আতোয়ার প্রমুখ।