অনলাইন ডেস্ক :
ইরাক ও সিরিয়ায় কুর্দিপন্থি পিকেকে যোদ্ধাদের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান সমাপ্ত করার ঘোষণা দিয়েছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোগান। তিনি বলেছেন, আমরা খুব শিগগিরই উত্তর ইরাকে অভিযান শেষ করব। আমাদের সীমান্তের ভেতরে হামলা করার সক্ষমতা আর কুর্দি বাহিনীর নেই। গত শনিবার মিলিটারি একাডেমির স্নাতকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এই ঘোষণা দেন। কাতারভিত্তিক সংবাদ আলজাজিরার তরুণ সামরিক স্নাতকদের এরদোগান বলেন, কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টি (পিকেকে) ইরাক ও সিরিয়ায় সম্পূর্ণভাবে আটকা পড়েছে।
তুর্কি বাহিনী সর্বত্র তাদের ছাড়িয়ে গেছে। আমরা সিরিয়ার সঙ্গেও আমাদের দক্ষিণ সীমান্তের নিরাপত্তা বলয়ের ধসে পড়া পয়েন্টগুলো সম্পন্ন করব। তুরস্কের ভাষ্যমতে, ওয়াইপিজি এবং পিওয়াইডি সাবেক পিকেকে সংশ্লিষ্ট সংস্থা এবং তারা সশস্ত্র অভ্যুত্থানের মাধ্যমে বিচ্ছিন্নতাবাদী কার্যক্রম পরিচালনা করছে। তুরস্ক, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) পিকেকে-কে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসেবে ঘোষণা করেছে। ১৯৮৪ সালে তুর্কি রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছিলেন এ গোষ্ঠীর সদস্যরা। প্রসঙ্গত, ২০১৬ সাল থেকে উত্তর সিরিয়ার সীমান্ত এলাকা থেকে কুর্দি বাহিনীকে বিতাড়িত করার জন্য ধারাবাহিক স্থল অভিযানও চালিয়ে আসছে আঙ্কারা।
উত্তর ইরাকের সঙ্গে তুর্কি সীমানা সুরক্ষিত করার জন্য ২০২২ সালের এপ্রিলে সামরিক অভিযান ক্ল-লক শুরু করে তুর্কি বাহিনী। আঙ্কারার দাবি, সীমান্তবর্তী এই অঞ্চল থেকে তাদের দেশে হামলা চালিয়ে আসছে কুর্দি বিচ্ছিন্নতাবাদীরা। মূলত তুরস্ক এবং কুর্দিদের মধ্যে সংঘাতের ইতিহাসটা বহু পুরনো। তুরস্কের জনসংখ্যার ১৫ থেকে ২০ ভাগ কুর্দি। কয়েক প্রজন্ম ধরে তুরস্কের কর্তৃপক্ষ কুর্দিদের বিষয়ে কঠোর নীতি অনুসরণ করেছে। ১৯২০ এবং ১৯৩০-এর দশকে কুর্দিদের বিক্ষোভের উত্থানের সময় অনেক কুর্দি পুনর্বাসিত হয়। কুর্দি নাম এবং পোশাকের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। কুর্দি ভাষা ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়। এমনকি কুর্দিদের আলাদা জাতিগত পরিচয়ও অস্বীকার করা হয়। কুর্দিদের সে সময় বলা হতো ‘পাহাড়ি তুর্কি।’
১৯৭৮ সালে আবদুল্লাহ ওচালান পিকেকে গঠন করেন, যাদের প্রধান দাবি ছিল তুরস্কের মধ্যে স্বাধীন একটি রাষ্ট্র গঠন। ৬ বছর পর সশস্ত্র সংগ্রাম শুরু করে ওই সংগঠনটি। এখন পর্যন্ত ৪০ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন এবং লাখ লাখ কুর্দি বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। তবে ১৯৯০-এর দশকে পিকেকে স্বাধীনতার দাবি বাদ দিয়ে সাংস্কৃতিক এবং রাজনৈতিক স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে আন্দোলন চালায়। ২০১৩ সালে গোপন আলোচনার পর যুদ্ধবিরতির সমঝোতায় আসে তারা। ২০১৫ সালের জুলাইয়ে যুদ্ধবিরতি অকার্যকর হয়ে পড়ে যখন সিরিয়া সীমান্তের কাছে কুর্দি অধ্যুষিত শহর সুরুকে আত্মঘাতী বোমা হামলায় ৩৩ জন তরুণ কর্মী নিহত হন। আইএসকে ওই বোমা হামলার জন্য দায়ী করা হয়। সে সময় পিকেকে তুর্কি কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে হামলায় সহায়তার অভিযোগ আনে এবং তুরস্কের সেনাবাহিনী ও পুলিশের ওপর হামলা চালায়। এর ধারাবাহিকতায় তুর্কি সরকার পিকেকে এবং আইএসের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে।
আরও পড়ুন
হাসিনার মতো ‘বিশ্বস্ত মিত্র’কে হারানোর ঝুঁকি নেবে না ভারত
উড়োজাহাজ বিধ্বস্তে ৩৮ জনের মৃত্যু, আজারবাইজানে রাষ্ট্রীয় শোক পালন
বিশ্বে ক্ষুধার্ত মানুষ বাড়ছে, কমছে ধনী দেশের সাহায্য