September 15, 2025

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Thursday, March 27th, 2025, 11:36 am

ইসলামী ব্যাংকের এজেন্ট শাখায় দেড় কোটি টাকা আত্মসাৎ, দিশেহারা গ্রাহক

কৌশলে গ্রাহকের আঙ্গুলের ছাপ নিয়ে টাকা তুলে নিতেন ক্যাশিয়ার

আক্কেলপুর (জয়পুরহাট) প্রতিনিধিঃ জয়পুরহাটের আক্কেলপুরে ইসলামী ব্যাংকের এজেন্ট শাখা থেকে ডিজিটাল প্রতারণার মাধ্যমে গ্রাহকের দেড় কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন ক্যাশিয়ার (কোষাধ্যক্ষ) মাসুদ রানা। তিনি লেনদেনের মোবাইল ম্যাসেজ বন্ধ করে কৌশলে গ্রাহকের আঙ্গুলের ছাপ নিয়ে একাউন্ট থেকে টাকা তুলে নিতেন। ঘটনাটি জানাজানির পর ভুক্তভোগী গ্রাহকেরা উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে নিয়ে কর্মকর্তাদের অবরুদ্ধ করেন। পরে তিনি উপস্থিত সাংবাদিকসহ সকলের সামনে টাকা গুলো আত্মসাতের বিষয়টি অকপটে স্বীকার করেন। তিনি ছয় মাস ধরে বিভিন্ন হিসাব থেকে কৌশলে এসব টাকা সরিয়ে নিয়ে গ্রামের বাড়িতে জমি, পুকুর ও মুরগির খামার এবং ইসলামী ব্যাংক থেকে আরও একটি এজেন্ট নিয়েছেন।

মঙ্গলবার সকাল থেকে তালাবদ্ধ এজেন্ট শাখার সামনে ক্ষতিগ্রস্থ গ্রাহকদের ভির দেখা গেছে।

এঘটনায় আক্কেলপুর ভুক্তভোগী গ্রাহক দারুল কোরআন মাদ্রাসার মুহতামিম (প্রধান শিক্ষক) ফিরোজ আহম্মেদ বাদি হয়ে সোমবার সকালে থানায় মামলা করলে তিন জনকে গ্রেপ্তার করে থানা পুলিশ। তারা হলেন, ক্যাশিয়ার মাসুদ রানা, ইনচার্জ রিওয়ানা ফারহানা সিমা ও এজেন্ট মালিক মো. জাহিদুল ইসলাম আনজু।

জানা গেছে, আক্কেলপুর দারুল কোরআন মাদ্রাসার শিক্ষক আব্দুল মান্নান মাদ্রাসার আয় ব্যায়ের হিসাব করার জন্য ইসলামী ব্যাংক জয়পুরহাট শাখা থেকে হিসাব বিবরণী (স্টেমেন্ট) নিয়ে এজেন্ট ব্যাংকের হিসাবের সাথে মাদ্রাসার লেনদেনের গরমিল পান। পরে গত রোববার ওই মাদ্রাসার মুহতামিম (প্রধান শিক্ষক) ফিরোজ আহম্মেদকে সাথে নিয়ে আক্কেলপুর এজেন্ট ব্যাংকে এসে ব্যালেন্স চেক করলে দেখেন একাউন্ট থেকে ৩৯ লাখ টাকা উধাও।

তাৎক্ষণিক মাদ্রাসার সেক্রেটারী ও বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল মোমিন শাখায় এসে দেখেন তার হিসাব থেকেও টাকা উধাও হয়েছে। বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে জানালে এজেন্ট শাখায় এসে কর্মকর্তাদের অবরুদ্ধ করেন। ক্যাশিয়ার (কোষাধ্যক্ষ) মাসুদ রানা গত ছয় মাস ধরে গ্রাহকদের কম্পিউটার দোকান থেকে ভুয়া হিসাব বিবরণী (স্টেমেন্ট) তৈরী করে দিয়ে নেটওয়ার্কের সমস্যা দেখিয়ে বার বার গ্রাহকের আঙ্গলের ছাপ নিয়ে তার ইচ্ছা মতো অংক বসিয়ে টাকা হাতিয়ে নেয়। গ্রাহকরা ক্ষুদে বার্তা (ম্যাসেজ) না আসার কারণ জানতে চাইলে কারিগরি ত্রæটি আছে বলে জানায় ওই ব্যাংকে প্রায় দুই হাজার গ্রাহকের একাউন্ট রয়েছে। রহমানিয়া ভ্যারাইটি স্টোরের স্বত্বাধিকারী মো. জাহিদুল ইসলাম গত ২০১৮ সালে উপজেলা পরিষদের সামনে মন্ডল মার্কেটের ২য় তলায় অফিস ভাড়া নিয়ে ইসলামী ব্যাংকের জয়পুরহাট শাখার অধীনে এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রম শুরু করেছিলেন।

আক্কেলপুর দারুল কোরআন মাদ্রসার মুহতামিম (প্রধান শিক্ষক) ফিরোজ আহম্মেদ বলেন, গত কয়েক দিন আগে মাদ্রাসার হিসাব থেকে টাকা উত্তোলনের সময় সার্ভারে সমস্যা হচ্ছে বলে একাধিকবার আঙ্গুলের ছাপ নেয় ক্যাশিয়ার মাসুদ রানা। টাকা তোলার পর মোবাইলে কোন ম্যাসেজ না আসায় সন্দেহ হলে জয়পুরহাট প্রধান শাখা থেকে হিসাব বিবরণী (স্টেটমেন্ট) তুলে দেখি একাউন্টে সামান্য টাকা রেখে সকল টাকা উধাও হয়েছে।

মঙ্গলবার সকাল থেকে এজেন্ট শাখার সামনে বসে আছেন উপজেলার গোপীনাথপুর থেকে আসা লিপি বেগম। তিনি বলেন, এই শাখায় আমি ৩ লাখ টাকা স্থায়ী আমানত রেখেছিলাম। আর চলতি হিসাবে ৮ লাখ টাকা ছিল। আমার হিসাব থেকে মোট ১১ লাখ টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। টাবা গুলো ফেরত পাওয়ার আশায় এখানে এসেছি।

অভিযুক্ত ক্যাশিয়ার মাসুদ রানা ঘটনা স্বীকার করে বলেন, আমি গত ছয় মাস ধরে বিভিন্ন থেকে ডিজিটাল কৌশলে গ্রাহকের আঙ্গুলের ছাপ নিয়ে গ্রাহকের চাহিদার অতিরিক্ত টাকা উত্তোলন করেছি। টাকা গুলো দিয়ে আমার নিজ বাড়িতে জমি, পুকুর, মুরগীর খামার, ডিলারশীপ ব্যবসা ও একটি এজেন্ট ব্যাংক নিয়েছি। আমি টাকা গুলো নষ্ট না করে কাজে লাগিয়েছি।

ইসলামী ব্যাংক জয়পুরহাট শাখার ব্যাবস্থাপক হাবিবুর রহমান বলেন, এখন পর্যন্ত দেড় কোটি টাকারও বেশি আত্মসাতের তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। তবে এ সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। এ ঘটনায় ব্যাংকের পক্ষ থেকে গ্রাহকদের সাথে কথা বলে তদন্ত করা হচ্ছে। আপাতত ওই এজেন্ট শাখায় লেনদেন বন্ধ রাখা হয়েছে। গ্রাহকদের খোয়া যাওয়া টাকার সঠিক পরিমান বেড় করে টাকা গুলো ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য আইনগত প্রক্রিয়া চলমান আছে।

আক্কেলপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাসুদ রানা বলেন, দারুল কোরআন মাদ্রসার মুহতামিম (প্রধান শিক্ষক) ফিরোজ আহম্মেদ বাদি হয়ে থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। এজেন্ট স্বত্বাধিকারী, ইনচার্জ ও ক্যাশিয়ারকে (কোষাধ্যক্ষ) গ্রেপ্তার করার পর তারা টাকা আত্মসাতের বিষয়টি ক্যাশিয়ার স্বীকার করেছে। তাদের জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।