ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নিরাপত্তা ঝুঁকি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) কাছে লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছেন দুই সম্ভাব্য সংসদ সদস্য প্রার্থী। তাঁরা হলেন—কিশোরগঞ্জ-৪ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী কাজী রেহা কবির সিগমা এবং আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির সাধারণ সম্পাদক ও বরিশাল-৩ (বাবুগঞ্জ-মুলাদী) আসনে দলীয় প্রার্থী ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ।
ইসি সূত্রে জানা যায়, বুধবার (১৭ ডিসেম্বর) ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ রাজধানীর আগারগাঁওয়ে অবস্থিত নির্বাচন ভবনে গিয়ে নির্বাচন কমিশন বরাবর একটি লিখিত আবেদন জমা দেন।
আবেদন জমা দেওয়ার পর তিনি নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ এবং ইসির জ্যেষ্ঠ সচিব আখতার আহমেদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। পরে কাজী রেহা কবির সিগমা প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিন, নির্বাচন কমিশনার আবদুর রহমানেল মাছউদ ও আনোয়ারুল ইসলাম সরকারের সঙ্গে দেখা করে তাঁর লিখিত অভিযোগ পেশ করেন।
বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশনের সংশ্লিষ্ট নির্বাচন ব্যবস্থাপনা শাখা বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
সিইসির কাছে দেওয়া লিখিত অভিযোগে কাজী রেহা কবির সিগমা উল্লেখ করেন, আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সবার জন্য নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু ও নির্বিঘ্ন করার বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকার, নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসনের অঙ্গীকার থাকলেও বাস্তবে সেই প্রক্রিয়া প্রশ্নবিদ্ধ ও বাধাগ্রস্ত করার উদ্যোগ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। এ বিষয়ে সুষ্ঠু তদন্ত করে সংশ্লিষ্ট ও দায়ীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, কিশোরগঞ্জ-৪ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়ে তিনি এলাকায় গণসংযোগ শুরু করেছেন এবং এতে ব্যাপক সাড়া পেয়েছেন। তাঁর পক্ষে কর্মী-সমর্থকেরাও সক্রিয়ভাবে কাজ করছেন। তবে আইনসম্মত এই গণসংযোগ কার্যক্রমে ভয়ভীতি সৃষ্টি করে তা ব্যাহত করার লক্ষ্যে কিশোরগঞ্জ জেলার অষ্টগ্রাম থানা-পুলিশ অনাকাঙ্ক্ষিত তৎপরতা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, ১৬ ডিসেম্বর দিবাগত রাত আনুমানিক ১টার দিকে তাঁর এক নিরপরাধ কর্মীকে গ্রেপ্তার করে একটি ভুয়া মামলায় কিশোরগঞ্জ আদালতে পাঠানো হয়েছে। এতে কর্মীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে এবং নির্বাচনী কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
সিগমা জানান, তাঁর কর্মী মো. কিয়ামত আলী (৫০) একজন নিরীহ ও জনপ্রিয় ব্যক্তি। তাঁর বিরুদ্ধে আগে কোনো মামলা বা অভিযোগ ছিল না। অথচ ২০২৪ সালের ৯ নভেম্বর দায়ের করা একটি মামলায় তাঁকে আসামি দেখানো হয়েছে, যেখানে তিনি এজাহারভুক্ত নন। অষ্টগ্রাম থানা থেকে মাত্র ১০ মিনিট হাঁটার দূরত্বে তাঁর বাড়ি হলেও গত এক বছরে পুলিশ কখনো তাঁকে খোঁজেনি বা জিজ্ঞাসাবাদ করেনি। এতে প্রমাণিত হয়, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে এবং কর্মীদের ভয় দেখাতেই এ গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।
এ ঘটনায় দ্রুত তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে আসন্ন নির্বাচনকে প্রশ্নাতীত ও সুষ্ঠু করার উদ্যোগ নিতে নির্বাচন কমিশনের প্রতি অনুরোধ জানান কাজী রেহা কবির সিগমা।
পরে গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, পুলিশি তৎপরতায় তিনি ও তাঁর কর্মীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। এ কারণে নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসনের কাছে সার্বিক সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে।
প্রার্থীদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রসঙ্গে নির্বাচন কমিশনের পদক্ষেপ জানতে চাইলে ইসির সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ বলেন, ব্যারিস্টার ফুয়াদ কমিশনে এসেছিলেন এবং তাঁর অভিযোগ ছিল—পুলিশের কাছ থেকে তিনি প্রয়োজনীয় সহায়তা পাচ্ছেন না। নির্বাচন কমিশন সব প্রার্থীর নিরাপত্তার বিষয়টি সামগ্রিকভাবে বিবেচনায় নিচ্ছে বলে জানান তিনি।
উল্লেখ্য, নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত তপশিল অনুযায়ী আগামী বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি সকাল সাড়ে ৭টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত একটানা ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। একই দিন ও একই সময়ে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন সংক্রান্ত গণভোটও অনুষ্ঠিত হবে।
এনএনবাংলা/

আরও পড়ুন
হাসিনার অনুসারীদের ‘অস্বাভাবিক’ জামিন নিয়ে আইন উপদেষ্টার উদ্বেগ
বায়ুদূষণে বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ায় বছরে ১০ লাখ মৃত্যু: বিশ্বব্যাংক
খাস দিলে দোয়া করলে হাদি অবশ্যই সুস্থ হয়ে ফিরবেন: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা