August 13, 2025

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Wednesday, August 13th, 2025, 6:04 pm

উজানের ঢলে তিস্তার পানি বৃদ্ধি, রংপুরের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত

আব্দুর রহমান মিন্টু,রংপুর :

টানা কয়েকদিনের ভারি বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে নদীর পানি বিপৎসীমার ৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।গতকাল বুধবার (১৩ আগস্ট) সকালে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ডালিয়া ডিভিশনের উপসহকারী প্রকৌশলী (পানি শাখা) তহিদুল ইসলাম। তিনি জানান উজানের ভারি বর্ষণ অব্যাহত থাকায় পানি আরও বাড়তে পারে। ইতোমধ্যেই নিম্নাঞ্চল ও চরগ্রামগুলো তলিয়ে গেছে। সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি কমাতে তিস্তা ব্যারাজের সবগুলো—মোট ৪৪টি ¯ুইসগেট—খোলা রাখা হয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, দেশের সর্ববৃহৎ সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে সকাল ৬টায় এ পয়েন্টে পানির সমতল রেকর্ড করা হয়েছে ৫২ দশমিক ২২ মিটার, যা বিপৎসীমার ৭ সেন্টিমিটার ওপরে। ওই পয়েন্টে বিপৎসীমা ধরা হয় ৫২ দশমিক ১৫ সেন্টিমিটার। সকাল ৯ টায় নদীর পানি বিপৎসীমার ৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

এদিকে, তিস্তার পানি বৃদ্ধিতে রংপুরের গঙ্গাচড়া, কাউনিয়া, পীরগাছা এবং লালমনিরহাট এবং কুড়িগ্রামের নদীপারের নিম্নাঞ্চলে পানি ঢুকে পড়েছে। এছাড়াও নীলফামারীর ডিমলার পূর্ব ছাতনাই, খগাখাড়িবাড়ী, টেপাখড়িবাড়ী, খালিশা চাপানী, ঝুনাগাছ চাঁপানী, গয়াবাড়ী ও জলঢাকার গোলমুন্ডা, ডাউয়াবাড়ী, শৌলমারী ও কৈমারী ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকাসহ ভাটি এলাকা পপ্লবিত হয়েছে। নদীপারের বাসিন্দারা জানান, পানি বাড়তে থাকায় তারা গবাদি পশু ও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র উঁচু স্থানে সরিয়ে নিচ্ছেন। অনেক এলাকায় ইতোমধ্যেই ফসলি জমি তলিয়ে গেছে, ভেসে গেছে শাকসবজি ও অন্যান্য ফসল।

রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার লক্ষীটারী ইউনিয়নের মহিপুরে নির্মিত তিস্তা সেতুর পশ্চিম দিকে সেতু রক্ষা বাঁধের ৯’শ মিটারের মধ্যে প্রায় ৬০ মিটার স্থানে ব্লক ধসে তিস্তায় পড়ছে। তিস্তায় ধসে পড়ার স্থানে গভীর গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। যার কারণে ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে রংপুর টু লালমনিরহাটের বুড়িমারী স্থল বন্দর যোগাযোগ সড়কসহ এলাকার কয়েক শত পরিবার।

এলাকাবাসীর অভিযোগ করে জানান, তিস্তার ভাঙন থেকে  সেতু রক্ষা বাঁধটি এর আগে দুই বারের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তখন থেকে বাঁধ রক্ষণাবেক্ষণে কর্তৃপক্ষ কোন ব্যবস্থা নেয়নি। এবারে নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়া মাত্রই সেতু রক্ষা বাঁধের প্রায় ৬০ মিটার জায়গার ব্লক ধসে স্থানটিতে প্রায় ৭০ ফুটের কাছাকাছি গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এতে ক্ষতি হতে পারে সেতুটিসহ যোগাযোগ সড়ক ও তিন গ্রামের কয়েক শত পরিবার।

সরেজমিন গেলে দেখা যায়, গত কয়েকদিন ধরে উজানের ঢলে তিস্তার পানি বৃদ্ধি ও কমে গেলেও তীব্র স্রোত সরাসরি এসে আঘাত করছে সেতু রক্ষা বাঁধে। পানির স্রোতের আঘাতে নিচের অংশের মাটি ভেসে গিয়ে ধসে পড়ছে ব্লকগুলো। প্রতিদিন একটু একটু করে ব্লকগুলো নিচে নেমে যাচ্ছে। মহিপুর এলাকার বাসিন্দা রোকন, কায়েছ বলেন, গত কয়েকদিন থেকে ব্লকগুলো তিস্তায় ধসে যাচ্ছে।    কর্তৃপক্ষ কোন পদক্ষেপ নেয়নি এখন পর্যন্ত। সেতু রক্ষা বাঁধ ভাঙলে সেতু শুকানে পড়ে এদিক দিয়ে পানি গেলে বাড়িঘরসহ সড়ক সব ভেঙে যাবে।

লক্ষীটারী ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল হাদী বলেন, আগে দুই বারের বন্যায় যখন বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল তখন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানিয়েছিলাম। কিন্তু তারা কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। এবার যেভাবে পানি এসে বাঁধটিতে সরাসরি আঘাত করছে এবং উজানে আর একটু বৃষ্টি হলে এই বাঁধ ভেঙে যাবে।

তিনি আরও বলেন, বাঁধ ভেঙে গেলে পানি এসে সরাসরি আঘাত হানবে রংপুর টু বুড়িমারী সড়কে এবং বাঁধের পাশে থাকা শংকরদহসহ তিনটি গ্রামের প্রায় ১ হাজার ২০০ পরিবার ভাঙন হুমকিতে পড়বে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সেতু ও সড়কটি রক্ষার জন্য দ্রত বাঁধ সংস্কারের কাজ করতে হবে। গঙ্গাচড়া উপজেলা প্রকৌশলী মজিদুল ইসলাম বলেন, তিনমাস পূর্বে রংপুর এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী স্যার পরিদর্শন করে গেছেন। বর্তমান ব্লক ধসে যাওয়ার বিষয়টি নিয়ে স্যারের সাথে কথা বলে আমি বিষয়টি জানাবো।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহমুদ হাসান মৃধা বলেন, মহিপুরে তিস্তা সেতুটির পশ্চিম অংশের বাঁধটি পানি বাড়ানো ও কমানোর সঙ্গে সঙ্গে নতুন করে ভাঙন শুরু হয়েছে। ভাঙনের বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। আশাকরি দ্রুত ব্যবস্থা নিবে।

ডালিয়া ডিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী অমিতাভ চৌধুরী বলেন, উজানের ভারি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের কারণে তিস্তার পানি বাড়ছে। নিম্নাঞ্চল ও চরগ্রামগুলো ইতোমধ্যেই তলিয়ে গেছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, সন্ধ্যার মধ্যে পানি আরও বাড়তে পারে। মূল বুধবার সকাল থেকে তিস্তার পানি বাড়তে থাকে। সকাল ৬টায় বিপৎসীমার ৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে তিস্তার পানি প্রবাহিত হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি জলকপাট খুলে রাখা হয়েছে। সতর্কাবস্থায় থেকে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।

 

আব্দুর রহমান মিন্টু

রংপুর ব্যুরো চীফ