রাজশাহীর তানোরে একটি পরিত্যক্ত গভীর নলকূপের গর্তে পড়ে গেছে দুই বছরের শিশু স্বাধীন। বুধবার (১০ ডিসেম্বর) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে উপজেলার পাঁচন্দর ইউনিয়নের কোয়েলহাট পূর্বপাড়া গ্রামের একটি মাঠে এ ঘটনা ঘটে।
গর্তটির গভীরতা প্রায় ৩৫ ফুট। দুর্ঘটনার পর থেকে টানা ২৪ ঘণ্টা ধরে উদ্ধার অভিযান চলছে, তবে এখনো শিশুটিকে বের করা সম্ভব হয়নি। ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ইউনিট অক্লান্ত প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
সন্ধ্যা ৬টার দিকে উদ্ধারকর্মীরা জানান, তখনও শিশুটিকে জীবিত অবস্থায় শনাক্ত করা গিয়েছিল। তবে সময় যত বাড়ছে, তার বেঁচে থাকার সম্ভাবনা ততটাই কমে আসছে।
রাত থেকে স্থানীয়দের ভিড় ক্রমেই বাড়ছে উদ্ধারস্থলে। সবার একটাই প্রত্যাশা—শিশুটি যেন জীবিত অবস্থায় ফিরে আসে। স্থানীয় প্রশাসন, রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের দল একযোগে কাজ করছে। ইতোমধ্যে গর্তের প্রায় ২৫ ফুট পর্যন্ত খনন করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, আরও ১০ ফুট খনন করতে পারলেই শিশুটির অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাবে।
শিশুটির নাম স্বাধীন (২)। তার বাবা রাকিব উদ্দীন একই গ্রামের বাসিন্দা।
ঘটনার সময় স্বাধীন তার বাবা-মায়ের সঙ্গে জমিতে যান। স্থানীয় বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন ও জালাল উদ্দীন জানান, জমিতে আটকে থাকা একটি ট্রলি দেখতে গিয়ে রাকিব ও তার স্ত্রী সন্তানকে সঙ্গে নিয়েছিলেন। এক পর্যায়ে স্বাধীন মায়ের কোলে থেকে নেমে হাঁটতে হাঁটতেই খোলা অবস্থায় থাকা পরিত্যক্ত নলকূপের গর্তে পড়ে যায়।
তারা বলেন, প্রথমে শিশুটির মা-বাবা নিজেরাই উদ্ধারের চেষ্টা করেন, কিন্তু ব্যর্থ হন। পরে ফায়ার সার্ভিসকে খবর দিলে তারা এসে উদ্ধারকাজ শুরু করে। স্থানীয়রাও এতে সহায়তা করছেন।
শিশুটির মা রুনা খাতুন কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, “ট্রলিটার দিকে তাকাচ্ছিলাম। আমার বাচ্চা কোল থেকে নামতেই পড়ে গেল। গর্তের ভেতর থেকে ‘মা, মা’ বলে কান্নার শব্দ পেয়েছি, কিন্তু তাকে দেখতে পাচ্ছিলাম না। আল্লাহ, আমার ছেলেকে আমাকে ফিরিয়ে দাও।” এরপর তিনি ভেঙে পড়েন।
স্থানীয়দের অভিযোগ, নলকূপটির মালিক তাহের দীর্ঘদিন ধরে পরিত্যক্ত পাইপের মুখ খোলা অবস্থায় রেখেছিলেন এবং কোনো সতর্কতামূলক সাইনবোর্ড ছিল না—যা এমন দুর্ঘটনার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তানোর ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা আব্দুল রউফ বলেন, “শিশুটিকে উদ্ধারের জন্য আমরা টানা পাঁচ ঘণ্টা ধরে চেষ্টা চালাচ্ছি। ২১ ঘণ্টা ধরে অভিযান চলছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও রাজশাহী থেকে অতিরিক্ত টিম এনে কাজ আরও জোরদার করা হয়েছে। আল্লাহ চাইলে শিশুটিকে জীবিত উদ্ধার করা সম্ভব হবে।”
তানোর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাঈমা খান বলেন, “ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক। সবাই দোয়া করুন, যেন শিশুটি সুস্থ অবস্থায় ফিরে আসে। আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।”
এনএনবাংলা/

আরও পড়ুন
ষড়যন্ত্র থেমে নেই, নির্বাচন অতো সহজ হবে না: তারেক রহমান
হাদির অবস্থা আশঙ্কাজনক, মস্তিষ্ক মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত, ফুসফুসেও আঘাত: মেডিকেল বোর্ড
হাদিকে বর্তমানে কনজারভেটিভ ম্যানেজমেন্টে রাখা হয়েছে: মেডিকেল বোর্ড