নতুন একটি অভ্যন্তরীণ নীতিমালার অধীনে বিদেশি নাগরিকদের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের নিয়ম আরও ব্যয়বহুল ও কঠোর করলো ট্রাম্প প্রশাসন। নতুন নীতিমালায়, যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের জন্য নন-ইমিগ্র্যান্ট ভিসা আবেদনের পাশাপাশি বিদেশি নাগরিকদের অন্তত ২৫০ ডলার ‘ভিসা ইনটেগ্রিটি ফি’ বা ‘ভিসা সততা ফি’ দিতে হবে। বাংলাদেশি টাকায় এটি প্রায় ৩০ হাজার টাকা।
এই ফি থাকবে বিদ্যমান ভিসা ফি’র অতিরিক্ত হিসেবে ও এটি ভিসা ইস্যুর সময়েই পরিশোধ করতে হবে। কোনো ফি মওকুফের সুযোগ থাকছে না।
কে কে পড়বে এই নতুন ফি’র আওতায়?
এই ফি প্রযোজ্য হবে তাদের ওপর, যারা যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণ, ব্যবসা, শিক্ষা বা অস্থায়ী কাজে ভিসা নিয়ে প্রবেশ করেন। অর্থাৎ প্রায় সব আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী, পর্যটক, ব্যবসায়ী ও অস্থায়ী কর্মীরা এই নিয়মের আওতায় পড়বেন।
তবে ‘ভিসা ওয়েভার প্রোগ্রাম’ এ অংশগ্রহণকারী দেশ- যেমন অস্ট্রেলিয়া ও ইউরোপের বহু দেশের নাগরিক, যারা ৯০ দিনের কম সময় যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করেন, তাদের জন্য এই ফি প্রযোজ্য নয়।
রিফান্ডযোগ্য নিরাপত্তা আমানত?
হিউস্টনভিত্তিক অভিবাসন আইনজীবী স্টিভেন এ. ব্রাউন জানিয়েছেন, এই ফি মূলত এক ধরনের ‘ফেরতযোগ্য নিরাপত্তা আমানত’ হিসাবে কাজ করবে। ভিসার শর্ত অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান ও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রস্থান করলে এই ফি ফেরত পাওয়ার সুযোগ থাকবে। তবে কীভাবে বা কত সময়ের মধ্যে ফেরত দেওয়া হবে, সে বিষয়ে এখনো কোনো পরিষ্কার দিকনির্দেশনা দেয়নি মার্কিন প্রশাসন।
ব্রাউন বলেন, ফি’র উদ্দেশ্য আসলে ঠিক বোঝা যাচ্ছে না। যদি সবার টাকা ফেরতই দিতে হয়, তাহলে আদায় করাটা কেমন যুক্তিযুক্ত হবে- এটা একটা প্রশ্ন।
মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগ (ডিএইচএস) জানিয়েছে, এই ফি বাস্তবায়নের জন্য একাধিক সরকারি সংস্থার মধ্যে সমন্বয় প্রক্রিয়া চলছে। স্টেট ডিপার্টমেন্ট বলেছে, ফি চালুর লক্ষ্য হলো ‘অভিবাসন কার্যক্রম কঠোর করা, ভিসার শর্তভঙ্গ নিরুৎসাহিত করা এবং সীমান্ত নিরাপত্তা তহবিলে অর্থ যোগান’।
যেসব ভ্রমণকারী নির্ধারিত নিয়ম না মেনে যুক্তরাষ্ট্রে অতিরিক্ত সময় অবস্থান করবেন বা শর্ত ভঙ্গ করবেন, তাঁদের ফি ফেরতযোগ্য হবে না। এই অর্থ যুক্তরাষ্ট্রের কোষাগারে জমা হবে।
২০২৫ অর্থবছরে এই ফি’র পরিমাণ ন্যূনতম ২৫০ ডলার, তবে হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগ চাইলে এটিকে আরও বাড়াতে পারবে। ভবিষ্যতে এই ফি প্রতিবছর মূল্যস্ফীতির ভিত্তিতে সমন্বয় করা হবে।
পর্যটন খাতের উদ্বেগ
যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় পর্যটন সংস্থা ইউএস ট্রাভেল অ্যাসোসিয়েশন এই নতুন নীতির কড়া সমালোচনা করেছে। সংস্থাটির সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট এরিক হ্যানসেন এক বিবৃতিতে বলেন, ২৫০ ডলারের এই নতুন ফি আন্তর্জাতিক পর্যটকদের জন্য একটি অপ্রয়োজনীয় আর্থিক বাধা সৃষ্টি করবে।
তিনি জানান, বর্তমানে যেসব ভিসা ফি রয়েছে, তার সঙ্গে এই নতুন ফি যোগ হয়ে একজন ভ্রমণকারীর আগাম খরচ ১৪৪ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে যাবে। এমনকি, এটি যদি ফেরতযোগ্যও হয়, প্রক্রিয়াটি এতটাই জটিল ও ব্যয়বহুল হবে যে, অনেকেই যুক্তরাষ্ট্র সফরের পরিকল্পনা বাদ দিতে বাধ্য হবেন, বলেন হ্যানসেন।
অন্যদিকে, বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই ভিসা ফি নিয়ে অনেক দেশ কূটনৈতিকভাবে অসন্তোষ জানাতে পারে। উন্নয়নশীল দেশগুলোর নাগরিকদের ওপর এর প্রভাব হবে সবচেয়ে বেশি।
বিশ্বজুড়ে যখন যুক্তরাষ্ট্র সফরের আগ্রহ বাড়ছে, তখন এমন সিদ্ধান্ত হয়তো দেশটির সফরপ্রত্যাশী মানুষের জন্য একটি বড় বাধা হয়ে দাঁড়াবে। তবে ট্রাম্প প্রশাসন বার্তা দিতে চায়- যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ এখন আর সহজ নয় এবং নিয়ম ভাঙার মূল্য হবে চড়া।
আরও পড়ুন
দেশের সবাইকে নগদ অর্থ দেওয়ার ঘোষণা মালয়েশিয়া সরকারের
বিমান দুর্ঘটনায় দগ্ধ ৮ শিশুর অবস্থা আশঙ্কাজনক, চিকিৎসাধীন ৪৪
ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ইরান পুরোপুরি প্রস্তুত: ইরানি প্রেসিডেন্ট