অনলাইন ডেস্ক
মোহামেডানের জার্সিতে অসুস্থ হওয়ার পরে গাজীপুরের কেপিজে বিশেষায়িত হাসপাতাল থেকে রিং পড়ানো হয়েছিল তামিম ইকবালের। এরপরে তাকে ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। সেখানেই জাতীয় দলের সাবেক এই অধিনায়ক পর্যবেক্ষণে রয়েছেন। তামিম আরো কিছুটা সুস্থ হয়ে ওঠার পরে তাকে দেশের বাইরে নেওয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
গতকাল ফরচুন বরিশালের মালিক মিজানুর রহমান জানিয়েছেন, পরিবার ও ডাক্তারের পরামর্শে তামিমকে থাইল্যান্ডে নিয়ে যাওয়া হবে। ইতিমধ্যে ভিসার আবেদনও করা হয়েছে। সবকিছু ঠিক থাকলে পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য তাকে দেশের বাইরে নেওয়া হবে। এই মুহূর্তে তামিম স্বাভাবিক কার্যক্রম করছেন বলে পরিবার ও হাসপাতালের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
গতকাল বিসিবির সাবেক পরিচালক ও এভরকেয়ার হাসপাতালের অন্যতম কর্ণধার খন্দকার জামিল বলেছেন, ‘তামিমকে ভালো দেখলাম, দেখে আমার কাছে ভালো লেগেছে। স্বাভাবিকভাবে কথা বলছে। আমার সামনে খাওয়া-দাওয়া করছে, বাথরুমে যাচ্ছে। আমি কোনো অস্বাভাবিকতা দেখিনি। সে নিজেও বলছে, সবকিছু ঠিক আছে। কোনো সমস্যা হচ্ছে না ডাক্তারদের সঙ্গে আমি কথা বলেছি, সবকিছু ভালো আছে বলে তারা জানিয়েছেন। এখন তামিমের অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে। বিপদ কেটে গেছে।’
যে কারণে তামিমকে নেওয়া হবে দেশের বহিরে
গতকাল তামিমের চাচা আকরাম খান জানিয়েছেন, ‘যে চিকিৎসা দরকার ছিল, সেটি হয়ে গেছে। রিং লাগানো হয়ে গেছে। পরিবারের পক্ষ থেকে আমরা এখন সিদ্ধান্ত নিয়ে দেশের বাইরে গিয়ে আরও কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে চাই। সেটি কেবল দুশ্চিন্তা থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য।’ কেপিজে থেকে এভারকেয়ার হাসপাতালে নিয়ে আসার বিষয়ে বলেছেন, ‘আমি কাউকে ছোট করছি না, উন্নত চিকিৎসা কিংবা উন্নত সুযোগ-সুবিধার জন্য ঢাকায় নিয়ে আসা হয়েছে। পাশাপাশি রমজান মাসে অনেকে যানজট ঠেলে হলেও ওদিকে (গাজীপুরের কেপিজে হাসপাতালে) যাচ্ছেন, পরিবারের পক্ষ থেকে সব বিষয়ে বিবেচনা করে ঢাকায় আনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে এখানে ডাক্তারদেরও পরামর্শ নেওয়া হয়েছে।’
কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে তামিমের চাচা ও বিসিবি পরিচালক আল্লাম খান বলেছেন, ‘সবাইকে ধন্যবাদ জানাই। কারণ তামিম যে অবস্থা থেকে বেঁচে ফিরেছে, সকলের দোয়া না থাকলে এটি সম্ভব ছিল না। ডাক্তারের সঙ্গে কথা হয়েছে তারাও বলেছেন, এই ধরনের রোগীদের ফিরে আসার পরিসংখ্যান খুবই কম। আমি আগেই বলেছি, কেপিজে হাসপাতালের ডাক্তাররা দুর্দান্ত কাজ করেছেন। এখন এভারকেয়ারে পর্যবেক্ষণে আছে। যেভাবে উন্নতি হচ্ছে, এটি চলতে থাকলে দুই-তিন দিন পরে তাকে বাসায় নিয়ে যেতে পারব। বর্তমানে বেশ ভালো অবস্থায় রয়েছে তামিম, স্বাভাবিক রয়েছে। তার স্ত্রীর সঙ্গে নিয়মিত কথাবার্তা হচ্ছে।’
চাচাকে জানানো হয়েছিল তামিম বেঁচে নেই
তামিম ইকবাল হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার পরে চাঙা আকরাম খানকে জানানো হয়েছিল তিনি বেঁচে নেই। সেই মুহূর্তের অবস্থা উল্লেখ করে আকরাম খান বলেছেন, ‘সত্য ‘সত্য বলতে আমি আমি খুবই খারাপ সংবাদ পেয়েছিলাম। আমাকে বলা হয়েছিল তামিম বেঁচে নেই। আমি এমনটা কল্পনাও করতে পারিনি, এমন খবর শুনতে হবে, সেটি ভাবতেই পারি না। এত অল্প বয়স, ছেলের মতো। খবর শুনেই রওনা দেই, বিমর্ষ হয়েছিলাম। দেড় ঘণ্টা ডাঙার ফোন করলেন যে, তারা রিং লাগানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তখন কিছুটা স্বস্তি পেয়েছিলাম যে, তামিমের ফিরে আসার সম্ভাবনা রয়েছে এই বয়সে এই ধরনের লোকরা খেলাধুলার সঙ্গে আছে, অসুস্থ হওয়ার আগে সে দুইটি সেঞ্চুরিও করেছে, সেই জায়গা থেকে কল্পনাও করা যায় না যে, এভাবে অসুস্থ হয়ে পড়বে। কেবল আমি না, পরিবারের বাইরেও যারা এই খবর শুনেছেন তারাও মন খারাপ করেছেন।’
ক্রিকেটে ফেরার বিষয়ে
আকরাম খান বলেছেন, ‘যে দুর্ঘটনা হলো, এখনই অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে গেছে। মাসখানেক বা আরও সময় গেলে আরও স্বাভাবিক হয়ে যাবে। ডাক্তার আমাকে বলেছেন, এক মাসের পরে স্বাভাবিক কার্যক্রমে ফিরতে পারবে। এরপরে যখন পুরোপুরি সুস্থ হয়ে যাবে তখন ক্রিকেট খেলতে পারবে। অনেকেই তো রিং নিয়ে খেলছে। সে খেলা চালিয়ে যেতে পারবে। তবে জীবনধারা পরিবর্তন করতে হবে। সেটি ঠিক থাকলে সমস্যা হবে না। তার যে মানসিক শক্তি আছে, তাতে সে খুব সহজেই স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারবে।’ দেশ ও দেশের বাইরে থেকে সকলের ভালোবাসা দেখে অবাক তামিমের পরিবার। ‘মানুষ যেভাবে দোয়া ও ভালোবাসা দেখিয়েছে, সেটি তো টাকা দিয়ে কেনা সম্ভব না। সকলে যেভাবে পাশে দাঁড়িয়েছেন, সেটি অনেক বড় পাওয়া’, বলে আনিয়েছেন তার চাচা।
রোজার মধ্যে খেলা নিয়ে প্রশ্ন
তামিমের অসুস্থ হওয়ার পরে রোজা ও তীব্র গরমের মধ্যে খেলা নিয়ে নতুন করে বিতর্ক শুরু হয়েছে। এই বিষয়ে বিসিবি পরিচালক নাজমুল আবেদীন ফাহিম বলেছেন, ‘এই কথাটা ওঠা প্রাসঙ্গিক অনেক নেতিবাচক ব্যাপার রয়েছে। আবার একমাস আমরা না খেললে কী দাঁড়াবে। একমাস খেলা বন্ধ করে দিলে তখন পরিস্থিতি আরো কঠিন হবে। জাতীয় ক্রিকেটের সঙ্গে মানিয়ে চল যাবেনা। এমন হতে পারে এই রোজার সময়েই আন্তর্জাতিক খেলা থাকতে পারে। এসব কথা ভেবে খেলা বন্ধ করা যাবে না। সাত দিন খেলা বন্ধ থাকলেও পারফরম্যান্সের ওপরে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে আমাদের বিকল্পে নজর দেওয়া দরকার। খেলোয়াড়রা ঠিকমতো বিশ্রাম পাচ্ছে কিনা। মিরপুরে একটা মাঠ রয়েছে, কাছেই আরও দুটি মাঠ রয়েছে। খেলার পরে সকলে বাসায় গিয়ে পর্যাপ্ত বিশ্রাম পাচ্ছে না। বিকেএসপিতে যেতে হচ্ছে খুব ভোরে, ফিরতে হচ্ছে রাতে। এই জায়গা থেকে বিশ্রামের সুযোগটা কম থাকে।
আরও পড়ুন
ড. ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক চান মিয়ানমারের জান্তা প্রধান
চীন সফর শেষে দেশে পৌঁছেছেন প্রধান উপদেষ্টা
পদ্মা সেতুতে ১২ ঘণ্টায় টোল আদায় ২ কোটি টাকা