গেল বছর করোনাভাইরাসের কারণে অনুষ্ঠিত হয়নি এইচএসসি পরীক্ষা। এবার পরীক্ষা নেওয়ার কথা ভাবলেও চলমান পরিস্থিতিতে সঠিক সময়ে পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। ফলে নির্ধারিত সময় থেকে আরও দু-তিন মাস পিছিয়ে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা নেওয়া হতে পারে বলে জানিয়েছেন আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব কমিটির সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক নেহাল আহমেদ।
প্রতি বছর ১ ফেব্রুয়ারি এসএসসি ও এপ্রিলের শুরুতে এইচএসসি পরীক্ষা শুরু হয়। তবে করোনা মহামারির কারণে চলতি বছরের এসএসসি পরীক্ষা আগামী জুনে এবং এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা জুলাই-আগস্টে নেওয়ার কথা রয়েছে। আবার সরকারের এমন চিন্তাও আছে যে করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে না আসা পর্যন্ত পরীক্ষা নেওয়া হবে না। করোনা কবে নিয়ন্ত্রণে আসবে তাও কেউ বলতে পারছে না। করোনাভাইরাস সংক্রমণে গত বছর এসএসসি ও এইচএসসি’র পরীক্ষার্থীদের অটোপাস করিয়ে দিলেও এবার করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যু গত বছরের তুলনায় বেশি হলেও শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা দিয়ে পরবর্তী ক্লাসে উত্তীর্ণ হতে হবে। পরীক্ষা কিভাবে নেওয়া হবে তা নিয়ে চলছে দীর্ঘ আলোচনা।
অধ্যাপক নেহাল আহমেদ বলেন, চলতি বছর এসএসসি-এইচএসসির জন্য সিলেবাস সংক্ষিপ্ত করে দেওয়া হয়েছে। আগামী জুন-জুলাইয়ে এসএসসি ও সেপ্টেম্বরে এইচএসসি পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত ছিল। কিন্তু সেটি হয়তো আরও দু-এক মাস পিছিয়ে যেতে পারে। তবে পরীক্ষা হবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। গতবার এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের যেভাবে পাস করানো হয়েছে, তাকে অটোপাস বলা যায় না। কারণ তাদের পরীক্ষার সম্পূর্ণ প্রস্তুতি ছিল। এবারের এসএসসি কিংবা এইচএসসির বিষয়টি ভিন্ন। তারা ক্লাসে যেতে পারেনি। এজন্য সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে হলেও এবার পরীক্ষায় বসতেই হবে শিক্ষার্থীদের।
জানা গেছে, এ বছর এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের জন্য তিন থেকে চার মাসে প্রস্তুতি নেওয়া যাবে এমন একটি সংক্ষিপ্ত সিলেবাস প্রণয়ন করা হয়েছে। এর ভিত্তিতে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। তার আগে শিক্ষার্থীরা তিন-চার মাস পরীক্ষার প্রস্তুতি নেওয়ার সুযোগ পাবে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় বলে আসছে, পরীক্ষা আয়োজনের প্রস্তুতি রয়েছে তাদের। গত বছরের মতো অটো পাশ দেওয়ার কোনো পরিকল্পনা আপাতত নেই। যখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা হবে, তখনই এসএসসির ক্ষেত্রে ৬০ কার্যদিবস ও এইচএসসির ক্ষেত্রে ৮৪ কার্যদিবস সরাসরি ক্লাসে পড়িয়ে পরীক্ষা নেওয়া হবে।
ইতিমধ্যে শিক্ষা বোর্ডগুলো পরীক্ষাকেন্দ্রের তালিকা প্রকাশ করেছে। প্রশ্নপত্র প্রণয়ন করে তা ছাপানোর জন্য ইতিমধ্যে বিজি প্রেসে পাঠিয়েছে। এছাড়া পরীক্ষা সংক্রান্ত সব প্রস্তুতি প্রায় শেষ করেছে শিক্ষা বোর্ড। তবে করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার বেড়ে যাওয়ায় এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণ চলমান থাকলেও তা স্থগিত করা হয়েছে। গত ৩০ মার্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার ঘোষণা থাকলেও করোনা বেড়ে যাওয়ায় নতুন করে ২৩ মে স্কুল-কলেজ খোলার ঘোষণা দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তবে ঐ সময়ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা সম্ভব হবে কি বা না, তা নির্ভর করছে করোনা পরিস্থিতির ওপর।
অভিভাবকরা বলছেন, ২৩ মে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা সম্ভব না হলে এসএসসি পরীক্ষা আয়োজন নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে। এই সময়ের মধ্যে ২০২২ সালের এসএসসির টেস্ট পরীক্ষা নিতে হবে। শিক্ষা বোর্ডগুলোকেও ২০২২ সালের এসএসসি পরীক্ষা আয়োজনের প্রস্তুতি নিতে হবে। আর এসএসসি পরীক্ষা শেষ হওয়ার কমপক্ষে এক মাস পর এইচএসসি পরীক্ষা নিতে হবে। এমন পরিস্থিতিতে ২০২১ সালের এসএসসি পরীক্ষা অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। আবার ২৩ মে যদি কলেজ খোলা সম্ভব হয়, তাহলে ৮৪ কর্মদিবস সরাসরি ক্লাসে পাঠদান শেষ করে অক্টোবরের আগে এইচএসসি পরীক্ষা আয়োজন করা সম্ভব হবে না। আর ২৩ মে কলেজ না খুললে এইচএসসি পরীক্ষা আরো পিছিয়ে যাবে।
আরও পড়ুন
বছরজুড়ে শিক্ষায় অস্থিরতা, শিক্ষার্থীদের হাত ধরেই ‘বিজয়’
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরছে ভর্তি পরীক্ষা, বদলে যাচ্ছে পদ্ধতিও
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন ১ জানুয়ারি, পরীক্ষা ফেব্রুয়ারিতে