March 14, 2025

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Tuesday, February 11th, 2025, 10:11 pm

ঐতিহ্যবাহী শ্যামাসুন্দরী খাল পুনরুদ্ধারে কর্মপরিকল্পনা প্রস্তুত করতে নির্দেশ হাইকোর্টের

আব্দুর রহমান মিন্টু: রংপুর :  ১৬ বর্গ কিলোমিটার রংপুর জেলার ঐতিহ্যবাহী শ্যামাসুন্দরী খাল । দূষণ ও দখল থেকে রক্ষায় বিবাদীদের ব্যর্থতা সংবিধান ও প্রচলিত আইনের লঙ্ঘন হওয়ায় কেন তা অসাংবিধানিক, বেআইনি এবং বিধিবহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়ে সোমবার হাইকোর্ট বিভাগ বিবাদীগণের ওপর রুল জারি করেছেন।
জারিকৃত এ রুলে সিএস জরিপ ও মূল প্রবাহ অনুযায়ী উল্লেখিত খালের সীমানা নির্ধারণ, স্থানীয় বাসিন্দাদের চাষাবাদ ও মৎস্য শিকারের অধিকার সুরক্ষা করতে এবং তাদের জীবন ও জীবিকার মান উন্নয়ন করতে খাল থেকে দখলদার উচ্ছেদ ও দূষণ নিয়ন্ত্রণ করে খালটি পুনরুদ্ধারপূর্বক পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে এনে যথাযথ সংরক্ষণ করার নির্দেশ কেন প্রদান করা হবে না তাও জানতে চেয়েছেন আদালত।
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট ও বেলা’র আইনজীবী এডভোকেট এস. হাসানুল বান্না স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আজ এতথ্য জাননো হয়।
রুল জারির পাশাপাশি আদালত উল্লেখিত খালের মূল প্রবাহ অনুযায়ী সীমানা নির্ধারণ, দখলদার উচ্ছেদ, দূষণের উৎস চিহ্নিতকরণ, দূষণ নিয়ন্ত্রণ ও খালের যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ নিশ্চিত করে খাল পুনরুদ্ধার করে পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে একটি কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন এবং তা প্রতিবেদন আকারে আদালতে তিন মাসের মধ্যে দাখিলের নির্দেশ প্রদান করেছেন।
আদালতের আদেশ পালন সংক্রান্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য রংপুরের জেলা প্রশাসক, রংপুর সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক,  রংপুর পানি উন্নয়ন বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী ও রংপুর পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালককে আদালত নির্দেশ প্রদান করেছেন। বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) কর্তৃক দায়েরকৃত একটি জনস্বার্থমূলক (নং ১৫৫৭১/২০২৪) মামলার প্রাথমিক শুনানি শেষে বিচারপতি ফারাহ মাহবুব এবং বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরী এর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বিভাগের একটি ডিভিশন বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
রংপুর জেলার কেল্লাবন্দ এলাকায় শ্যামাসুন্দরী (স্ক্রাইন) খাল নামক একটি ঐতিহ্যবাহী খাল রয়েছে যার আয়তন প্রায় ১৬ বর্গ কিলোমিটার (৪১.৩৯৭১ একর)।
খালটি রংপুর সদর উপজেলার কেল্লাবন্দ মৌজায় ঘাঘট নদী থেকে উৎপন্ন হয়ে নগরীর রঘুনাথ, ভগী, রাধাবল্লভ, আলমনগর, কামালকাছনা, মাহিগঞ্জ দিয়ে প্রবাহিত হয়ে মাহিগঞ্জ রেল ব্রিজের পাশে খোকসা ঘাঘট নদীতে পতিত হয়ে পুনরায় ঘাঘট নদীতে মিলিত হয়েছে। এ খাল দখল করে গড়ে উঠেছে দোকান, ঘর-বাড়ীসহ নানা অবৈধ স্থাপনা। নির্মিত এসব স্থাপনার জন্য খাল সংকুচিত হয়ে পানি প্রবাহের মূলধারা বাধাগ্রস্তহচ্ছে। দখলের পাশাপাশি দূষণেও জর্জরিত এ খাল। খালটির বিভিন্ন স্থানে ড্রেনের মাধ্যমে নিস্কাষিত তরল বর্জ্য, প্লাস্টিক, পলিথিন, পয়:বর্জ্য, গৃহস্থালী বর্জ্য দ্বারা খালের পানি দূষিত হচ্ছে। ফলশ্রুতিতে খালটি প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য হারিয়ে একটি পঁচা ডোবায় পরিণত হয়েছে। হারিয়ে গেছে মাছসহ জলজ প্রাণী এবং পেশা পরিবর্তনে বাধ্য হয়েছে খাল নির্ভর কৃষক ও মৎস্যজীবীগণ। শহরের পানি নিষ্কাশনে অন্যতম প্রধান মাধ্যম শ্যামাসুন্দরী খাল দখল ও দূষণ থেকে রক্ষায় বেলা উল্লেখিত  জনস্বার্থমূলক মামলাটি দায়ের করে।
মামলার বিবাদীরা হলেন: পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব, ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিব, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব, জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক, রংপুরের জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, রংপুর সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক, রংপুর পানি উন্নয়ন বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী, রংপুর পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক এবং রংপুর সদরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।
বেলা’র পক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন এডভোকেট এস. হাসানুল বান্না এবং তাকে সহযোগিতা করেন এডভোকেট তৌহিদুল আলম। রাষ্ট্রপক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তানিম খান।
আজ মঙ্গলবার সকালে বেসরকারী সংস্থা ডপস এর নিবাহী উজ্জব কুমার জানান বেলা উদ্যাগে শ্যামা সুন্দরী খাল পুন: জীবিত হবে । তিনি বলেন বর্তমানে রংপুর শহরের আকাশ খারাপ হলে গোটা নগরী পানিতে ডুবে যাবে, যা দুই বছর থেকে আমরা বুঝতে পারছি। অবৈধ দখল উচ্ছেদ করতে হবে এবং এ খালে পানির প্রবাহ যেন স্বচ্ছ থাকে সে ব্যাপারেও অধিকতর নজর দিতে হবে।
আজ মঙ্গলবার সকালে মাপার প্রধান নির্বাহী  ও পরিবেশবিদ এডভোকেট মুনির চেীধুরী জানান ঐতিহ্যবাহী শ্যামাসুন্দরী খাল নিয়ে আনেক আন্দোলন হয়েছে, মিছির , মিটিং , সমাবেশ করেছে রংপুরের সচেতন মহল  কিন্তু কাজের কোন আগ্রগতি হয় । পরিকল্পনা মাফিক কোনো উন্নয়নকাজ না হওয়ায় শ্যামাসুন্দরী খালটি ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। বিগত সরকার গুলো অর্থ বরাদ্ধের ক্ষেত্রে  কিচ্ছতা সাধন করেছে এক সময়ের ৬০ ফুট চওড়া খালটি বর্তমানে ১০ থেকে ১৫ ফুটে এসে ঠেকেছে। তিনি আর ও বলেন খালের বেশির ভাগই দখল করে নিয়েছে প্রভাবশালী লোকজন। আবার কোথাও কোথাও ভরাট হয়ে গেছে ময়লা-আবর্জনায়। এখন আদালতের নির্দেশনা যদি বাস্তবায়ন হয়, তাহলে খালের প্রাণ ফেরানোর প্রথম প্রচেষ্টা সার্থক হবে। মাত্র ৪ কোটি টাকা হলে তিন মাসের মধ্যে শ্যামাসুন্দরীর দখল উচ্ছেদপূর্বক এর দূষণ দূর করা সম্ভব। প্রথমে চাই নদীর সুরক্ষা তারপর এর সৌন্দর্যবর্ধন।। বেলা ঐতিহ্যবাহী শ্যামাসুন্দরী খাল নিয়ে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে আশা করি ভাল হবে ।