December 11, 2025

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Tuesday, October 21st, 2025, 2:55 pm

ওষুধ উৎপাদনে অনিশ্চয়তা, ক্ষতি ছাড়াতে পারে ৪ হাজার কোটি টাকা

 

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে গত ১৮ অক্টোবরের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড দেশের ওষুধ শিল্পে বড় ধরনের ধাক্কা এনেছে। বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ফার্মাসিউটিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ (বাপি) জানিয়েছে, দুর্ঘটনায় শীর্ষ ৪৫টি ওষুধ কোম্পানির প্রায় ২০০ কোটি টাকার কাঁচামাল পুড়ে গেছে।

মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ১১টার দিকে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে বাপির মহাসচিব ডা. মো. জাকির হোসেন জানান, সামগ্রিকভাবে এই অগ্নিকাণ্ডের আর্থিক প্রভাব প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকায় পৌঁছাতে পারে। এর ফলে অ্যান্টিবায়োটিক, ক্যান্সার, ডায়াবেটিস ও ভ্যাকসিনসহ জীবনরক্ষাকারী ওষুধ উৎপাদনে বড় ধরনের ব্যাঘাত ঘটার আশঙ্কা রয়েছে।

তিনি বলেন, দেশের ৩০৭টি ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে প্রায় ২৫০টি বর্তমানে সক্রিয়ভাবে উৎপাদনে রয়েছে। এই ঘটনাটি তাদের জন্য বহুমুখী ঝুঁকি ও অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করেছে। বাপির প্রাথমিক জরিপ অনুযায়ী, শুধুমাত্র শীর্ষ ৪৫টি কোম্পানিরই ২০০ কোটি টাকার কাঁচামাল সম্পূর্ণভাবে নষ্ট হয়েছে। অন্য কোম্পানিগুলোর ক্ষতি যুক্ত করলে মোট ক্ষতির পরিমাণ আরও বৃদ্ধি পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

অগ্নিকাণ্ডে ধ্বংস হওয়া কাঁচামালের মধ্যে ছিল অ্যান্টিবায়োটিক, ভ্যাকসিন, হরমোন, ডায়াবেটিক ও ক্যান্সার জাতীয় ওষুধ তৈরির উপকরণ। পাশাপাশি কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্পেয়ার পার্টস ও মেশিনারিজও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যা পুনরায় আমদানি করতে সময় লাগবে। ফলে উৎপাদন প্রক্রিয়া বিলম্বিত হওয়ার পাশাপাশি রপ্তানি কার্যক্রমেও প্রভাব পড়বে।

ডা. জাকির হোসেন জানান, দেশের ওষুধ শিল্পে ব্যবহৃত কাঁচামালের প্রায় ৯০ শতাংশই চীন, ভারত ও ইউরোপ থেকে আমদানি করা হয়, যার একটি বড় অংশ আকাশপথে আসে। কার্গো ভিলেজে আগুন লাগায় এসব মূল্যবান কাঁচামাল সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে গেছে।

তিনি আরও বলেন, বিকল্প হিসেবে অন্য বিমানবন্দরে নামানো পণ্যগুলো নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় সংরক্ষণের প্রয়োজন থাকায় সেগুলোর প্রতিও উদ্বেগ রয়েছে। এছাড়া নারকোটিকস বিভাগের অনুমোদনপ্রাপ্ত কিছু পণ্য পুনরায় আমদানি করা অত্যন্ত জটিল ও সময়সাপেক্ষ, কারণ এতে একাধিক ধাপের অনুমোদন নিতে হয়।

বাপি মহাসচিব বলেন, “একটি র-ম্যাটেরিয়াল হারালে তার ওপর নির্ভরশীল প্রতিটি ফিনিশড প্রোডাক্টের উৎপাদনই অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। আমরা অনুমান করছি, এই অগ্নিকাণ্ডে মোট অর্থনৈতিক প্রভাব প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকায় পৌঁছাবে।”

তিনি আরও জানান, বর্তমানে বাংলাদেশের তৈরি মানসম্পন্ন ওষুধ বিশ্বের ১৬০টিরও বেশি দেশে রপ্তানি হয়, যার মধ্যে উন্নত দেশও রয়েছে। এই অগ্নিকাণ্ডের ফলে সেই উৎপাদন ও রপ্তানি চেইনে বড় ধরনের ধাক্কা লাগবে।

শেষে তিনি সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর প্রতি দ্রুত তদন্ত সম্পন্ন করা, ক্ষতিগ্রস্ত কোম্পানিগুলোর জন্য কার্যকর ক্ষতিপূরণ এবং বিকল্প কার্গো ব্যবস্থাপনা জোরদার করার আহ্বান জানান।

এনএনবাংলা/