সিলেট অফিস :
লুৎফুর রহমান ওরফে নেপুর মিয়া থাকেন যুক্তরাজ্যে। কিছুদিন পরপর দেশে আসা-যাওয়া করেন। দেশে আসলে কারো সাথে মতের অমিল বা ঠুনকো ঝামেলার সৃষ্টি হলেই মামলা ঠুকে দেন। প্রতিবেশী মতাহির আলীর সাথে জমিজমা ও পূর্ব শত্রতার জের ধরে দীর্ঘ কয়েক যুগ ধরে বিরোধ সৃষ্টি করে আসছেন বলে নেপুরের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে। সিলেটের ওসমানীনগর উপজেলার উছমানপুর ইউনিয়নের লতিবপুর গ্রামে মতাহির ও নেপুরের বাড়ির অবস্থান পাশাপাশি। মতাহির কয়েক বছর আগে মারা যান। কিন্তু নেপুর ও তার লোকজন মতাহিরের পরিবারকে অত্যাচার করে আসছেন। অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে মতাহিরের ছেলে ইমরুল ইসলাম সম্প্রতি ওসমানীনগর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দেন। এতে নেপুর, ফরিদ ও নেপুরের ছেলে জাফর ইমামকে অভিযুক্ত করা হয়। ইমরুলের দেয়া অভিযোগের বিষয়টি জানতে পেরে ইমরুলসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে ঘরের আসবাবপত্র চুরি ও টাকা-পয়সা দাবির অভিযোগে ৪জুন ঘটনার তারিখ উল্লেখ করে থানায় পাল্টা লিখিত অভিযোগ দেন নেপুর। নেপুরের লিখিত অভিযোগে একমাত্র স্বাক্ষি লতিবপুর গ্রামের ছিদ্দেক আলীর ছেলে ফখরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত ২৪জুন গ্রামবাসীর কাছে দেওয়া লিখিত অঙ্গিকার ও ১১আগস্ট নোটারি পারলিকে এফিডিভিটের মাধ্যমে তিনি বলেছেন, ২২জুন নেপুরের ছেলে জাফর ইমাম, ফরিদ আহমদসহ আরও ২জন জোর করে তাকে প্রাইভেট কারে তুলে নিয়ে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে মামলার কাগজে স্বাক্ষি বানিয়ে স্বাক্ষর নেয়া হয়। মামলার ঘটনাটি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও সাজানো। ইমরুলের অভিযোগ, স্বাক্ষি অঙ্গিকার দেওয়ার বিষয়টি জানার পরও এএসআই সাইদুর আর্থিক ফায়দা নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে ৬আগস্ট জিডি (জিডি নং-২৭০) করে পরদিন আদালতে নন এফআইআর প্রসিকিউশন দিয়েছেন। ইমরুলের অভিযোগের তদন্ত কর্মকর্তা এসআই ওমর ফারুক তার প্রতিপক্ষের সাথে হাত মিলিয়ে অনৈতিক সুবিধা নিয়ে তার দেওয়া অভিযোগের কোনো অগ্রগতি করেননি বলে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। এএসআই সাইদুর রহমান বলেন, ভূমি নিয়ে বিরোধ তাই অভিযোগটি আদালতে পাঠানা হয়েছে। আর এসআই ওমর ফারুক বলছেন, এটা অগ্রগতির কিছু নেই, তারা চাইলে আদালতে মামলা করুক। নেপুরের এমন কাণ্ডে হতবাক গ্রামবাসী।
তারা জানিয়েছেন, গত বছরের ২৩জুন নেপুরের ছেলে জাফর ইমাম ও ফরিদ লোকজন নিয়ে এসে আসবাবপত্র ও মালামাল গাড়িতে তুলে নিয়ে গেছেন। এখন আবার মামলা দিয়েছেন। মানুষের বিরুদ্ধে মামলা করাই তার নেশা। থানায় দেয়া ইমরুলের অভিযোগে বলা হয়েছে, কিছুদিন পরপর ভাড়াটে সন্ত্রাসী দিয়ে ইমরুলের পরিবারকে তার বাড়ি উচ্ছেদের অপচেষ্টা করা হচ্ছে। ১১জুন নেপুর, ফরিদ ও জাফর ইমাম দলবল নিয়ে ইমরুলের বাড়িতে উঠে ইমরুলসহ ঘরে থাকা লোকজনকে গালাগালি ও প্রানণাশের হুমকি দিয়ে বাড়িতে ভাঙচুর করা হয়। সাজানো মামলা দিয়ে হয়রানি ও প্রাণনাশের হুমকিতে ইমরুল ও তার পরিবার জানমালের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত। নেপুর ও তার ছেলের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে। এবিষয়ে অনুসন্ধান করে জানা গেছে, ২০২০সালে সিলেটের গোয়াইনঘাট থানায় দায়ের করা মাদক ও চোরাচালান মামলার এজাহারে নেপুরের ছেলে জাফর ইমাম অভিযুক্ত ছিলেন। বিগতদিনে জাল দলিলের মাধ্যমে জনৈক নারীর ভূমির দখল নেওয়ার ঘটনায় দায়ের করা মামলার তদন্ত প্রতিবেদনে জালিয়াতির ঘটনা প্রমাণিত হওয়ায় নেপুরের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা ও তার যাবতীয় মালামাল ক্রোকের আদেশ হয়। নেপুরের জালিয়াতি করা দলিলে সরল বিশ্বাসে স্বাক্ষর করে স্বাক্ষিরা ফেঁসে যান। জালিয়াতির ওই মামলায় তদন্তের জেরার মুখে স্বাক্ষিরা সত্যটা প্রকাশ করে দেন, ক্ষিপ্ত হন নেপুর। প্রতিশোধ নিতে নেপুরের বাড়ির কাজের লোককে অজ্ঞাত স্থানে লুকিয়ে রেখে কাজের লোকের স্ত্রীকে দিয়ে জাল দলিলের স্বাক্ষি ইমরুলের পিতা মতাহিরসহ ৭জনের বিরুদ্ধে অপহরণ মামলা করান নেপুর। পরে নেপুরের এক আত্মীয়র বাড়ি থেকে ওই কাজের লোককে উদ্ধার করে পুলিশ। কথিত বাদী আদালত স্বীকারোক্তি দেন নেপুরের প্ররোচনা ও আর্থিক বিনিময়ে তিনি এই মামলাটি করেছিলেন। উছমানপুর ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের সদস্য জিলু মিয়া ও স্থানীয় মুরব্বী নজরুল ইসলাম বলেন, অনেক বছর ধরে ভূমি সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে ইমরুলের পরিবারের সাথে নেপুর ইচ্ছাকৃত বিরোধ সৃষ্টি করে আসছেন। অনেক বছর ধরে নেপুর গ্রামের পঞ্চায়েতের সাথে নেই। তিনি কারও সিদ্ধান্ত না মেনে ইমরুলের পরিবারকে মামলা দেওয়াসহ নানাভাবে হয়রানি করেছেন।
গোলাম লুৎফুর রহমান ওরফে নেপুর মিয়া অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমার পৈত্রিক ভূমিসহ ক্রয়করা ভূমি তারা দখল করে রেখেছে। তাদের কারণে আমি বাড়িতে থাকতে না পেরে সিলেট শহরে বাসায় থাকছি।
আরও পড়ুন
সাদা পাথর লুটপাট বন্ধে নড়েচড়ে উঠেছে প্রশাসন: ৩৫ হাজার ঘনফুট পাথর উদ্ধার
চোর সন্দেহে ২ জনকে পিটিয়ে হত্যা; চার আসামির তিন দিনের রিমান্ড
খুলনা তেরখাদায় শিক্ষার্থীকে যৌন হয়রানি অভিযোগে, শিক্ষকের শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন