নিজস্ব প্রতিবেদক:
কক্সবাজারে ১২ ঘণ্টার ব্যবধানে দুই তরুণীসহ তিন পর্যটকের মৃত্যু হয়েছে। বুধবার দুপুর ১টা থেকে দিবাগত রাত ১টা পর্যন্ত কক্সবাজার সদর হাসপাতালে তাদের মৃত্যু হয়। তবে পৃথক দুই ঘটনায় গত বৃহস্পতিবার আলাদা হত্যা মামলা হলেও আরেকটি ঘটনায় এখনো মামলা করেনি কেউ। শুক্রবার (২০ মে) দুপুরে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, কক্সবাজারে ঘুরতে আসা তিন পর্যটকের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে দুই তরুণীর মৃত্যুর ঘটনায় তাদের পরিবার বাদী হয়ে পৃথক মামলা করেছে। এ দুই মামলায় তিনজন কারাগারে আছেন। এ ছাড়া আরেকটি মৃত্যুর ঘটনায় মামলা না হলেও অভিযুক্ত নারীকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে হত্যার কোনো তথ্য পেলে পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করবে। তিনজনের লাশ গত বৃহস্পতিবার রাতে তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। নিহতদের মধ্যে কক্সবাজারের হোটেল সী গালে আসা মনিরুল ইসলাম নামের এক পর্যটকের মৃত্যু হয়। বুধবার দিবাগত রাত ১টার দিকে সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। পুলিশ জানায়, স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে দুজন বুধবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে সী গাল হোটেলের ৭২৪ নম্বর কক্ষে অবস্থান নেন। সেখানে রাত সাড়ে ১২টার দিকে অসুস্থতা বোধ করলে মনিরুলকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। রাত ১টার দিকে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে। এ ঘটনায় তার সঙ্গে থাকা লিজা রহমান ঊর্মিকে (৩৬) আটকের পর কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদের ঊর্মি মনিরুলের স্ত্রী নন বলে জানান। এদিকে মনিরুলের স্ত্রী তার লাশ নিয়ে যান। তবে এ ঘটনায় তিনি কোনো মামলা করেননি। এদিকে বুধবার বিকেল ৫টার দিকে কক্সবাজারের ইনানীর তারকা হোটেল রয়েল টিউলিপ সি পার্লে আসা এক তরুণীর রহস্যজনক মৃত্যু হয়। ওইদিন (১৮ মে) বিকেল ৫টার কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নেওয়া হলে তাকে মৃত ঘোষণা করেন কর্তব্যরত চিকিৎসক। নাম প্রকাশ না করার শর্তে রয়েল টিউলিপের এক কর্মকর্তা জানান, বুধবার দুপুরে মারফুয়া খানম (২৩) ও নাছির উদ্দিন (২৬) নামে দুজন স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে রয়েল টিউলিপে ওঠেন। তাদের ৫১০১ নম্বর রুম বরাদ্দ দেওয়া হয়। এরপর তারা ব্যাগসহ অন্যান্য জিনিসপত্র হোটেল কক্ষে রেখে সমুদ্র সৈকতে নামেন। ফিরে এসে দুপুরের খাবার খেয়ে নিজেদের কক্ষে অবস্থান নেন দুজন। এর কিছুক্ষণ পর তরুণীর শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যার কথা জানালে তাকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে নেওয়ার পর বিকেল ৫টার দিকে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পুলিশ জানায়, এ ঘটনায় গত বৃহস্পতিবার মারফুয়া খানমের ভাই বাদী হয়ে উখিয়া থানায় নাছির উদ্দিনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন। রাতে লাশ নিয়ে যান তার স্বজনরা। হত্যা মামলা নাছিরকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠায় পুলিশ। অন্যদিকে কক্সবাজারের বিচ হলি ডে’তে ভ্রমণে আসা লাবণী আকতার (১৯) নামে আরেক তরুণী চারদিন চিকিৎসাধীন থাকার পর মারা গেছেন। পুলিশ ও চিকিৎসকের ভাষ্য, অতিরিক্ত মদপানে অসুস্থ হওয়ায় তাকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। বুধবার দুপুর ১টার দিকে সদর হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। লাবণী আকতার বরগুনার বাসিন্দা মনির হোসেনের মেয়ে। তার পরিবার ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে থাকে। এ বিষয়ে কক্সবাজার সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. আশিকুর রহমান বলেন, চারদিন আগে পেটব্যথা নিয়ে এক তরুণীকে হাসপাতালে আনা হয়। সঙ্গীদের স্বীকারোক্তি মতে অ্যালকোহল সেবনে এমন হয়েছে জানতে পেরে চিকিৎসা দেওয়া হয়। তারা সেদিনই ফিরে যান। পরদিন আবারও আসেন আগের চেয়ে খারাপ পরিস্থিতি নিয়ে। তখন পরীক্ষা করে দেখা যায় তার লিভার, ফুসফুস খুবই গভীরভাবে আক্রান্ত। তাকে পর্যাপ্ত চিকিৎসা দেওয়ার পরও অবস্থার উন্নতি না দেখে আইসিইউতে রাখা হয়। সেখানে বুধবার দুপুরের পর মারা যান ওই তরুণী। আরএমও আরও বলেন, আমার মেডিকেল টিমের মতে এক ধরনের মাদক নয়, কয়েক ধরনের মাদক একত্র করে (ককটেল হিসেবে উল্লেখিত) সেবন করেছেন ওই তরুণী। অনভ্যস্ত হওয়ায় তার ক্ষতি হয়েছে বেশি। পুলিশ জানায়, তরুণীর সঙ্গে আসা চারজনের মধ্যে দুজন স্বীকার করেন তারা অতিরিক্ত মদপান করেছিলেন। তরুণী বাবা কক্সবাজার সদর থানায় চারজনকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন। এ মামলায় আটক ঢাকার যাত্রাবাড়ী এলাকার মো. জাহাঙ্গীরের ছেলে কামরুল আলম (২০) ও আবদুর রহমানের ছেলে আরিফ রহমান নিলুকে (২১) গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ। অন্য দুই আসামি পলাতক রয়েছেন।
আরও পড়ুন
রেকর্ড গড়া ঝাঁপ থেকে সর্বোচ্চসংখ্যক বাংলাদেশির অ্যান্টার্কটিকা সফর, আছে আরও যত ঘটনা
আশুলিয়ায় মরদেহ পোড়ানোর মামলায় কনস্টেবল মুকুল কারাগারে
ডেঙ্গুতে এক দিনে মারা গেছেন আরও ৪ জন