December 27, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Sunday, November 20th, 2022, 8:09 pm

কত দাম হতে পারে সেই স্যুটকেসটির?

অনলাইন ডেস্ক :

গ্যারি ক্যাসপারভ বনাম আনাতোলি কারপভ কিংবা বরিস স্পাসকি বনাম ববি ফিশার দাবা ইতিহাসের রুদ্ধশ্বাস দ্বৈরথের সেরা দুটি ছবিকে শনিবার রাতে এক ঝটকায় মনে করিয়ে দিয়েছে সদ্য তোলা একটি ছবি। ধন্যবাদ ফরাসি ফ্যাশন হাউস লুই ভিতোঁকে। ঐতিহ্য, আভিজাত্য আর উচ্চাভিলাষের ছাপ লুই ভিতোঁর প্রতিটি স্টিচ কিংবা কাটে। সেটা ট্র্যাভেল ব্যাগ কিংবা জুয়েলারি―সব কিছুতে। প্রত্যাশিতভাবে এর মূল্যও চড়া। কত দাম হতে পারে সেই স্যুটকেসটির? মানে, ছবির যে বাক্স আকৃতির দাবা বোর্ডের ওপর কনুই ঠেকিয়ে চিন্তামগ্ন লিওনেল মেসি ও ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো, সেটির। ওটা লুই ভিতোঁর একটি স্যুটকেস। আন্দাজ করতে পারি, কাতার বিশ্বকাপকে সামনে রেখে এই ডিজাইনের স্যুটকেসটির বিপণন করছে লুই ভিতোঁ। দামটাও আন্দাজ করতে পারি অতীত একটি অভিজ্ঞতা থেকে। বছর তিনেক আগে দেশের বাইরে টিম হোটেলের লবিতে হন্তদন্ত হয়ে বেরোতে যাওয়া বাংলাদেশের এক ক্রিকেট তারকার সঙ্গে দেখা।
কী ব্যাপার, ছুটছেন যে?
―শপিংয়ে যাই।
একা কেন? উনি (তারকার সহধর্মিণী) কোথায়?
―(হাসতে হাসতে) ইচ্ছে করেই একা যাচ্ছি। আমি গেলে তিন হাজারের পার্স কিনব। ও গেলে অন্তত ১০ হাজার খরচ করাবে!
সেই থেকে বিদেশে লুই ভিতোঁর কোনো শোরুম চোখে পড়লেই গল্পটা মনে করে হাসি। তবে শখের বশেও কখনো এর কোনোটিতে ঢুকিনি। কারণ এই তিন কিংবা ১০ হাজার কিন্তু টাকায় না, পাউন্ডে। জি, তিন-দশ হাজার ব্রিটিশ পাউন্ড স্টার্লিং সে সময় একটি লেডিস পার্সের দাম ছিল। অরিজিনাল অবশ্যই, বাংলাদেশের আনাচকানাচে দেদার চোখে পড়া লেবেলসর্বস্ব লুই ভিতোঁ নয়। হাতব্যাগের দাম যদি তিন হাজারই ধরি, তাহলেও মেসি-রোনালদোর স্পর্শ পাওয়া স্যুটকেসটির দাম অন্তত হাজার দশেক পাউন্ড হওয়ার কথা। আমি অবশ্য ছবিটা দেখার পর থেকে স্যুটকেসের দাম নিয়ে ভাবিনি। অযথা ভেবে লাভ কী! তবে ভাবছিলাম মেসি-রোনালদোকে দাবা বোর্ডের দুপাশে বসাতে লুই ভিতোঁর কত খরচ হয়েছে? অঙ্কটা বাংলাদেশের স্পোর্টস মার্কেটিংয়ের দুঁদে কর্মকর্তাদের জন্যও অনুমান করা কঠিন হতে পারে। অবশ্য প্রায় সাড়ে ৩২ বিলিয়ন ডলার ব্র্যান্ড ভেল্যুর একটি প্রতিষ্ঠানের জন্য অঙ্ক ‘মেলানো’ই কঠিন নয়। মেসি, রোনালদোর মতো তারকাদের একটা মূল্য আছে। সেই মূল্য চুকানোর সামর্থ্য লুই ভিতোঁর আছে। ১৮৫২ সালে নেপোলিয়নের তৃতীয় স্ত্রীর জন্য স্যুটকেস বানানো এবং বাঁধাছাদার কাজ করতেন লুই ভিতোঁ। তিনি নেই, তবে তাঁর নামের ব্র্যান্ডের দোর্দ- প্রতাপ নিয়তই বাড়ছে। দামটামের কথা বাদ দিন। টাকা দিলে নাকি বাঘের দুধও মেলে। তবু বিশ্বাস হচ্ছিল না, বিশ্বকাপ ফুটবল শুরুর ২৪ ঘণ্টা আগে এমন একটা ঝাঁকুনি দেওয়ার কথা ভাবতে পারে কোনো বিপণন সংস্থা! লুই ভিতোঁর ব্র্যান্ডিং টিমকে কুর্নিশ। মেসি-রোনালদোর ফ্রেম তো কতভাবেই নেওয়া যেত। ফুটবল মাঠে কিংবা বক্সিং রিঙে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিলে হতো। তা না করে শারীরিক শক্তির খেলা ফুটবলকে নিয়ে আসা হলো দাবার শান্ত বোর্ডে। দুজনই চিন্তামগ্ন, তবে অভিব্যক্তিতে ভিন্ন। মেসি চিরচেনা ঋষি আর রোনালদো নাছোড় যোদ্ধা। তীব্র প্রতিদ্বন্ধিতা আছে, কিন্তু যুদ্ধংদেহী মনোভাব নেই। এই আইডিয়া যাঁর, ব্র্যান্ডিং জগতে তিনি বা তাঁরাও নির্ঘাত মেসি-রোনালদোর মতোই দামি! আর ফটোগ্রাফার অ্যানি লিবোভিৎজ তো জগদ্বিখ্যাত। ¯্রফে পোর্ট্রেট তুলে বিখ্যাত হওয়া চাট্টিখানি কথা নয়। লুই ভিতোঁর বিপণনের সর্বশেষ ফ্রেমটি অ্যানির ক্যারিশমার নমুনা। আরো আলোচিত ফটোগ্রাফি আছে তাঁর। সবচেয়ে ঐতিহাসিক জন লেননের জীবনের শেষ ছবিটি। আততায়ীর গুলিতে নিহত হওয়ার পাঁচ ঘণ্টা আগে লেননকে শেষবার ফ্রেমবন্দি করেছিলেন অ্যানি লিবোভিৎজ। মেসি-রোনালদোর যুগল ছবি আরো তোলা হতে পারে অদূর ভবিষ্যতে। তবে বিষয়, সময়, আলোর খেলায় এই ফ্রেম অনন্য করে রেখেছেন অ্যানি লিবোভিৎজ। সৌজন্যে লুই ভিতোঁ!