June 1, 2025

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Monday, May 19th, 2025, 5:24 pm

কফি পান করার আগে জেনে নিন ক্যাফেইনের প্রভাব

লাইফস্টাইল ডেস্ক

সকালে ঘুম ভাঙার পর কফি ছাড়া অনেকে দিন শুরুই করতে পারেন না। আবার কারও কারও কফি খেলে অ্যাংজাইটি বেড়ে যায়। অর্থাৎ একেকজন মানুষের শরীরে একেকরকম প্রভাব ফেলে এই পানীয়। তবে অনেক সময় স্বাদ নয়, কফির গন্ধই আপনাকে অনেকখানি চাঙা করে দেয়। পেটে কফি পড়লে মনের বিষাদভাব কাটতে বেশি সময় লাগে না।

কিছু শারীরিক সমস্যায় চিকিৎসক কফি ছুঁতেও মানা করেন, কাউকে আবার চিনি ছাড়া কফি খেতে পরামর্শ দেন। আপনি তাহলে কোনটা মানবেন?

এই বিভ্রান্তি থেকে বাঁচতে চলুন জেনে নেওয়া যাক কফি’র ভালো-মন্দ।

কফি কমাবে স্কিন ক্যানসারের ঝুঁকি

ম্যালিগন্যান্ট মেলানোমা এমন এক ধরনের স্কিন ক্যানসার যার ফলে বহু মানুষের মৃত্যু ঘটে। এই ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে পারে কফি পানের অভ্যাস। গবেষণায় দেখা গেছে, যারা কফি পান করেন না তাদের তুলনায় যারা দৈনিক চার কাপ বা তার বেশি কফি পান করেন তাদের ক্ষেত্রে ম্যালিগন্যান্ট মেলানোমার ঝুঁকি কমে যায় ২০ শতাংশ পর্যন্ত।

গবেষণা থেকে দেখা যায়, চার কাপ বা তার বেশি কফি পান তেমন ক্ষতিকর নয়। তবে আপনার যদি এত বেশি কফি পানের অভ্যাস না থাকে তবে হুট করে চার কাপ কফি পান শুরু করবেন না, তাতে হিতে বিপরীতও হতে পারে। তবে তার মানে এই নয় যে আপনি বেশি করে কফি পান করলেই স্কিন ক্যানসার থেকে রেহাই পাবেন।

স্কিন ক্যানসার হওয়ার মূল কারণ কোনো রকম নিরাপত্তা ছাড়া সূর্যের আলোয় বেশি সময় কাটানো। তাই অতিরিক্ত সূর্যের আলো এবং অতিবেগুনি রশ্মি থেকে দূরে থাকাই উত্তম।

দিনে কত কাপ কফি খাওয়া যাবে?

ফিমেলফার্স্ট ডটকো ডটইউকে’র এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, স্বাস্থ্য বিষয়ক নির্দেশিকা অনুসারে শরীরে খুব বেশি হলে দৈনিক ৪০০ মিলিগ্রাম ক্যাফেইন নেওয়া যেতে পারে। তবে কফি ছাড়াও চা, চকলেট ও রঙিন কোমল পানীয়তেও আছে ক্যাফেইন। সারা দিনে কফি ছাড়া এসবও খাওয়া পড়ে। তাই সব মিলিয়ে দেখা যায়, শরীরে অতিরিক্ত ক্যাফেইন চলে যাচ্ছে।

তাহলে দিনে কত কাপ কফি নিরাপদ? এমন প্রশ্ন জবাবে গবেষকরা বলছেন, এক কাপ পরিমাণ চায়ে প্রায় ৩০ থেকে ১০০ গ্রাম ক্যাফেইন রয়েছে, যেখানে এক কাপ ইনস্ট্যান্ট কফিতে আছে ৬০ থেকে ১০০ গ্রাম এবং এসপ্রেসো কফিতে ৪০ থেকে ৯০ গ্রাম। তাই দিনে চার কাপের বেশি কফি পান না করলে সমস্যা নেই। আবার বিজ্ঞানীরা বলছেন দুই থেকে তিন কাপের কথা।

তাছাড়া কফিতে আছে ফ্ল্যাভনয়েড, যা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে ও ক্যানসার, ডায়াবেটিস ইত্যাদি রোগের ঝুঁকি কমায়। ক্যাফেইন ব্যথা কমাতে সহায়ক, ঠান্ডা লাগলে শ্বাসনালি প্রসারিত করতে সাহায্য করে এবং ঘুম তাড়ায়, মেজাজ ভালো রাখে। তাই কফিকে যতটা খারাপ ভাবা হয়, এটি তত খারাপ নয়।

কফির আছে যেসব উপকার ও অপকার

যুক্তরাজ্যের দ্য গ্লেন হাসপাতাল ব্রিসটলের কনসালটেন্ট সার্জন এবং ওজন কামানোর বিশেষজ্ঞ স্যালি নরটন, ক্যাফেইন গ্রহণের সুবিধা অসুবিধার সম্পর্কে বলেছেন-

১. ক্যাফেইন স্নায়ুতন্ত্র উজ্জীবক এবং ডাইউরেটিক বা মূত্র উৎপাদন বাড়ায় সে কারণে বেশি কফি পান করলে বারবার বাথরুমে যেতে হয় এবং এতে বয়স্ক বা অসুস্থ মানুষের পানিশূন্যতা দেখা দিতে পারে। আবার কফি পান হৃদস্পন্দন বাড়ায়। তাই হাত কাঁপতে পারে কারও কারও, ঘুমেও ব্যাঘাত হতে পারে।

২. কিছু গবেষণায় দেখা গেছে ক্যাফেইন হৃদপিণ্ডের রক্তসরবরাহকরী ধমনীতে রক্ত চলাচল ধীর করে দেয়। বুকধড়ফড়ানি, অনিয়মিত হৃদস্পন্দন বা উচ্চ রক্তচাপের জন্যেও শরীরের অতিরিক্ত ক্যাফেইন দায়ী।

৩. গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, যারা দিনে তিন কাপের বেশি কফি পান করেন তাদের শান্তির ঘুম খুব কমই হয়। আরেক গবেষণায় দেখা গেছে, যারা কফি খান না তাদের থেকে কফি পানকারীদের ৭৯ মিনিট কম ঘুম হয়। তাই ঘুমের সমস্যা থাকলে কফিকে না বলুন।

৪. ক্যাফেইন শরীরের অ্যাড্রেনালিন নামক একধরনের হরমোনের মাত্রা বাড়ায়। যে কারণে শরীরের টানটান উত্তেজনা বা ঘাবড়িয়ে যাওয়ার অনুভুতির মাত্রা বাড়িয়ে দেয়।

৫. দৈনিক পাঁচ কাপের বেশি কফি খেলে গর্ভধারণের ক্ষমতা কমে যেতে পারে। যদি মা হতে চান, তবে অবশ্যই কফি খাওয়ার পরিমাণ কমাতে হবে। দৈনিক ২০০ মিলিগ্রাম ক্যাফেইন শরীরে গেলে গর্ভের শিশুর ক্ষতি হওয়ার পাশাপাশি জন্মক্রটি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

৬. আবার অন্যদিকে যেকোনো খেলার আগে কফি পান শরীরে আনে আলাদা শক্তি। কফি শরীরে উদ্যম ও উৎসাহ তৈরি করে।

৭. গবেষণায় দেখা গেছে মানসিক চাপের সময়, ২০০ মিলিগ্রাম ক্যাফেইন শরীরে গেলে মনযোগ বৃদ্ধি পায়। অন্যদিকে প্রমাণ মিলেছে আলঝেইমার ও ডিমেনশিয়া (স্মৃতিভ্রংশ) রোগের ক্ষেত্রে বিশেষ উপকারী পদার্থ ক্যাফেইন।

৮. ক্যাফেইন যুক্ত বা বিহীন, যেকোনো ধরনের কফি টাইপ টু ডায়াবেটিস রোগের ও কিছু ক্যান্সারের ঝুঁকিও কমায় ঝুঁকি কমায়।

৯. গবেষণায় দেখা গেছে, কোনো কোনো সময় লিভার বা যকৃতের মেদ কমাতে ক্যাফেইন কার্যকর ভূমিকা পালন করে।

কফি পানে সতর্কতা

প্রত্যেক মানুষের দৈনন্দিন কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রিত হয় বডি ক্লকের মাধ্যমে, যার একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রভাবক হচ্ছে সূর্যের আলো। এই বডি ক্লক কর্টিসল নামে একটি হরমোন নিঃসরণ করে আমাদের সতর্ক ও জাগ্রত করে। সাধারণ অবস্থায় সকাল ৮টা থেকে ৯টার মধ্যে কর্টিসল হরমোন সবচেয়ে বেশি নিঃসরণ করে। ফলে এ সময়ে স্বাভাবিকভাবেই দেহে যথেষ্ট উন্নতমানের ‘প্রাকৃতিক ক্যাফেইন’ থাকে। ফলে এ সময় অতিরিক্ত ক্যাফেইনের দরকার হয় না। উপরন্তু যখন শরীরে যথেষ্ট ক্যাফেইন থাকে তখন আরো ক্যাফেইন গ্রহণ এর কার্যকারিতা কমিয়ে দেয়। তাই যখন ক্যাফেইনের দরকার নেই, তখন ক্যাফেইন গ্রহণ করলে আপনার দেহ দ্রুত তা সহ্য করে নেয়। ফলে আপনার দেহের উদ্দীপনা ধ্বংস হয়ে যায়।

তাই শরীর চাঙ্গা করতে ও ক্ষতিকর প্রভাবমুক্ত রাখতে কফি পানের জন্য কিছুটা ভিন্ন সময়সূচির কথা জানিয়েছেন গবেষকরা। সাধারণ মানুষের কর্টিসল মাত্রা সর্বোচ্চ পরিমাণে থাকে সকাল ৮টা থেকে ৯টা, দুপুর ১২টা থেকে ১টা ও বিকাল ৫:৩০ থেকে ৬:৩০-এর মধ্যে। এ কারণে কফি বিরতি হওয়া উচিত সকাল ৯:৩০ থেকে ১১:৩০ ও ১:৩০ থেকে ৫:০০টার মধ্যে।

কফি পানে সতর্ক থাকা উচিত কারণ ক্যাফেইনে আসক্ত হয়ে যাওযা বেশ সহজ। তাই অতিরিক্ত কফি পান, আপনার সাময়িক মস্তিষ্ক বিকৃতি ঘটাতে পারে। ক্যাফেইন আসক্তি থেকে সৃষ্টি হয় অস্থিরতা, নার্ভাসনেস, উত্তেজনা, রাগ, পরিপাকজনিত অবসাদ, পেশিতে টান পড়া, অকারণে কথা বলা, ঘুম না হওয়া, দ্রুত ও অনিয়মিত হার্টবিট ইত্যাদি।

তাই কফি পান করার পর যদি এই উপসর্গগুলো টের পান, তবে এটা কফি ইনটক্সিকেশন বা বিষক্রিয়া হতে পারে। সাধারণত ক্যাফেইন মানুষকে উদ্যমী হতে সাহায্য করে, কর্মক্ষমতা বাড়িয়ে দেয় ও ঘুমভাব কাটাতে সাহায্য করে। তাই প্রয়োজন অনুযায়ী কফি পান করতে হবে।

সূত্র: দি হেলথ সায়েন্স, এএনআই, হেপাটোলজি